312511

দিনে ৪১ লাখ টাকা আয় করে ছয় বছরের শিশু!

ছয় বছরের অ্যানাস্তাসিয়া রাডজিনস্কায়া। পেশা শব্দটার সামগ্রিক অর্থ বুঝে ওঠার বয়স না হলেও একজন ইউটিউবার সে। আবার অন্য দশজন সাধারণ ইউটিউবারের মতো নয়। দুনিয়ার রথী-মহারথী তারকা ইউটিউবারদের পেছনে ফেলে গত বছর ফোর্বস ম্যাগাজিনের সেরা উপার্জনকারী ইউটিউবারদের মধ্যে তার নাম আসে তিন নাম্বারে।

ফোর্বসের মতে অ্যানাস্তাসিয়া রাডজিনস্কায়ার বার্ষিক উপার্জন ১৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় একশ তিপ্পান্ন কোটি টাকার সমান। যেখানে পৃথিবীর কোটি কোটি প্রাপ্ত বয়স্ক বেকার মানুষ চাকরির আশায় হান্য হয়ে ছুটছে, সেখানে এই ছোট্ট শিশুটি প্রতি মিনিটে উপার্জন করে ৩৪.২৪ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ২ হাজার ৯১০ টাকার সমান। এই হিসেব অনুযায়ী তার দৈনিক উপার্জন হয় ৪৯ হাজার ৩১৫ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৪১ লাখ ৯১ হাজার ৭৮০ টাকার সমান।

অ্যানাস্তাসিয়া রাডজিনস্কায়ার জন্ম ২৭ জানুয়ারি ২০১৪ দক্ষিণ রাশিয়ার ক্যারাসুন্দরে। জন্মের সময় অ্যানাস্তাসিয়া ‘ডিসকাইনেটিক সেরিব্রাল পালসি’ নামক এক জঠিল রোগে আক্রান্ত ছিলো। সাধারণত ‘সেরিব্রাল পালসি’ আক্রান্ত হলে মস্তিষ্ক সচলভাবে কাজ করে না। আবার ‘ডিসকাইনেটিক সেরিব্রাল পালসি’ আক্রান্ত হলে কথা বলতে না পারার সম্ভাবনা থাকে। তাই অ্যানাস্তাসিয়া রাডজিনস্কায়ার পারিবারিক চিকিৎসক তার জন্মের পর বাবা-মাকে জানিয়ে দেন যে অ্যানাস্তাসিয়া রাডজিনস্কায়ার কথা বলতে না পারার সম্ভাবনা খুব বেশি। এতে ঘাবড়ে গেলেও কিছুই করার ছিলো না তার পরিবারের। তাই আগপিছু না ভেবেই অ্যানাস্তাসিয়ার চিকিৎসা চালিয়ে যান তারা। সে সময় তার চিকিৎসার অগ্রগতি সম্পর্কে সহজ উপায়ে আত্মীয়-স্বজন ও বান্ধুবদের জানানোর প্রয়োজন হয়। তাদের জানানোর উদ্দেশে অ্যানাস্তাসিয়ার ভিডিও তৈরি করে ইউটিউবে আপলোড করেন তার বাবা-মা।

ভিডিওগুলো ছিলো মূলত সাধারণ বাচ্চাদের কর্মকাণ্ডের মতোই। যেমন তার বাবার সঙ্গে খেলা করা, বাসায় দৌড়াদৌড়ি করা কিংবা তার পোষা বিড়ালের সঙ্গে খেলা করা। এই ভিডিওগুলোর প্রতিটিই মানসম্মতভাবে ধারন করা হতো এবং সাউন্ডও যতটা সম্ভব পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করা হতো। এতে অল্পদিনেই তার বড় একটা সংখ্যক ভক্ত তৈরি হয়ে যায়। সবচেয়ে বেশি সাড়া পড়ে যায় ২০১৮ সালের এক ভিডিও নিয়ে। ভিডিওটিতে দেখা যায় অ্যানাস্তাসিয়া তার বাবার সঙ্গে একটি চিড়িয়াখানা পরিদর্শনে যায়। সেখানে দুটা বাচ্চা শার্কের নাচ দেখা যায়, যা কিনা শিশুদের খুবই পছন্দের এবং একটি গরুকে দুধ আর আইসক্রিম খাওয়াতে দেখা যায়। অল্প কিছুদিনেই এই ভিডিওটি ইউটিউবে ৭৬৭ মিলিয়ন (ছিয়াত্তর কোটি সত্তর লাখ) বার দেখা হয়ে যায়। আর এর বদৌলতে ২০১৮ সালের জুন থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত এক বছরে অ্যানাস্তাসিয়ার উপার্জন হয় ১৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

বর্তমানে অ্যানাস্তাসিয়া রাডজিনস্কায়ার ছয়টি চ্যানেল রয়েছে। এই চ্যানেলগুলো হলো লাইক নাস্তিয়া ব্লগ, লাইক নাস্তিয়া স্টেসি, টয়েজ ফানি স্টেসি, স্টেসি স্নো, স্টেসি ফানি পিআরটি। এই ছয়টা চ্যানেল মিলে বর্তমানে মোট সাবস্ক্রাইবার একশ সতেরো মিলিয়ন। আর সবগুলো চ্যানেল মিলে মোট ভিউ হয়েছে আটচল্লিশ বিলিয়নের বেশি। তার সবচেয়ে জনপ্রিয় চ্যানেল ‘লাইক নাস্তিয়া ব্লগ’ এর বর্তমান সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা ৪৭ মিলিয়ন, যা পৃথিবীব্যাপী ব্যাক্তিগত চ্যানেল হিসেবে তৃতীয় এবং সামগ্রিকভাবে এগারো তম। তার চ্যানেলগুলোর কারণে নাস্তিয়া নামেও অনেকে চেনে তাকে। তার ভিডিও কন্টেন্টগুলো হলো খেলাধুলা, পার্কে ঘুরতে যাওয়া, ড্রেসাপ, শিশুদের গল্প এবং ছোটদের ছড়া। মাঝে মাঝে তার ভিডিওগুলোতে তার পোষা বিড়াল, বাবা কিংবা বন্ধুরাও যুক্ত হয়। বর্তমানে দ্রুত উন্নতি লাভ করা ইউটিউবারদের মধ্যে সবার আগে রয়েছে অ্যানাস্তাসিয়া রাডজিনস্কায়ার নাম।

জন্মের কয়েক বছর পর, ২০১৮ সালে তার পরিবার রাশিয়া থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তরিত হয়। বর্তমানে পরিবারের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লুরিডায় বাস করে অ্যানাস্তাসিয়া। বড় হয়ে তিমিদের প্রশিক্ষক কিংবা বিড়ালের ডাক্তার হতে চায় সে। তাছাড়া এবছর অর্থাৎ ২০২০ সালে একটা গেমস চালু করতে চায় অ্যানাস্তাসিয়া,পাশাপাশি একটি বইও লিখতে চায় সে।

তথ্যসূত্র: ফোর্বস ও আরটি ডট কম

ad

পাঠকের মতামত