191204

তারেক জিয়ার লন্ডনে বিকল্প হাওয়া ভবন শীর্ষক সংবাদে তোলপাড়

তরুণ প্রজন্মের জনপ্রিয় অনলাইন পূর্বপশ্চিমবিডিতে ‘লন্ডনে তারেকের বিকল্প হাওয়া ভবন’ শীর্ষক সংবাদে তোলপাড় শুরু হয়েছে বিএনপি’র ভেতরে-বাইরে। দলের ভেতরেই নানা প্রশ্ন উঠেছে। রিমোট কনেট্রাল লন্ডনে বিকল্প হাওয়া ভবনে হলে নেতাকর্মীরা রাজপথে যাবে কেন! নাম পরিচয় বিহীন লোকরা দলে এসেই কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সম্পাদকীয় পদ পেলে, তারেক রহমানের উপদেষ্টা হয়ে শান্তিপূর্ণ দেশে বসে খবরদারি করতে পারলে, নিজেদের ভবিষ্যৎ মন্ত্রী হিসাবে পরিচয় দিতে পারলে রাজপথে পুলিশের গুলি, রিমান্ড, মামলার দখল নেবে কেন কর্মীরা? এইসব প্রশ্ন এখন বিএনপি’র প্রতিটি কর্মীর।

নেতা কর্মীরা মনে করেন, রাজপথে নামার চেয়ে লন্ডনে বিকল্প হাওয়া ভবনের সদস্যদের দালাল হতে পারলেই চলে। অথবা বিকল্প হাওয়া ভবনের ফুট ফরমায়েশ খাটার জন্য ভাইয়া গ্রুপে নাম লেখাতে পারলে তো আর কোন কথাই নেই। নেতাদের উপর খবরদারি, কাড়ি কাড়ি টাকা সবই আসবে। মামলা, হুলিয়া, রিমান্ড, জেল জুলুম থেকেও দূরে থাকা যাবে। ভেতরে ভেতরে শ্লোগান উঠছে ‘ভাইয়া গ্রুপে নাম লেখাও-রাজপথ ছেড়ে দাও’।

লন্ডনে নতুন হাওয়া ভবনের প্রভাবশালী ও বিএনপি’র অঘোষিত চীফ এক্সিকিউটিভ হিসাবে পরিচিতি আবদুর রহমান সানী এসেছিলেন জীবীকার তাগিদে। তারেক রহমানের সান্বিধ্য পেয়ে কপাল খুলে গেছে তার। অতীতে রাজনীতির কোন সংশ্লিষ্টতা ছিল না। তিনিই হলেন এখণ বিএনপিতে চেয়ারপার্সন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের পরই ক্ষমতাধর ব্যক্তি। তার এখন টাকা খড়িরও অভাব নেই। দৃশ্যমান আয়ের উৎস না থাকলেও অত্যন্ত জৌলুস জীবন যাপন তার। ইতোমধ্যেই তার আখের গুছিয়ে নিয়েছেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে বিএনপিতে। যুক্তরাজ্য বিএনপি’র সেক্রেটারির ব্যবসায়িক পার্টনারও এখন তিনি। ছাত্রদল করে যারা নিজের শিক্ষা জীবন বিনষ্ট করেছেন, জেল খেটেছেন, রিমান্ডের নির্যাতন সয়েছেন তাদের প্রশ্ন ‘আমরা কেন মরতে গেলাম তাইলে’!

এদিকে পূর্ব পশ্চিমবিডিতে নিউজ প্রকাশের পর তারেক রহমানের চাটুকার দালালরা ফেইসবুকে খিস্তি খেউড় করছেন। কিন্তু একটি অভিযোগেরও জবাব তারা উল্লেখ করতে পারছেন না। ঢালাওভাবে শুধু তারা বলছেন ষড়যন্ত্র এবং অপপ্রচার। নিউজের বিপরীতে সত্যটা কি সেটা কাউকে বলতে বা লিখতে দেখা যাচ্ছে না। শুধু পূর্বপশ্চিম বিডির সম্পাদক পীর হাবিবকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে গালাগালি চলছে। এতেই প্রমান হয় তাদের বলার মত কিছু নেই।

