310999

ইভিএমে সন্তুষ্টি

ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হয়েছে। ফলে অনেক ভোটার প্রথমবারের মতো ইভিএম-এ ভোট দিয়েছেন। ভোট দেয়ার পর তারা অনেক সহজ ও ঝামেলামুক্ত বলে মন্তব্য করেছেন। শনিবার ভোট দিয়ে ফিরে যাওয়ার সময় ভোটাররা এ কথা বলেন।

তারা বলেন, ব্যালট পেপারে ভোট দিতে হয় সিল মেরে। এরপর কাগজ ভাঁজ করে ব্যালটবক্সে ফেলানোর সময় দেখা সিলের কালি অন্য ঘরেও ছাপ পড়ে। এতে ভোট গণনার সময় বিপত্তি দেখা দেয়। এছাড়া সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের মতো নির্বাচনে তিনটি ব্যালট পেপার নিয়ে ভোট দিতে হয়। এতে সময়ও অপচয় হয়। এসব কারণে ব্যালট পেপারের চেয়ে ইভিএমে ভোট প্রদান সহজ।

ভোটাররা আরো বলেন, ইভিএম পদ্ধতি অনেক সহজ। প্রথমে আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে ভোটারের নাম শনাক্ত করা হয়। ল্যাপটপের স্ক্রিনে ছবিসহ ভোটারের নাম এলে কর্মকর্তারা নিশ্চিত বোতামে চাপ দিয়ে চূড়ান্ত করেন। এরপর গোপন কক্ষে ইভিএম মেশিন থাকে। এতে প্রার্থীর নাম ও প্রতীক থাকে। সেখানে পছন্দের প্রার্থীকে বোতামের চাপ দিতে হবে। এরপর স্ক্রিনে প্রার্থীর নাম ও প্রতীক দেখা যায়। ইভিএম মেশিন থেকে আপনি কোথায় ভোট দিলেন সেটাও দেখাচ্ছে। এরপর সবুজ বোতাম (নিশ্চিত ভোট) চাপ দিলেই ভোট সম্পন্ন হয়ে যায়। এইভাবে প্রার্থীর সংখ্যা অনুযায়ী ভোট দিতে হয়।

ভিকারুন্নেসা নুন স্কুল কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন জাকির মিয়া। তিনি বলেন, ‘কীভাবে ভোট দেব তা নিয়ে ভয়ে ছিলাম। কিন্তু পদ্ধতি বেশ সহজ, ভালোই লাগছে।’ উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল কেন্দ্রে ভোট দিয়ে বেরিয়ে চিকিৎসক সালমা পারভীন বলেন, ‘উপায়টা সহজ, তবে যারা লেখাপড়া জানেন না তাদের জন্য এটা কঠিন হবে।’ মিরপুরে ভোট দেয়া আনোয়ারা বলেন, ‘খুবই সহজে ভোট দিয়েছি। সামনেও ইভিএমে ভোট চাই।’

দেশ আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজে ভোট দিয়েছেন সাকেরউজ্জামান। তিনি বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ইভিএম পদ্ধতিটা আধুনিক। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে এটাই তার প্রমাণ। মোটকথা, ভোট বাদ পড়ার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

ভোট দিতে এসেছিলেন দুই গার্মেন্টস কর্মী। ইভিএম সম্পর্কে তাদের ধারণা ছিল না। তারা বাংলাদেশ জার্নালকে জানান, বাসায় গিয়ে আগেই বলেছিলে কেমনে কেমনে চাপ দিয়ে ভোট দিতে হবে। বুথেও দেখিয়ে দিয়েছে। আগামীবার আর দেখাতে হবে না। আসলেই মেশিনে ভোট দেয়া সহজ।

ভোট দিয়ে ফেরার পথে নিজাম উদ্দিন নামের এক ভোটার গণমাধ্যমকর্মী জেনে ইভিএমে ভোট গ্রহণের প্রশংসা করেন। নিজাম বলেন, ‘ই‌ ভিএমে ভোট নেওয়া খুব ভালো পদ্ধতি। ভোট নষ্ট হওয়ার চান্স থাকে না।’

