177387

লজ্জার সিরিজ হার টাইগারদের

পার্লের বোল্যান্ড পার্কে জয়ের পাল্লাটা ভারী পরে ব্যাটিং করা দলের। তার সঙ্গে আগের দিনের বৃষ্টি ও কিছুটা ভেজা আউটফিল্ড। ভাগ্যটা সঙ্গেই ছিল। টস জিতেছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। ফিল্ডিংও নেন। কিন্তু ফিল্ডারদের ক্যাচ মিসের মিছিলে ভাগ্যটা আর টাইগারদের সঙ্গে থাকেনি। দুটি সহজ জীবন পেয়ে ঝড় তোলেন এবি ডি ভিলিয়ার্স। খেলেন ১৭৬ রানের বিধ্বংসী এক ইনিংস। রানের পাহাড়ে চাপা পরে টাইগাররা। এরপর ব্যাটিংয়ে দুটি জীবন পান ইমরুল কায়েসও। কিন্তু কাজে লাগাতে ব্যর্থ। এর আগে তারই ভুল সিদ্ধান্তে আউট তামিম। মাঝে মুশফিকের চেষ্টা। কিন্তু লাভ হয়নি। শুধু হারের ব্যবধান কমেছে। তবে লজ্জাটা কমেনি। কারণ তারপর ১০৪ রানের হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় টাইগারদের। এক ম্যাচ হাতে রেখেই ২-০ তে সিরিজ জিতে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম ওয়ানডেতে ১০ উইকেটে হেরেছিল বাংলাদেশ।

লক্ষ্যটা ছিল পাহাড়সম। ৩৫৪ রানের বিশাল সংগ্রহ। তাড়া করতে নেমে ধীর গতিতেই শুরু করে বাংলাদেশ। ইনজুরি থেকে এ ম্যাচে ফেরা তামিম দারুণ সেট হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু আউট আম্পায়ারের একটি ভুল সিদ্ধান্তে। যদিও এ আউটে দায়টা ইমরুলেরই বেশি। অষ্টম ওভারের চতুর্থ বলটি অফ স্টাম্পের বাইরে করেছিলেন ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস। বল লাগে প্যাডে। আম্পায়ার সঙ্গে সঙ্গেই দেন আউট। কিন্তু টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় রিভিউ নিলে বেঁচে যেতেন তামিম। পারেননি ইমরুল বুঝতে না পারায়। ২৩ রান করেন তামিম।

এরপর বাংলাদেশের দুর্ভোগ আরেক ধাপ বাড়িয়ে দেন ইমরুল। আন্ডিলে ফেহলুকওয়ায়োর মিডল স্টাম্পে থাকা বলে আউট হন লিটন কুমার দাস। এবার লিটনকে রিভিউ নিতে বাঁধা দেননি ইমরুল। ফলে নিজেদের রিভিউটি হারায় বাংলাদেশ। লিটনের বিদায়ের পর ইমরুলকে সঙ্গে নিয়ে ইনিংস মেরামতের দায়িত্ব নেন আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান মুশফিকুর রহীম। লড়াইটা ভালোই চালাচ্ছিলেন। জুটিও গড়েছিলেন ৯৩ রানের। কিন্তু ইমরান তাহিরের গুগলিতে ডি ভিলিয়ার্সকে ক্যাচিং অনুশীলন করিয়ে মাঠ ছাড়েন ইমরুল। ৭৭ বলে ৬৮ রান করেন তিনি।
এরপর বলার মতো আর জুটি গড়ে ওঠেনি। উইকেট বিলিয়ে দেওয়ার মিছিলে যোগ দেন বাকি ব্যাটসম্যানরা। মুশফিক লড়াই করেছিলেন একা। ব্যক্তিগত ৬০ রানে সেট হয়ে আউট হয়ে গেছেন তিনিও। শেষ দিকে মাহমুদউল্লাহ (৩৫) চেষ্টা করেছিলেন। তবে লাভ হয়নি। ১৩ বল বাকি থাকতেই বাংলাদেশ অলআউট হয় ২৪৯ রানে। ফলে ১০৪ রানের লজ্জার হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় মাশরাফির দলকে।

