191219

তারা গাড়িও চালান ভালো

নারীর কাজই হলো ঘর সামলানো। সেই ধারণা থেকে আগেই বের হয়ে এসেছে বিশ্ব। বিশ্বের সব স্থানেই নারীরা পুরুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেদের উজ্জ্বল অবদান রেখে যাচ্ছেন। নারীর অবদানের কথা এলেই বাংলাদেশের কথা উঠে আসবে। এ দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলীয়নেত্রী রওশন এরশাদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, এভারেস্ট বিজয়ী নিশাত মজুমদার বা ওয়াসফিয়া নাজরীন থেকে শুরু করে প্রতিটি উচ্চ পর্যায়ে অবস্থান করছেন একেকজন দক্ষ ও বিচক্ষণ নারী, যাদের নেতৃত্বে বিশ্ব দরবারে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ।

শুধু ঘর সামলানোই যে নারীর একমাত্র কাজ নয়, নারীরা আজকাল কাজ করছেন মন্ত্রণালয় থেকে কর্পোরেট হাউজেও, ফিল্মে অভিনয় থেকে শুরু করে খেলাধুলাতেও অংশ নিচ্ছেন তারা। প্রিয়.কম এর আজকের আয়োজন এমন কিছু তারকাদের নিয়ে, যারা শুধু গান বা অভিনয় নয়, ড্রাইভিং সিটেও সমানভাবে সফল।

পরীমণি। এ সময় বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের একজন আলোচিত অভিনেত্রী। ২০১৫ সালে ‘ভালোবাসা সীমাহীন’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষেক হয় তার। ‘রানা প্লাজা’ সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হয়ে ব্যাপক আলোচিত আসেন পরী। এরপর ‘পাগলা দিওয়ানা’, ‘আরো ভালোবাসবো তোমায়’, ‘লাভার নাম্বার ওয়ান’, ‘নগর মাস্তান’, ‘মহুয়া সুন্দরী’, ‘পুড়ে যায় মন’, ‘মন জানে না মনের ঠিকানা’, ‘রক্ত’, ‘আপন মানুষ’, ‘সোনাবন্ধু’সহ বেশ কিছু সিনেমা মুক্তি পেয়েছে তার। এছাড়াও ‘অন্তর জ্বালা’, ‘ইনোসেন্ট লাভ’ ‘স্বপ্ন জ্বাল’, ‘নদীর বুকে চাঁদ’, ‘আমার প্রেম আমার প্রিয়া’সহ প্রায় এক ডজন সিনেমা মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। বর্তমানে কয়েকটি সিনেমার শুটিং নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন এই অভিনেত্রী।

ব্যস্ততম এই অভিনেত্রীর রয়েছে নীল রঙের একটি মিৎসুবিশি ব্যান্ডের সুদর্শন ল্যান্সার। গাড়িটি সত্তর দশকের। যদিও এটি তিনি চালানোর জন্য নয়, শখের বশেই কিনেছেন। মিৎসুবিশি ল্যান্সার ছাড়াও তার রয়েছে টয়োটা প্রিমিও ব্যান্ডের একটি গাড়ি। দুবছর আগে এ গাড়িটি কেনা হয়েছে। এটাই তিনি নিয়মিত ব্যবহার করে থাকেন। ড্রাইভিং শিখেছিলেন কবে জানতে চাইলে পরী জানান; সাত বছর আগে বাবার কাছ থেকে প্রথম ড্রাইভিং শিখেছিলেন তিনি। আগে নিয়মিত চালালেও, কাজের ব্যস্ততার কারণে এখন খুব একটা গাড়ি চালানো হয় না তার।

জিনাত সানু স্বাগতা। একাধারে তিনি একজন অভিনেত্রী, মডেল, সংগীতশিল্পী এবং উপস্থাপক। বর্তমানে অভিনয়, মডেলিং, গান এবং উপস্থাপনায় সমানভাবে নিজ দক্ষতায় কাজ করে চলেছেন। চলচ্চিত্রে তার আগমন শৈশবেই। একাধিক ছবিতে তিনি শিশুশিল্পী চরিত্রে অভিনয় করেন, অভিনেত্রী হিসাবে তার প্রথম চলচ্চিত্র ‘শত্রু শত্রু খেলা’। এছাড়া তিনি নিয়মিত ছোটপর্দায় অভিনয় করেন। শৈশব থেকেই গান গাইতেন তিনি। বড় হওয়ার পরও গানের চর্চা অব্যাহত রেখেছেন। স্বাগতা; নিয়মিতই ড্রাইভিং করেন। নিজের গাড়ি দিয়েই প্রথম ড্রাইভিং-এ হাতেখড়ি হয় তার, এক্ষেত্রে তার ব্যক্তিগত ড্রাইভার সাহায্য করেছিলেন তাকে। প্রথম দিন বাসার গ্যারেজ থেকে গেট পর্যন্ত চালিয়েছিলেন, পরেরদিন বাসার গেট থেকে শান্তিনগর পর্যন্ত চালাতে গিয়ে স্টিয়ারিং একদিকে চলে যাচ্ছিল, তৃতীয় দিন থেকে আর সেই সমস্যা হয়নি। গাড়ি চালিয়ে সে দিনই তিনি হোতাপাড়া চলে যেতে পেরেছিলেন। হোতাপাড়ায় চলে যাওয়ার পর নিজের প্রতি কনফিডেন্ট আসে তার। যদিও গাড়ি চালানোর কোনো লাইসেন্স নেই তার, এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘মি মাইসেলফ ইজ দ্য লাইসেন্স’।