যুক্তরাজ্য বিএনপি’র নেতৃত্বে অশিক্ষিতই তারেক রহমানের পছন্দ: ২ জানুয়ারি কাউন্সিল হবে এই ঘোষণার পর থেকেই যুক্তরাজ্য শাখা বিএনপিতে অস্থিরতা চলছিল। প্রথমে ঘোষণা হয়েছিল গোপন স্থানে কাউন্সিল হবে। সেই কাউন্সিলের আগের রাতে যুক্তরাজ্য বিএনপি’র কার্যালয় দখলে নিয়েছিল সংক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। অস্থিরতা থামাতে তাৎক্ষণিক স্থগিত করা হয় কাউন্সিল।

এরপরই ঢাকা থেকে একটি ফরমায়েশি বার্তা সংগ্রহ করানো হয়। ফরমায়েশি বার্তা অনুযায়ী আগামী ১৫ জানুয়ারি কাউন্সিলের প্রস্তুতি চলছে। প্রথমে ছিল প্রতি জোন থেকে ২জন মাত্র কাউন্সিলর থাকবে। অস্থিরতা থামাতে কাউন্সিলরের সংখ্যা প্রতি জোন থেকে ৫ জন করা হয়েছে। তারপরও লোকচুরির শেষ নেই। একই সাথে নেতাকর্মীদের মাঝে এ নিয়ে চলছে অস্থিরতা। তবে সংক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের কোন দাবী মানা হয়নি। এক লিখিত আবেদনে সংক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা তাদের দাবী উত্থাপন করেছিলেন কাউন্সিল নিয়ে। সেই দাবীর কোনটাই মানা হয়নি। এর কারন হচ্ছে দাবী মানলে বর্তমান সভাপতি ও সেক্রেটারিকে বহাল রাখা সম্ভব হবে না। এক নারীর সাথে সভাপতির ভিডিও ভাসছে মোবাইলের ইনবক্সে। নারী কেলেঙ্কারির আরো ঘটনা প্রচারিত রয়েছে। সেক্রেটারির বিরুদ্ধেও চাঁদাবাজিসহ অভিযোগের অন্ত নেই।

অপরদিকে গত ২ বছরে যুক্তরাজ্য বিএনপি থেকে মোট ১৮ জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। কেউ সামান্য সমালোচনা করলেই কপালে ঝুটে সরাসরি বহিস্কার নোটিশ। সর্বশেষ দল থেকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ বহিস্কার হন যুক্তরাজ্য বিএনপি’র সহ-সভাপতি আখতার মিয়া। এই বহিস্কার নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। দলের ভেতরে কি তাইলে বিকল্প হাওয়া ভবনের ডিকটেটরশীপ চলছে? এসব নিয়ে দলের কেউ সমালোচনা করলে তাঁকে সরকারের দালাল হিসাবে আখ্যায়িত করেন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নিজে।

বাংলাদেশে কমিটি গঠনেও বিকল্প হাওয়া ভবনের প্রভাব: বাংলাদেশে বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন এবং জেলা কমিটি এমনকি কোন কোন থানা কমিটি গঠনেও বিকল্প হাওয়া ভবনই ভরসা। লন্ডন কানেকশন যাদের ভাল তারাই পায় গুরুত্বপূর্ণ পদ। খোজ নিয়ে জানা গেছে লন্ডন কানেশন তৈরি করতেও খরচ করতে হয় মোট অঙ্কের টাকা। বিকল্প হাওয়া ভবনের সদস্যদের ম্যানেজ না করলে দেখা মিলে না নেতার। আগে ম্যানেজ করতে হয় বিকল্প হাওয়া ভবনের সদস্যদের। শুধু তাই নয়, আবদুর রহমান ম্যানেজ না হলে অনেককেই বিপাকে পড়তে হয় লন্ডনে এসেও। দেশে রাজনীতি করে মামলা, হামলা, হুলিয়ায় বাড়িঘর ছাড়া হলেও বিকল্প হাওয়া ভবনের সদস্যরা মোটাতাজা হচ্ছেন আরাম আয়েশে। উৎস: পূর্বপশ্চিম।

ad

পাঠকের মতামত