302066

জীবনযুদ্ধে হার না মানা জুবেল: সকালে ক্লাস, বিকেলে ভ্যানগাড়িতে বীজ বিক্রি

সিলেটের বিশ্বনাথ সরকারি ডিগ্রি কলেজের মানবিক বিভাগের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী জুবেল মিয়াকে বলা যায় জীবনযুদ্ধে হার না মানা এক সৈনিক। দারিদ্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ তার প্রতিনিয়তের চ্যালেঞ্জ। তিনি সকালে কলেজে ক্লাস শেষে বিকেলে দোকানদারি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে কলেজে ক্লাসে ছোটেন। আর প্রতিদিন ক্লাস শেষেই ভ্যানগাড়ি নিয়ে নেমে পড়েন সড়কে। সবজি চাষাবাদের বিভিন্ন ধরনের প্যাকেটকৃত বীজ বিক্রি করেন তিনি।

জুবেল আহমদ উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের কাদিপুর গ্রামের মৃত জমির আলীর ছেলে। বর্তমানে উপজেলা সদরের পুরান বাজার এলাকায় ভাড়া বাসায় মা, দুই ভাই ও দুই বোনকে নিয়ে বসবাস করেন। তিনি ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট। তবে এলাকার লোকজন তাকে মেম্বার নামে ডাকেন এবং সবাই চেনেন।

উপজেলা সদরের পুরান বাজার এলাকায় জুবেল মিয়ার সঙ্গে দেখা হলে তিনি জানান, তার বয়স যখন ১৮ মাস , তখন তার বাবা মারা যান। এরপর তিনি অনেক কষ্টের মাঝে হলেও মা-ভাই-বোনের আদরে বড় হন। অনেক সংগ্রামের মধ্যে লেখাপড়া শুরু করেন। এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এবার বিশ্বনাথ সরকারি ডিগ্রি কলেজে মানবিক বিভাগে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছেন। প্রতিদিন সকালে ক্লাসে ছুটে যান, আর বিকেলে নেমে পড়েন ভ্যানগাড়ি নিয়ে। দীর্ঘ ৫ বছর ধরে তার বড় ভাই সাহেদ আলীর সঙ্গে ক্ষুদ্র ব্যবসা করে আসছেন তিনি। কাজেই লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীও বটে।

তারা দুই ভাই দুটি ভ্যান গাড়িতে করে উপজেলা সদরে এ ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। তারা প্রায় ২৫ হাজার টাকা নিয়ে এসব ব্যবসা শুরু করেছেন। এতে প্রতিদিন তিনি ৫ শ থেকে ৬ শ টাকার বীজ বিক্রি হয়। এর আগে ফল বিক্রয় করেছেন। মৌসুমী ফল, শীত মৌসুমে সবজির বীজ ইত্যাদি সবই মেলে জুবেলের ভ্যানে।

পড়াশোনার খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হতো তাকে। দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা জুবেল মিয়া প্রতিদিন ব্যবসায়ী কাজ শেষে আবার পড়াশোনায় মন দেন। ছোট দোকানের আয় থেকে নিজের খরচ চালানোর পাশাপাশি পরিবারকেও সহায়তা করেন তিনি।

পড়াশোনার প্রতি তার বিপুল আগ্রহ। এই ব্যবসার প্রতিও আছে ভালোবাসা। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বলেন, লেখাপড়া করে উচ্চশিক্ষিত হওয়ার পাশাপাশি সফল উদ্যোক্তাদের কাতারে পৌঁছাতে চাই।

ad

পাঠকের মতামত