310592

করোনা আতঙ্কে চীনে গৃহবন্দী দুই বাঙালি বিজ্ঞানী

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ঘটনাটি প্রথম নজরে আসে চীনের উহান প্রদেশে। এ পর্যন্ত করোনা ভাাইরাসে প্রায় ৮১ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।

চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এ ভাইরাসের নাম দিয়েছেন ‘2019 novel coronavirus (2019-nCoV)’। সংক্ষিপ্ত নাম করোনা ভাইরাস। এই ভাইরাসটি প্যাথোজেন পরিবারের। যার কারণে এর আগে সার্স ও মার্স ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছিল।

বর্তমানে চীনের এক অজানা ভাইরাস যা করোনা ভাইরাস নামে পরিচিত সাধারণের কাছে। যার নেই কোনও নির্দিষ্ট চিকিৎসা আবার নেই এর নির্মূলের কোনও ভ্যাকসিন। বর্তমানে চীনের এই ভাইরাস ভয়ংকরভাবে চারদিকে ছড়াচ্ছে। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, তাইওয়ান, নেপাল, ফ্রান্স ও সৌদি আরবসহ অন্তত ১১টি দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মিলেছে।

করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে চীনে পড়তে গিয়ে বিপাকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সিউড়ি’র এক গবেষক ছাত্র। করোনা ভাইরাসে সরাসরি আক্রান্ত না হলেও রীতিমতো আতঙ্কে চীনে যাওয়া বিদেশি ছাত্রছাত্রীরা। সিউড়ির বীরভূম জেলা স্কুলের ছাত্র সিউড়ির বাসিন্দা কাজী আরিফ ইসলাম গত ৫ জুন চীনে উহান ইউনিভার্সিটি অফ জিও সায়েন্স কলেজে উচ্চশিক্ষার জন্য পোস্ট ডক্টরেট পড়ার উদ্দেশ্যে গিয়েছিলেন।

ওই ছাত্রের পরিবারের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, এই মুহূর্তে চীনে করোনা ভাইরাসের আতঙ্কের জেরে সেখানকার সরকার কুড়ি দিনের জন্য চীনের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলি ছুটি দিয়ে দেয়। তাই এই মুহূর্তে সেখানকার বিদেশি ছাত্ররাও ছুটি কাটাচ্ছেন।

এরমধ্যে কাজি আরিফ ইসলাম-সহ অন্যান্য দেশের ৬ গবেষক ছাত্র যারা একে অপরের বন্ধু, তারা একসঙ্গে ছুটি কাটাতে চীনের সিয়েন শহরে বেড়াতে যান। সেখানে বেড়াতে যাওয়ার পর প্রথম দিনেই বিষয়টি সেখানকার পুলিশ-প্রশাসন জানতে পারে। বেড়াতে যাওয়া ছাত্র-ছাত্রীদের দাবি, তাঁরা ইউনিভার্সিটির অনুমতিক্রমেই সেখানে বেড়াতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানকার পুলিশ-প্রশাসন তাঁদের বেড়াতে যাওয়ার ব্যাপারে কিছুটা কড়া পদক্ষেপ করে এবং তাঁদের হোটেলের বাইরে যাওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

কাজি আরিফ ইসলাম পরিবারকে ফোনে জানিয়েছেন, সেখানে হোটেলের ভেতরে সরকারি ভাবে তাদের থাকা খাওয়া-সহ নানা ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু হোটেল থেকে বাইরে যাওয়ার বিষয়ে কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সেখানকার প্রশাসন।

গবেষক ছাত্রদের দাবি, তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেখানে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করলেও বিশ্ববিদ্যালয় তরফেও তাদেরকে এখনই ফিরে আসার ব্যাপারে নিষেধ করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে প্রাথমিক ভাবে কুড়ি দিন ছুটি ঘোষণা করেছিল চীন সরকার। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক না হওয়ায় ছুটির মেয়াদ আরও বাড়তে পারে বলে দাবি করেছেন সেখানকার বিদেশি গবেষক ছাত্রছাত্রীরা।

অন্যদিকে, ছেলের আটকে পড়ার খবর সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার ঘটনা দেখে রীতিমতো ভীত এবং আতঙ্কিত হয়ে পড়েন সিউড়ি’র গবেষক ছাত্র কাজি আরিফ ইসলামের পরিবার। কিন্তু, ছেলের সঙ্গে তার পরিবারের যথেষ্ট যোগাযোগ রয়েছে বলে দাবি করেছেন তার বাবা কাজি আব্দুল আলি।

তিনি জানিয়েছেন, ‘ছেলের সঙ্গে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগ রয়েছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমেই ছেলে আমাকে একাধিকবার ভয়েস কল করেছে। ছেলে বলেছে ভয়ের কোনও কারণ নেই। আমাকে এখানে কেউ আটকায়নি। শুধু ভাইরাসের আতঙ্ক যাতে আমাদের মধ্যে ছড়িয়ে না পড়ে, তাই আমাদের ঘোরাফেরার ব্যাপারে কিছুটা নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আমরা আপাতত হোটেলবন্দি রয়েছি। কিন্তু এখানে আমাদের খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে সব রকমের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। তাই ছেলের কথা শুনে প্রশাসনিক কোনও ব্যবস্থা এই মুহূর্তে গ্রহণ করিনি। কারণ, ছেলে নিজেই বলেছে সে ভাল আছে।

ad

পাঠকের মতামত