প্রসঙ্গত, এবারের সিটি নির্বাচনে ঢাকা উত্তরে মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন ৬ জন। কাউন্সিলর পদে ২৫১ জন এবং সংরক্ষিত আসনে ৭৭ জন নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। উত্তর সিটিতে ওয়ার্ড রয়েছে ৫৪টি। ঢাকা দক্ষিণে ৭ জন মেয়র পদের জন্য লড়ছেন। কাউন্সিলর পদে ৩৩৫ জন এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নারী প্রার্থী হয়েছেন ৮২ জন। দক্ষিণে ৭৫টি ওয়ার্ড। ঢাকায় ভোটারসংখ্যা ৫৪ লাখ ৬৩ হাজার ৪৬৭ জন। ঢাকা উত্তর সিটির ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১ হাজার ৩১৮। এসব কেন্দ্রে ভোট কক্ষের সংখ্যা ৭ হাজার ৮৪৬টি। দক্ষিণ সিটিতে ১ হাজার ১৫০টি ভোটকেন্দ্র এবং ভোট কক্ষ রয়েছে ৬ হাজার ৫৮৮টি।

এবার ঢাকা উত্তরে ৮২৬ আর দক্ষিণে ৭২১টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এই কেন্দ্রগুলোতে রয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ও নজরদারি।

ইভিএমে ভোট হওয়ায় ভেটের ফলাফল ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার ৪ ঘণ্টার মধ্যে জানা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। অবশ্য কেন্দ্রে কেন্দ্রে ফল ঘোষণার জন্য এক ঘণ্টাই যথেষ্ট বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কর্মকর্তারা।

ভোটকে কেন্দ্র করে রাজধানীজুড়ে রয়েছে কড়া নিরাপত্তা। যানবাহন চলাচলেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। ৩০ জানুয়ারি রাত ১২টা থেকে ২ ফেব্রুয়ারি সকাল ৬টা পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া ৩১ জানুয়ারি (শুক্রবার) মধ্যরাত ১২টা থেকে ১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত যানবাহন চলাচল সীমিত করা হয়েছে। তবে কিছু যানবাহন চলতে পারবে অনুমতি সাপেক্ষে। জরুরি বাহন এর আওতামুক্ত থাকবে।

সদরঘাটে নৌ চলাচলও শুক্রবার রাত ১২টা থেকে ২৪ ঘণ্টা বন্ধ থাকবে। পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, আনসার থাকছে ভোটের নিরাপত্তায়।

সিটি নির্বাচন এবার নানান দিক থেকে ছিল আলোচিত। প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীরা সমানতালে প্রচার চালিয়েছেন। ব্যাপক ধরনের ধরপাকড়, হামলার অভিযোগ অন্যবারের চেয়ে কম ছিল।

বিএনপির দুই মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও ইশরাক হোসেনের গণসংযোগে হামলার ঘটনা ছাড়া বিএনপি থেকেও বড় কোনো অভিযোগ ছিল না। দুই দলের কর্মীদের মধ্যেই উৎসবের আমেজ ছিল।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলও বলেছেন, এবারের নির্বাচনে তাদের বড় পাওয়া সবাইকে নিয়ে রাস্তায় বের হতে পারা।

প্রধান চার প্রতিদ্বন্দ্বী আতিকুল ইসলাম, তাবিথ আউয়াল, শেখ ফজলে নূর তাপস, ইশরাক হোসেন তাদের প্রচারে অকপটে স্বীকার করেছেন, ঢাকার অবস্থা খুব ভালো নয়। তারা ঢাকাকে বাঁচাতে চান।

এছাড়া গত বছরের ডেঙ্গু রোগের ভয়াবহতা নিয়ে চারজনই কথা বলেছেন। ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে তারা মশা নিধনের কার্যক্রমকে নিজেদের ইশতেহারে প্রাধান্য দিয়েছেন।

ad

পাঠকের মতামত