এর আগে এবি ডি ভিলিয়ার্সের ঝড়ে ৩৫৪ রানের পাহাড় গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। যদিও শুরুর দিকে বোলিংটা ভালোই করেছিল টাইগাররা। প্রথম ৫ ওভারে স্বাগতিকরা করেছিল মাত্র ১৮ রান। এরপর ধীরে ধীরে খোলস থেকে বের হয়ে আসেন তারা। আমলা-ডি কক ৯০ রানের জুটি। ভয়ংকর হয়ে ওঠা এ জুটি ভাঙেন সাকিব। এক ওভারেই বাঁহাতি স্পিনার নেন ২ উইকেট। কুইন্টন ডি কককে (৪৬) এলবিডাব্লিউর ফাঁদে ফেলার পর স্বাগতিক শিবিরের অধিনায়ক ফ্যাফ ডু প্লেসিকেও (০) আউট করেন তিনি। দারুণভাবে ম্যাচে ফিরে আসে বাংলাদেশ।
এরপর ডি ভিলিয়ার্সকে নিয়ে ইনিংস মেরামতের কাজে নামেন দুর্দান্ত ফর্মে থাকা হাশিম আমলা। বাংলাদেশের বিপক্ষে এ সিরিজে আগের তিন ম্যাচেই করেছিলেন সেঞ্চুরি। দুই টেস্টের পর প্রথম ওয়ানডেতেও। দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও সেদিকেই এগুচ্ছিলেন। তার সাবলীল ব্যাটিং আভাসও দিচ্ছিল এমনটাই। টেস্টের পর ওয়ানডেতেও ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরির। কিন্তু রুবেল হোসেনের দারুণ বোলিংয়ে টানা চতুর্থ সেঞ্চুরি থেকে বঞ্চিত হন আমলা। তবে এর আগে দলের জন্য গড়েন ১৩৬ রানের দারুণ এক জুটি। নিজেও খেলেন ৮৫ রানের ইনিংস।
আমলার আউটের পর ডুমিনিকে নিয়ে ১১৭ রানের আরও একটি দারুণ জুটি গড়েন ডি ভিলিয়ার্স। তবে এ জুটির সিংহভাগ রান আসে তার ব্যাট থেকেই। ৯০ রান করেন ডি ভিলিয়ার্স। ডুমিনির অবদান ২৭ রান। শেষ দিকে দুর্দান্ত বোলিং করেন রুবেল। ডি ভিলিয়ার্সকে তুলে নেওয়ার পর শেষ ওভারে ডুমিনি (৩০) ও ডোয়াইন প্রিটোরিয়াসকে (০) আউট করে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ৬২ রানের খরচায় ৪টি উইকেট পান রুবেল। ক্যারিয়ারে ষষ্ঠবার ইনিংসে ৪ উইকেট। এছাড়া ২টি উইকেট নিয়েছেন সাকিব।

তবে ম্যাচের সব আলো কেড়ে নেন ডি ভিলিয়ার্স একাই। করেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ১৫০ ও ২৫তম সেঞ্চুরি। ১০৪ বলে ১৭৬ রানের ইনিংস খেলে থামেন তিনি। ১৫টি চার ও ৭টি ছক্কায় নিজের ইনিংসটি সাজান এ ড্যাশিং ব্যাটসম্যান। এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অপরাজিত ১৬২ রান ছিল তার ক্যারিয়ার সেরা। তবে যেভাবে ব্যাট করছিলেন তাতে ওয়ানডে ইতিহাসের সপ্তম ডাবল সেঞ্চুরিটি মনে হয়েছিল কেবল সময়ের ব্যবধান মাত্র। রুবেলের বলে আরও একটি ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে সাব্বির রহমানের হাতে ধরা পড়েন তিনি। তবে দুটি জীবন পেয়েছেন এই ব্যাটসম্যান।

সংক্ষিপ্ত স্কোরকার্ড-
বাংলাদেশ : (৪৭.৫ ওভারে ২৪৯) (তামিম ২৩, ইমরুল ৬৮, লিটন ১৪, মুশফিক ৬০, সাকিব ৫, মাহমুদুল্লাহ ৩৫, সাব্বির ১৭, নাসির ৩, মাশরাফি ০, তাসকিন ৩*, রুবেল ৮; রাবাদা ০/৪০, প্যাটারসন ১/৬৭, প্রিটোরিয়াস ২/৪৮, ফেহলুকওয়ায়ো ৪/৪০, তাহির ৩/৫০)।
দক্ষিণ আফ্রিকা : (৫০ ওভারে ৩৫৩/৬) (ডি কক ৪৬, আমলা ৮৫, ডু প্লেসি ০, ডি ভিলিয়ার্স ১৭৬, ডুমিনি ৩০, বেহার্ডিন ৭*, প্রিটোরিয়াস ০, ফেহলুকওয়ায়ো ০*; মাশরাফি ০/৮২, তাসকিন ০/৭১, সাকিব ২/৬০, নাসির ০/৪৯, রুবেল ৪/৬২, সাব্বির ০/১১, মাহমুদুল্লাহ ০/১৬)।

ad

পাঠকের মতামত