360571

প্রবাসী কর্মীদের টিকা পেতে যা করতে হবে

নিউজ ডেস্ক।। করোনার টিকা নিতে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে সারিবদ্ধভাবে অপেক্ষা করছেন প্রবাসী কর্মীরা। করোনার টিকা নিতে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে সারিবদ্ধভাবে অপেক্ষা করছেন প্রবাসী কর্মীরা।

বিদেশগামী কর্মীদের টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে টিকা পেতে কর্মীদের দুই ধাপে নিবন্ধন করতে হবে। বেশিরভাগ কর্মীর জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে জটিলতা থাকায় ‘সুরক্ষা’ প্লাটফর্মে পাসপোর্টের মাধ্যমে নিবন্ধন প্রক্রিয়া চালু হয়েছে। বাংলাট্রিবিউন

প্রথমেই কর্মীদের জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। এ নিবন্ধন করতে হবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে তৈরি ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপে।

বিএমইটি নিবন্ধন: এ বছরের ১ জানুয়ারির পর যারা জনশক্তি, প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান ব্যুরোতে নিবন্ধন করেছেন, তাদের নতুন করে নিবন্ধনের প্রয়োজন হবে না। এই তারিখের আগে যাদের নিবন্ধন ছিল তাদের পুনরায় ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপে নিবন্ধন করতে হবে।

ই-পাসপোর্ট যাদের আছে তাদের নিবন্ধনের জন্য জেলা জনশক্তি অফিসে যেতে হবে। পদ্ধতিগত কারণে ই-পাসপোর্টের ভেরিফিকেশন ম্যানুয়ালি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

ই-পাসপোর্ট ছাড়া অন্যান্য পাসপোর্ট যাদের আছে তারা দেশের ৪২টি জনশক্তি কার্যালয়, ৯টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও একটি মেরিন টেকনোলজি ইনস্টিটিউটে, অথবা ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপে বিএমইটি’র রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত নিবন্ধন কাজ চলবে।

বিদেশগামীদের নিবন্ধনের সুবিধার্থে ঢাকা ও আশেপাশের এলাকায় ৩টি সাব-সেন্টার খোলা হয়েছে। সাভার, ধামরাই ও মিরপুর এলাকার জন্য বাংলাদেশ-কোরিয়া টিটিসি-মিরপুর; দোহার, নবাবগঞ্জ ও কেরাণীগঞ্জ এলাকার জন্য কেরাণীগঞ্জ টিটিসি এবং গাজীপুর এলাকার জন্য গাজীপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্ধারণ করা হয়েছে।

টিকার জন্য বিএমইটিতে আগে কেন নিবন্ধন করতে হবে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক শহীদুল আলম বলেন, ‘দেশে পাসপোর্টধারী কোটি মানুষ আছেন। তাদের মধ্যে কারা বিদেশে কাজ করতে যাচ্ছেন সেটি বিএমইটির নিবন্ধন ছাড়া নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। সে কারণেই এ ব্যবস্থা।’

নিবন্ধনের পর অপেক্ষা: বিএমইটি নিবন্ধনের কাজ সম্পন্ন হতে কিছু সময়ের প্রয়োজন হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হলে নিবন্ধন সম্পন্ন হবে। পাসপোর্ট ভেরফিকেশনে সর্বোচ্চ ৭২ ঘণ্টার কথা বলা হলেও কিছু ক্ষেত্রে বেশি সময় লাগছে। এর জন্য অপেক্ষার বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন বিএমইটি’র এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

তিনি জানান, ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হওয়ার গতি নির্ভর করছে সংশ্লিষ্ট তথ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের ওপর। সেটার সীমাবদ্ধতা কারণে দেরি হতে পারে।

এর আগে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ূব চৌধূরী জানান, ‘আমাদের সঙ্গে ভেরিফিকেশনের কাজ করে আমাদেরই আরেক সংস্থা এনটিএমসি। বাংলাদেশের ৬৯টি অফিস, ৭২টি এসপিডিবি, ৮০টি বিদেশি মিশন, ছয়টি ব্যাংক, গোয়েন্দা সংস্থা, ই-পাসপোর্ট সার্ভার এবং এয়ারপোর্টগুলোকেও আমাদের তথ্য দিতে হয়। আর প্রতিদিন গড়ে নয় হাজার পাসপোর্ট দিতে হয় বিদেশে। সম্প্রতি ই-পাসপোর্ট চালু হওয়াতে ডেটার চাহিদা কমেছে। আমরা চেষ্টা করি সিস্টেম ওভারলোড না করে ডেটা দিতে।’

ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের পরিচালক (এনটিএমসি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিয়াউল আহসান বলেন, ‘যার যেখানে যা ডেটা প্রয়োজন আমরা বিভিন্ন তথ্যভান্ডার থেকে এনে সেখানে সহযোগিতা করি। তথ্যভান্ডারের সক্ষমতার ওপর নির্ভর করে কী পরিমাণ ডেটা যাবে। আমার একটা অনুরোধ থাকবে- যেহেতু সিস্টেমে ডেটা সরবরাহের একটা সীমাবদ্ধতা আছে, তাই কর্মীরা যেন নির্ভুল তথ্য সরবরাহ করেন। এতে রেজিস্ট্রেশন দ্রুত হবে।’

পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনে যাতে সময় কম লাগে সেটা নিয়েও কাজ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ।

সুরক্ষা প্লাটফর্মে নিবন্ধন: বিএমইটি’র নিবন্ধন সম্পন্ন হলে পাসপোর্টের তথ্যের ভিত্তিতে সুরক্ষা (www.surokkha.gov.bd) প্ল্যাটফর্মে টিকাপ্রাপ্তির জন্য নিবন্ধন করতে হবে। আইসিটি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, সুরক্ষা প্লাটফর্মে এনআইডি দিয়ে নিবন্ধনের পাশপাশি বিশেষভাবে আরেকটি অপশন চালু হয়েছে। সেখানে পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করা যাবে।

নিবন্ধন (পাসপোর্ট) অপশনে ক্লিক করলে একটি পাতা চালু হবে। সেখানে শ্রেণি (ধরন) নির্বাচন করতে হবে। তিনটি ধরন থেকে বিদেশগামী কর্মী নির্বাচন করলে আরেকটি উপশ্রেণি দেখানো হবে। তাতে দুই ক্যাটাগরি আছে- সৌদি আরব ও কুয়েতগামী কর্মী এবং অন্যান্য দেশে বিদেশগামী কর্মী।

অপশন নির্বাচন করার পর আরেকটি পাতা আসবে। সেখানে পাসপোর্ট নম্বর, জন্ম তারিখ এবং সিকিউরিটি কোড দিতে হবে।

এসময় একটি ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) নম্বর মোবাইলে যাবে। সেই নম্বর প্রবেশ করিয়ে বাকি তথ্য যেমন- কোন কেন্দ্রে টিকা নেবেন, পেশা ইত্যাদি ইনপুট দেওয়ার পর সাবমিট করতে হবে।

নিবন্ধন শেষ করার আগে আরেকটি ওটিপি মোবাইলে যাবে। সেটি ইনপুট দিলেই সম্পন্ন হবে নিবন্ধন।

তারা আরও জানান, নিবন্ধনের পর মোবাইলে টিকা নেওয়ার কেন্দ্রের নাম ও তারিখ একটি এসএমএস’র মাধ্যমে জানানো হবে। কেন্দ্র থেকে এসএমএস না আসলে টিকা পাওয়া যাবে না।

কোন টিকা কার জন্য, কোথায় থাকবে?

প্রবাসী কর্মীরা ফাইজার, সিনোফার্ম ও মডার্নার টিকা নিতে পারবেন। তবে কিছু শর্ত আছে। কুয়েত ও সৌদি আরবগামী কর্মীদের গন্তব্য দেশের বাধ্যবাধকতা থাকায় ফাইজারের টিকা নিতে হবে। অন্যরা সিনোফার্মের টিকা পাবেন।

ফাইজারের টিকা সংরক্ষণ ব্যবস্থা জটিলতার কারণে শুধু ঢাকার সাতটি কেন্দ্রে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক এ বি এম খুরশিদ আলম।

ঢাকার সাতটি কেন্দ্র হচ্ছে- ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মুগদা মেডিক্যাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল।

সিনোফার্মের টিকা সারাদেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সরকারি হাসপাতাল থেকে নেওয়া যাবে। তবে ‘সুরক্ষা’ প্লাটফর্মে যার যার কেন্দ্র নির্বাচন করেই নিবন্ধন করতে হবে। এ ছাড়া মডার্নার টিকা দেওয়া হবে দেশের ১২ সিটি করপোরেশন এলাকায়।

 

ad

পাঠকের মতামত