টিভি নাটকের নিয়মিত মুখ দীপান্বিতা হালদার। শুধু টিভি নাটকে নয় মঞ্চ অভিনয়েও রয়েছে তার সুনাম। তবে এখন তিনি টিভি নাটকেই অভিনয় করেন নিয়মিত। করেছেন বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রও। তবে তার অভিনয়ে মাত্রা খুবই সীমিত কারণ গল্প ও চরিত্র ভালো না হলে তিনি কাজ করে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। দীপান্বিতা খুব ছোটবেলাতেই গাড়ি চালানো শিখেছেন। বাবার চেয়ে বড় শিক্ষক আর হয় না, গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে দীপান্বিতা বাবাকেই শিক্ষক হিসাবে পেয়েছিলেন। তার কাছ থেকেই ড্রাইভিং-এ হাতেখড়ি হয় দীপান্বিতার। প্রথমদিকের গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা সম্পর্কে এ অভিনেত্রী বলেন, ‘২০০০ সালে আমার বয়স বেশ কম ছিল। সে তখন অনেক সময় বাসায় না বলেই গাড়ি নিয়ে বের হয়ে যেতাম। একবার চিটাগাং হাইওয়েতে চলে গিয়েছিলাম গাড়ি নিয়ে। তখন তো গাড়ির অনেক টেকনিক্যাল ব্যাপারই জানতাম না। গাড়ির হিট কন্ট্রোল করতে হয় সেটা আমার জানা ছিল না, ফলে ঐটা বাস্ট হয়ে যায়।

সঙ্গে সঙ্গেই আমার এক কাজিন ছিল সার্জেন্ট, তাকে ফোন করে আনালাম। তিনি এসে গাড়িটাকে সেভ করলেন। এ ঘটনার পর আমার বাসা থেকে গাড়ি স্পর্শ করতেও নিষেধাজ্ঞা জারি হলো। তবে এরপরেও আমি না বলে অনেক সময় গাড়ি নিয়ে কলেজ-ইউনিভার্সিটি চলে গিয়েছি’। দীপান্বিতা খুব জোর দিয়েই বলেন, নারীদের গাড়ি চালানো উচিত। এখন নিয়মিত গাড়ি না চালালেও, দুবছর আগে তিনি টয়োটা এলিয়ন ব্র্যান্ডের গাড়ি ব্যবহার করতেন। এমনকি মোটরবাইক শেয়ার সার্ভিস ‘পাঠাও’তে নারী রাইডারের ব্যাপারে তিনি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি মিডিয়া রিলেটেড কাজ না করলে উবার চালানো শুরু করতাম’।

মারজিয়া কবির সনিকা। সবাই তাকে চেনে বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ডিস্ক জকি (ডিজে) অথবা টেলিভিশনের উপস্থাপিকা হিসেবেই। তবে বেশ কিছু নাটকেও অভিনয় করেছেন তিনি। বিভিন্ন অনুষ্ঠান বা ইভেন্টে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে গানের ডিস্ক সামলালেও ড্রাইভিং কেমন তিনি জানতে চাওয়া হলে তিনি হেসে বলেন, ‘আমি ড্রাইভ করতে পারি কিন্তু আমাকে ড্রাইভ করতে দেওয়া হয় না’। কে ড্রাইভ করতে দেন না জানতে চাইলে আবার সহজাত হাসি দিয়ে জানান, ‘আমি গাড়ির স্পিড কন্ট্রোল করতে পারি না বলে, আমার হাজব্যান্ড গাড়ি চালাতে দিতে চান না। তার ধারণা আমি গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলতে পারি’। মাজদা আর এক্স ব্র্যান্ডের গাড়ি দিয়ে প্রথম ড্রাইভিং করা শুরু করেন সনিকা। এ গাড়ি দিয়েই তার ড্রাইভিং শেখার শুরু। এখন তিনি ব্যবহার করেন টয়োটা ব্র্যান্ডের প্রিমিও। ২০১০ সালে নাভিদ নামের এক বন্ধুর কাছ থেকেই ড্রাইভিং এর হাতেখড়ি হয় তার।

ad

পাঠকের মতামত