346959

সম্পর্কে কে বেশি প্রতারক, নারী না পুরুষ? জেনে নিন

প্রতারণার ঘটনা বিশ্বে ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। স্বামী-স্ত্রী, বন্ধু-বান্ধব, বাবা-ছেলে, মা-মেয়ে পৃথিবীর অনেক রক্তের সম্পর্কের মধ্যেও এই প্রতারণার ঘটনা এখন বিরাজমান। বিশেষ করে একজন নারী ও পুরুষের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এর প্রভাব বেশি দেখা যায়। দুইটি সম্পর্কে সবকিছু ভালো থাকতে, অথবা সম্পর্কচ্ছেদের ঘটনা থেকে বাঁচতে একজন নারী ও পুরুষ সবসময় এই ধরনের প্রতারণার আশ্রয় নেন। এতে করে একজন শান্তিতে থাকছে আর অন্যজন সম্পর্কের প্রতি আস্থা হারাচ্ছে। শুধু তাই নয় এই ধরনের প্রতারণার কারণে প্রতিনিয়িত আস্থা হারাচ্ছে লাখো লাখো মানুষ।
মোদ্দাকথা এই ধরনের প্রতারণার কারণে শুধু নিজেদের মধ্যে নয় বরং গণমানুষের মধ্যেও এর প্রভাব পড়ছে। বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন, তার সঙ্গীর সঙ্গে প্রতারণা করছে প্রতিনিয়ত। এই অপরাধ করাটা তাদের কাছে একটি মামুলি ব্যাপারই বটে। তবে এতে করে একজন নিজের ক্ষতি করছে আর অন্যজন অনেকের জীবন নষ্ট করেই চলেছে।

এদিকে, সম্প্রতি এ সংক্রান্ত নতুন এক গবেষণার ফল প্রকাশিত হয়েছে পার্সোনালিটি অ্যান্ড ইনডিভিজুয়াল ডিফারেন্স জার্নালে। সেখানে সমাধান মিলেছে, নারী-পুরুষের বিশ্বাস-অবিশ্বাস সংক্রান্ত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের। বিষয়টি নিয়ে সুনির্দিষ্ট ফলাফল প্রাপ্তির জন্য গবেষকরা ৫৭৬ জন প্রাপ্তবয়স্ককে বেছে নেন। তাদের ব্যক্তিত্ব, প্রতারণাপূর্ণ আচরণ এবং প্রতারণার কারণ বিশ্লেষণ করা হয় এই গবেষণায়। এতে অন্যের সঙ্গে প্রতারণা থেকে বিরত থাকার কারণও বিশ্লেষণ করা হয়।

তবে এই গবেষণার প্রাপ্ত ফলাফলে বলা হয়, যারা প্রতারণা বিরোধী তারা খুব দায়িত্বশীল, ন্যায়পরায়ণ এবং শৃঙ্খলাপূর্ণ। অর্থাৎ তারা নিজের সৎ দিকগুলোর কারণে সে প্রতারণার আশ্রয় থেকে নিজেকে দূরে রাখছে। এছাড়াও এই গবেষণায় নাকি গবেষকদের একটি ফলাফল উঠে এসেছে। সেটি হেএলা- খোলা মনের মানুষরা নাকি স্বভাবের দিক থেকে ভালো হয়। তারা নাকি তেমন প্রতারণার আশ্রয় নেয় না। তবে যারা একটু নিরব স্বভাবের, তাদের মধ্যে নাকি এর প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা গেছে।

গবেষকদের মতে, যারা খোলা মনের মানুষ, তারা বেশি সৃজনশীল এবং কল্পনাপ্রবণ, যৌন স্বাধীনতায় বিশ্বাসী এবং নিজের সামাজিক অবস্থানে সুখী। এই সমস্ত বিষয়কেই ইতিবাচক হিসেবে দেখা হয়েছে। সেক্স থেরাপিস্ট ড. টামি নেলসন বলছেন, বিষয়টি এমন নয় যে, প্রতারকরাই সকালে ঘুম থেকে উঠে কৌশল খোঁজে তার সঙ্গীকে প্রতারণা করার।

তবে তাদের গবেষণায় আরো ধরা পড়েছে, সাধারণ মানুষের মধ্যে খুবই কম সংখ্যকই অন্যের সঙ্গে প্রতারণা করতে চায়। আর পুরুষের চেয়ে নারীরা বেশি বিশ্বস্ত হয়। প্রতারণার সঙ্গে আরেকটি বিষয় বেশ শক্তভাবে যুক্ত। তা হলো সাংস্কৃতিক প্রসঙ্গ। গবেষকরা লিখেছেন, সামগ্রিকভাবে আমরা এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি, নারীদের মধ্যে অন্যকে প্রতারণার প্রবণতা কম। তারা অন্যের প্রশংসায় পঞ্চমুখ কিন্তু অতটা খোলা মনের নয়। তারা একজনের সঙ্গে সম্পর্কে সন্তুষ্ট। অন্যদিকে, পুরুষের মধ্যে প্রতারণা প্রবণতা বেশি। তারা একজনের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার ব্যাপারে সন্তুষ্ট নয়। তাদের নিত্যনতুন সম্পর্কের প্রতি আগ্রহ বেশি। তারা খুব বেশি প্রেমে পড়তে ভালোবাসে।

গবেষণায় আরো উঠে এসেছে, নারীরা বিশ্বাস ভঙ্গ করলে তাদেরকে শাস্তি পেতে হয়। কিন্তু পুরুষের বেলা তা হয় খুব কম। কারণ, তারা সম্পর্কের ক্ষেত্রে অনেক জেদ করে। আর সেই জেদে হার মানতে হয় একজন নারীকে। সে গবেষণায় আরো বলা হয়, বর্তমান সমাজে প্রতারণা এত বেশি বেড়ে যাওয়ার পেছনে আমরা সবাই কম-বেশি দায়ী, কিন্তু একজন মেয়ের চেয়ে ছেলেরা এর জন্য বেশি দায়ী। কারণ প্রতিনিয়িত তারা বাইরে যেতে পারছে। এর ফলে নিত্যনতুন মানুষের সঙ্গ পাচ্ছে।

এর ফলে তারা খুব তাড়াতাড়ি প্রেমে পড়ছে। আর এতে করে ধোঁকাগ্রস্থ হচ্ছে একজন নারী। মূলত একটি প্রতারণা জন্ম দিচ্ছে, এতে করে বিশ্বাস হারাচ্ছে অনেকেই। একটি ঘটনা যতই সাধারণ হোক, আমাদের কারোরই উচিত নয় তা এড়িয়ে যাওয়া বা ক্ষমা করা। তাই, বিষয়টি নিয়ে সবাইকে ভাবার সুপারিশ করা হয়েছে এই গবেষণায়।

এতে বলা হয়েছে, প্রতারণাকে ক্ষমা করা হলে তা আরো বেড়ে যায় সমাজে। আমরা ডেটিং সংস্কৃতি গড়তে চাই, ভালো কথা। কিন্তু প্রতারণা হলে আমাদের সবাইকে তা প্রতিহত করতে হবে। আমরা সবাইকে প্রতারক হিসেবে বিবেচনা করব না, তবে বাস্তবিক প্রতারকের বিপক্ষে ব্যবস্থা ঠিকই নেব।

ad

পাঠকের মতামত