305997

অ্যামাজনে আগুন লাগাতে টাকা ঢেলেছিলেন ডিক্যাপ্রিও!

সম্প্রতি ‘পৃথিবীর ফুসফুস’ বলে পরিচিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় রেইনফরেস্ট আমাজনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সেখানে আগুন লাগাতে জনপ্রিয় হলিউড অভিনেতা, পরিবেশবাদী লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও আর্থিক অনুদান দেন বলে অভিযোগ তুলেছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জায়ের বলসোনারো।

শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) নিজ কার্যালয়ে কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই ডিক্যাপ্রিওর বিরুদ্ধে এ অভিযোগ তোলেন ব্রাজিল প্রেসিডেন্ট। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম থেকে এ তথ্য জানা যায়।

গত ১৫ আগষ্ট থেকে টানা জ্বলছিল পৃথিবীর ফুসফুস অর্থাৎ আমাজন। বৈজ্ঞানিক হিসাবে পৃথিবীর প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের ২০ শতাংশই আসে এই অরণ্য থেকে। দাবানলের জেরে গত ১৫ অগাস্ট থেকে জ্বলে উঠেছিল এই অরণ্য।

সেই ঘটনায় সংস্কৃতি জগৎ থেকে সর্বপ্রথম আওয়াজ তোলেন হলিউডের অস্কারজয়ী অভিনেতা লিওনার্দো ডি-ক্যাপ্রিও। তিনি জানিয়েছিলেন, তাঁর এনজিও আমাজনের ক্ষয়ক্ষতির জন্য সিংহভাগ অর্থ খরচ করবে।

যাতে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ফুসফুস আবারও নিজের অবস্থানে ফিরে আসে। সেইমতো ডিক্যাপ্রিও অর্থও প্রদান করেন কিন্তু ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি তা নস্যাৎ করে দিয়েছেন এদিন।

সাংবাদিক সম্মেলন করে তিনি জানিয়েছেন ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ডের’ মাধ্যমে ৫০০ মিলিয়ন ডলার খরচা করে ব্রাজিলের আমাজনে আগুন ধরিয়েছেন লিওনার্দো। পাশাপাশি লিওনার্দো দাবি ব্রাজিলের আমাজনের জন্য আর্থিক অনুদান দিলেও তাঁর কোনও প্রমাণ নেই, বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি বলসোনারো।

গত অগাস্ট মাসে আমাজনের আগুন লাগার সময় রাষ্ট্রপতি বলসোনারো জানিয়েছিলেন, এটা তাঁদের দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়, এই নিয়ে বহিরাগতদের নাক গলানকে পছন্দ করেন না তিনি। দীর্ঘ ৯ দিন পর আগুন সম্পূর্ণ গ্রাস করার পর নড়েচড়ে বসেন তিনি। ব্রাজিল সরকারের তরফে ঘোষণা করা হয়, অ্যামাজনের আগুন নেভাতে সেনাবাহিনী পাঠানো হবে। যদিও তারপরেও কোনও পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি ব্রাজিল সরকারকে। যার জন্য গোটা বিশ্বে মুখ পোড়ে ব্রাজিল সরকারের।

এদিন তিনি আরও জানিয়েছেন লিওনার্দো তাঁর সংস্থা ইচ্ছা করেই ৫০০ মিলিয়ন ডলার খরচ করে ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ডের’ মাধ্যমে আগুন ধরিয়েছিলেন তিনি। আর সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল করে জনপ্রিয় হয়েছেন লিওনার্দো।

আমাজনের ঘটনা নিয়ে কিছুদিন আগেই লিওনার্দো জানান, “ব্রাজিলের মানুষেরা লড়াই করছেন তাদের প্রাকৃতিক সম্পদকে বাঁচাতে, এটা আমার তরফ থেকে সামান্য একটি অনুদান।”

আমরা জানি, গোটা বিশ্বের আবহাওয়া কিংবা পরিবেশ নিয়ে সচেতনাতার প্রচার করেন লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও ও তাঁর এনজিওটি। যদিও ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতির অভিযোগের ভিত্তিতে কোনও জবাব দেননি লিওনার্দো।

এদিন ব্রাজিলের রাষ্ট্রপ্রধান সাংবাদিকদের সামনে নথি তুলে অস্বীকার করেন লিওনার্দো কিংবা তাঁর সংস্থা কোনও রকমের আর্থিক অনুদান দেননি ব্রাজিলের আমাজনের আগুনের জন্য।

ব্রাজিলের আমাজনে আগুন ধরা নিয়ে পরিবেশবিদদের একাংশের দাবি ছিল, সরকারি চক্রান্তের শিকার এই অরণ্য। অরণ্যের জমিকে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার লক্ষ্যে এই এমন তীব্র আগুনের শিকার বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অরণ্য। আমাজনের অগ্নিকাণ্ডের জেরে নানা দেশের ব্রাজিল দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে বিশ্ববাসী। লন্ডন, প্যারিস, জেনিভায় এই বিক্ষোভের আঁচ প্রকটতর হয়ে উঠেছিল সে সময়।

আমাজনের আগুন চলতি বছরে নতুন ঘটনা নয়, শুধু মাত্র ২০১৯ সালেই এখনও পর্যন্ত ৭৪,৮৪৩ বার আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে অ্যামাজনে। গত বার এই সংখ্যাটা ছিল মোটামুটি ৪০,০০০। অর্থাৎ এবার দাবানলের ঘটনা প্রায় ৮৩ শতাংশ বেড়েছে। ১৫ অগাস্টের লাগা আগুনে অ্যামাজনের সাত হাজার ৭৭০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা পুড়ে গিয়েছিল। মিনিটে পুড়ছে ১০ হাজার বর্গমিটার এলাকা।

ad

পাঠকের মতামত