309188

শাশুড়ি-পুত্রবধূর সম্পর্ক নিয়ে ‘গবেষণা’

‘বদমেজাজি’ স্ত্রী এবং ‘স্ত্রীভক্ত’ স্বামী হয়তো রয়েছেন। কিন্তু চরিত্রায়নের দিক থেকে বলতে গেলে এদের কেউই ‘প্রভাবশালী’ ও ‘চতুর’ শাশুড়ির সাথে টেক্কা দিতে পারে না। ব্রিটিশ লেখক জিকে চেস্টারটন তার কমিকে ‘সবচেয়ে খারাপ শাশুড়িকে দানবের মতো করে চিত্রায়িত এবং সবচেয়ে ভাল শাশুড়িকে সমস্যা’ বলে উল্লেখ করেছেন।

বিবিসি বাংলার খবরে বলা হয়েছে ভারতীয় শাশুড়িদের সাধারণত ‘নিয়ন্ত্রণবাদী’ হিসেবে ধরা হয় এবং তাদের নিয়ে অদ্ভুত ধরণের রসিকতাও করা হয়।

যখন থেকে বেশিরভাগ নারী বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে বাস করতে যান তখন থেকেই শাশুড়ির সাথে তারা যে সম্পর্ক তৈরি করেন তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর একারণেই অনেক সময় তাদের যাপিত জীবন শাশুড়িদের নেতিবাচক খ্যাতি তৈরি করতে অবদান রাখে।

তাই, বলিউডে মা মাত্রই যে আজীবন যাতনা সহ্যকারী চরিত্র হিসেবে দেখানো হয়, সেখানে ভারতীয় শাশুড়িদেরকে তার বিপরীত হিসেবে গণ্য করা হয়।তারা হয় আজ্ঞাকারী, পুত্রবধূর কাছ থেকে ক্ষমতা হরণকারী এবং ছেলে ও যৌথ পরিবারের উপর দৃঢ় নিয়ন্ত্রণ থাকে তাদের।

তিনি হয়ে ওঠেন ভারতের সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে চলা টেলিভিশন সোপের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র যার নাম ছিল ‘কারণ শাশুড়িও কখনো বউ ছিল।’বর্তমানে ভারতের শাশুড়িরা গুরুত্বপূর্ণ প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণার বিষয় হয়ে উঠেছেন, সম্ভবত এ ধরণের গবেষণা এটিই প্রথম।

২০১৮ সালে, বোস্টন এবং দিল্লির গবেষকরা ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী ৬৭১ জন বিবাহিত নারীর ওপর গবেষণাটি চালান। এরা উত্তর প্রদেশের জোনপুর জেলার ২৮টি গ্রামের বাসিন্দা ছিল। উত্তরপ্রদেশ ব্যস্ত ও কঠোর রক্ষণশীল একটি রাজ্য যার জনসংখ্যা ব্রাজিলের সমান।এই নারীদের প্রায় ৭০ ভাগ নারী তাদের শাশুড়িদের সাথে বাস করতেন।

গবেষকরা ওই নারীদের তাদের সামাজিক নেটওয়ার্ক সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন- যেমন বাড়ির বাইরে আত্মীয়, বন্ধু। তাদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, তাদের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে শাশুড়িরা কী পরিমাণ প্রভাব বিস্তার করে? এটি তাদের স্বাধীনতা, স্বাস্থ্য সেবার সুযোগ এবং অন্যান্য সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে কী ধরণের প্রভাব ফেলে?এর উত্তরে গবেষকরা যা আবিষ্কার করেন তাতে কাহিনীর সাথে বাস্তবতার মিল পাওয়া যায়।

তারা দেখতে পান যে, যেসব নারীরা শাশুড়ির সাথে বসবাস করেন তাদের চলাফেরার স্বাধীনতা এবং বাড়ির বাইরে সামাজিক যোগাযোগ গড়ে তোলার সামর্থ্য সীমিত। চলাফেরার সুযোগ আরো বেশি থাকলে তাদের আরো বেশি তথ্য পাওয়া, কাছের বন্ধু তৈরি করা, আত্মবিশ্বাস অর্জন এবং আকাঙ্ক্ষা তৈরি সহজ হতো। এছাড়া, স্বাস্থ্য, প্রজনন এবং জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে তারা যে সিদ্ধান্ত নেয় সে সম্পর্কে এসব নেটওয়ার্ক থেকে তারা জানতে পারতো।

কিন্তু নমুনায় থাকা ৩৬% নারীর পুরো জেলায় কোন ঘনিষ্ঠ আত্মীয় বা বন্ধু ছিল না; এবং ২২% নারীর কোথাও কোন ঘনিষ্ঠ বন্ধু বা আত্মীয় ছিল না। মাত্র ১৪% নারীকে একা একা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে দেয়া হতো, এবং ১২% নারীকে গ্রামে তাদের বন্ধু বা আত্মীয়দের বাড়িতে একা যেতে দেয়া হতো।

এছাড়া জোনপুরের একজন সাধারণ নারী তার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে তার স্বামী এবং শাশুড়ি ছাড়া আর মাত্র দুজনেরও কম মানুষের সাথে আলাপ করতে পারতো।

প্রায় ৪৮% নারী স্বীকার করেছিলেন যে, তাদের শাশুড়িরা জন্মনিয়ন্ত্রণ গ্রহণে অসম্মতি জানিয়েছিল। কোন নারীর স্বামী যদি অভিবাসী শ্রমিক হয়, শাশুড়ি তার চলাফেরা, মেলামেশা, স্বাধীনতা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের উপর আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে।

ad

পাঠকের মতামত