361103

ব্ল্যাকমেইলের ফাঁদে চলত টাকা আদায়: রিমান্ডে হেলেনা জাহাঙ্গীর

নিউজ ডেস্ক।। আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ নামে একটি সংগঠনের পোস্টার ঘিরে বিতর্কে আসার পর গ্রেপ্তার হওয়া আলোচিত-সমালোচিত ব্যবসায়ী-রাজনীতিক হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে।

ইতোমধ্যে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে প্রথমে সখ্য তৈরি করে পরবর্তী সময়ে ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার তথ্য পেয়েছে র‌্যাব। ব্লাকমেইলের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য যাকেই প্রয়োজন হয়েছে তাকে তিনি ঘায়েল করেছেন। হেলেনার এসব অপকর্ম আরও গভীরভাবে খতিয়ে দেখতে মামলার তদন্ত করতে চায় র‌্যাব। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সায় পেলে তদন্তভার পাওয়ার আবেদন করা হবে বলে জানা গেছে।

এদিকে আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটির পদ খোয়ানো হেলেনা জাহাঙ্গীর গুলশান থানায় দায়ের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় তিন দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। রিমান্ডের প্রথম দিনের জিজ্ঞাসাবাদে মুখ খুলতে শুরু করেছেন হেলেনা। বেশ কিছু বিস্ফোরক ও চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। সেসব বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে গুলশান থানা পুলিশের একটি সূত্র।

গতকাল শনিবার দুপুরে র‌্যাব সদর দপ্তরে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে প্রথমে সখ্য তৈরি করে পরবর্তী সময়ে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায় করতেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। এ রকম অনেকের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হয়েছে সে বিষয়ে তথ্য আমরা পেয়েছি। এ অপকর্মে হেলেনা কখনো সুনির্দিষ্ট একজন ব্যক্তির জন্য থেমে থাকেননি। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন লোকের সঙ্গে পরিচয় ঘটেছে তার। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে ছবি তুলেছেন এবং সেটা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছেন শুধু উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য। আমাদের একটি মামলার কারণ এটাই।

তিনি আরও বলেন, তিনি রাষ্ট্রের ব্যক্তিদের সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন, যা তাদের বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে, জনগণের মধ্যেও বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যদি মনে করে এই মামলাটির র‌্যাব তদন্ত করবে, তা হলে যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা আবেদন করব। তবে তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে হবে।

র‌্যাবের এ মুখপাত্র আরও বলেন, হেলেনা জাহাঙ্গীরের স্বামী ১৯৯০ সাল থেকে গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। পরে বিভিন্ন সময়ে অন্যদের সঙ্গে পার্টনারশিপের মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করে এখন পর্যন্ত পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের মালিক তিনি। ২০১২ সাল থেকে জয়যাত্রা ফাউন্ডেশনের নামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করতেন। আমরা জানতে পেরেছি গত দুই বছরে বিভিন্ন মাধ্যম এবং কথিত আইপি টিভি জয়যাত্রা টেলিভিশনে চাকরি দেওয়ার কথা বলে, এজেন্সি দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে বিভিন্ন পরিমাণ টাকা আদায় করতেন। কারও কাছ থেকে ১০ হাজার, কারও কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা, আবার কারও কাছ থেকে ১ লাখ টাকা নিয়েছেন বলে আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। কী কারণে টাকা নিয়েছেন এবং কী কাজে ব্যবহার করা হয়েছে- এ বিষয়ে হেলেনা জাহাঙ্গীর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি বলেও জানান র‌্যাবের এই কর্মকর্তা। এসবের দায় অফিস স্টাফদের ওপর চাপিয়েছেন তিনি। বাসায় এবং অফিস থেকে যে পরিমাণ ভাউচার পাওয়া গেছে, তা এখনো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। জয়যাত্রা টেলিভিশনের আইডি কার্ড ব্যবহার করে অনেক প্রতিনিধিও এই চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি।

কমান্ডার মঈন বলেন, হেলেনা জাহাঙ্গীর আমাদের জানিয়েছেন, তার ১৫ থেকে ১৬টি ফ্ল্যাট রয়েছে। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি ফাউন্ডেশনের সঙ্গে তিনি জড়িত। বিভিন্ন সময় চাঁদাবাজি বা ব্ল্যাকমেইল করে আদায় করা টাকাগুলো তিনি ফাউন্ডেশনের কাজে লাগাতেন। সুনামগঞ্জে তিনি ত্রাণ বিতরণ করায় স্থানীয়রা তাকে পল্লীমাতা উপাধি দিয়েছে। ফাউন্ডেশনের নামে প্রবাসীদের কাছ থেকে অনেক টাকা এনেছেন। এগুলো কী কাজে ব্যবহার করা হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। ফ্ল্যাট কিংবা গাড়ির সংখ্যা কতগুলো, সে বিষয়ে প্রকৃত কোনো তথ্য আমাদের দিতে পারেননি। কখনো ছয়টি গাড়ি, কখনো আটটি গাড়ির কথা উল্লেখ করেন তিনি।

জিজ্ঞাসাবাদে হেলেনা জাহাঙ্গীর র‌্যাবকে জানান, সম্প্রতি তিনি রাজনীতিতে যোগ দেন। সামাজিক কর্মকা-ের মাধ্যমে নিজেকে সমাজসেবক হিসেবে তুলে ধরার প্রচেষ্টায় ছিলেন। বেশ কয়েকবার তিনি নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। তিনি শুধু নিজের অবস্থান উচ্চপর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যই এ ধরনের অপপ্রয়াস-অপতৎপরতা চালিয়েছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি বক্তব্য উল্লেখ করে খন্দকার আল আমিন বলেন, বক্তব্য খুবই উদ্বেগজনক। কাউকে এভাবে হেয়প্রতিপন্নভাবে কথা বলা সমীচীন নয়।

গত বৃহস্পতিবার রাতে গুলশানের ৩৬ নম্বর রোডের ৫ নম্বর বাসা থেকে প্রায় ৪ ঘণ্টা অভিযান শেষে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে আটক করে র‌্যাব। সিলগালা করে দেওয়া হয় জয়যাত্রা টেলিভিশনের অফিসও। পরদিন গুলশান থানায় দুটি ও পল্লবী থানায় একটি মামলা করে র‌্যাব।উৎস: দৈনিক আমাদের সময়।

ad

পাঠকের মতামত