334793

হাত স্যানিটাইজ করে ঘু’ষ নেন লালমনিরহাটের ওসি মাহফুজ!

নিউজ ডেস্ক।।  করোনা দু’র্যোগের কারণে ঘু’ষ লেনদেনেও পরিবর্তন এসেছে। লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজ আলম ঘু’ষের টাকা নেওয়ার আগে স্যানিটাইজার দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করে নেন বলে শোনা যাচ্ছে।

ঘু’ষ লেনদেনের এমন একটি ভিডিও এরই মধ্যে লালমনিরহাটে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তবে ভিডিওটির সঙ্গে অডিও যুক্ত ছিল না। আর অন্য একটি অডিওতে এ সং’ক্রান্ত কথোপকথন রয়েছে।

ভিডিওতে দেখা যায়, লালমনিরহাট সদর থানার একটি পরিবারিক মাম’লার আ’সামি পক্ষের কয়েকজন মা’মলাটির বাদীকে হেনস্থা করার কৌশল জানতে ওসি মাহফুজ আলমের কাছে এসেছেন। কৌশল হিসেবে ওসির পরামর্শ মোতাবেক তারা মাম’লাটির বাদীর বি’রুদ্ধে লিখিত অ’ভিযোগ ও ১০ হাজার টাকা নিয়ে এসেছেন। অ’ভিযোগটি নিয়মিত মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করতে ওসিকে দিতে হবে ১০ হাজার টাকা। এছাড়া ত’দন্ত কর্মকর্তাকে আরো তিন হাজার টাকা দিতে বলেন ওসি।

ভুক্তভোগীরা জানান, সদর থানায় মা’মলা করতে এবং আসামি ধরাতে এভাবে টাকা গুণতে হয়। অনেক সময় টাকার অংক বেশি হলে আ’সামি চোখের সামনে থাকলেও তাকে গ্রেফ’তার করা হয় না। কিংবা আ’সামিদের টাকার জো’রে বাদীর বি’রুদ্ধে মি’থ্যা মা’মলা নিয়ে হ’য়রানি করা হয়। ফলে ঠুনকো বিষয় নিয়েও একাধিক মা’মলা বা হয়রানির শি’কার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। টাকার জো’রে বেঁ’চে যাচ্ছেন অপরাধিরা আর ন্যায় বি’চার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন জনগণ। অনেক সময় আ’সামির টাকার জো’রে বাদীকে চাপ দিয়ে থানা চত্বরেই বসানো হয় সালিশ বৈঠক। দীর্ঘদিন একই থানায় চাকরির সুবাদে ওসি মাহফুজ আলমের বিশাল সি’ন্ডিকেট ও দালাল চক্র গড়ে উঠেছে বলেও অ’ভিযোগ স্থানীয়দের।

ভিডিওতে দেখা যায়, ওসি মাহফুজ আলম আ’সামির অবস্থান জানার পরও তাকে জা’মিন নিয়ে বাদীর বি’রুদ্ধে একাধিক মা’ম’লা দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে করোনাকালে ঘু’ষের টাকা নেওয়ার আগে স্যানিটাইজার দিয়ে হাত জী’বাণুমুক্ত করতেও ভোলেননি ওসি মাহফুজ।

ভিডিওতে ওসি মাহফুজ বলেন, তোমাদের বাদীর (কা’রাগা’রে থাকা অবস্থায় তাকে বাদী দেখিয়ে মা’মলা’র প্রস্তুতি নেওয়া হয়) তো জা’মিন হয় নাই। জামিন না হতেই থানায় হাজির হয়ে এজাহার দেওয়া হলে তো বে’আ’ইনি হবে। জামিনের কাগজসহ এসো, অ’ভিযো’গটি মা’মলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হবে। মা’মলা না হওয়া পর্যন্ত কোনো ঝা’মেলা করা যাবে না। ঝামে’লা হলে তোমরা প্যাচে পড়ে যাবে।

ঘু’ষ দাতা: আমরা ঝা’মেলা করি নাই, করব না। প্রয়োজনে ওদিকে (তাদের বি’রুদ্ধে করা মা’মলার বাদীর এলাকায়) কেউ যাব না।

ওসি মাহফুজ: মা’মলা এখানে একটা করে দেব, কোর্টেও একটা মা’মলা করবা এবং চেক ডিজঅনার করবে। এভাবে ঘুরবে (আঙ্গুল ঘুরিয়ে দেখিয়ে দেন), চড়কির মতো ঘুরবে। যারা বুদ্ধিদাতা তারা হেরে যাবে। তোমাকে ঠান্ডা মাথায় করতে হবে। গরম করা যাবে না।

ঘুষ দাতা: আস্তে আস্তে করতে হবে। একটা একটা করে। স্যার টাকা আজকে দিব না কি মাম’লার দিন?

ওসি বললেন, সেটা তোমাদের ব্যাপার।

ঘুষ দাতা: স্যার, আপনাকে কমিটমেন্ট করতে হবে। যেদিন মা’মলা হবে, সেই দিনই আ’সামি ধরতে হবে।

ওসি: আ’সামিরা পুরুষ তো?

এরপর ‘নিয়ম’ অনুযায়ী টাকা লেনদেনের জন্য ঘু’ষ প্রদানকারীকেও টাকা বের করার আগে হাত জী’বাণুমুক্ত করতে স্যানিটাইজার ঘঁষে (রাব) নিতে হবে। তাই ঘু’ষ’ দাতা বলেন, স্যার, স্যানিটাইজারটা একটু দেন।

এরপর ওসি মাহফুজ কাজ ফেলে স্যানিটাইজার দিয়ে নিজেও হাত রাব করে নেন এবং ঘু’ষ দাতার হাতেও স্যানিটাইজার দেন।

ঘু’ষ দাতা এসময় বলেন, স্যার, টাকা থেকেও করোনা ছড়ায়। তদন্ত কর্মকর্তাকে আগে এক হাজার টাকা দিয়েছি স্যার।

এরপর ঘু’ষ দাতা পকেট থেকে টাকা বের করে টেবিলে রাখলে ওসি মাহফুজ আলম তা নিয়ে প্যান্টের পকেটে রেখে বলেন, টাকা দিয়ে বেশি ছড়াচ্ছে। এখানে কত টাকা দিয়েছ?

ঘু’ষ দাতা: ১০ হাজার আছে স্যার।

ওসি: ওহ ঠিক আছে। ওকে (মা’মলার ত’দন্ত কর্মকর্তাকে) আরো দুই হাজার টাকা দিও।

এভাবে লালমনিরহাট সদর থানায় বসেই চলে ওসির মা’মলা বাণিজ্য।

ঘু’ষ নেওয়ার ভিডিও প্রসঙ্গে ওসি মাহফুজ আলম বলেন, ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের হবে। তবে করোনা শুরুর পর থেকে সরাসরি কোনো পার্টির কাছ থেকে আমি টাকা পয়সা নেই না। করোনার ছয় মাসে থানার অফিসাররা ত’দন্ত করে ফিরে দুই/তিন হাজার, যা দেয়, সেটা ছাড়া সরাসরি কোনো লেনদেন করি না।

তবে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধও করেন তিনি।

লালমনিরহাটের পুলিশ সুপার (এসপি) আবিদা সুলতানা বলেন, কোনো পুলিশ সদস্যের বি’রুদ্ধে এমন সুনির্দিষ্ট কোনো অ’ভিযোগ এলে তদ’ন্ত করে অবশ্যই বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সূত্র : বাংলানিউজ ও আমাদের সময়.কম।

ad

পাঠকের মতামত