331342

‘সেলফি’ দেখিয়েই সাহেদের কোটি কোটি টাকা প্র’তারণা

নিউজ ডেস্ক।। আলোচিত সাহেদের প্র’তারণার অন্যতম অ’স্ত্র ছিল বিশিষ্টজনদের সঙ্গে ছবি। যেখানেই সে প্র’তারণা করতে যেত, সেখানে এই ছবি ও বিশিষ্টজনদের সঙ্গে ‘ওঠাবসা’র বিষয়টি বুঝিয়ে দিতো। যার ফলে তাকে সহজেই বিশ্বাস করে লাখ লাখ টাকা দিতে দ্বিধাবোধ করতো না।

পরবর্তীতে সেই টাকা উদ্ধার করতে এলে তাকে বানিয়ে দেয়া হতো ‘চরিত্রহীন’ এতে সহায়তা করতো তার নিজের অফিসের কয়েকজন নারী।

সাহেদকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা যেত। আর সেসব অনুষ্ঠানে বিশিষ্ঠজনদের সঙ্গে সেলফি বতুলে রাখতো। অবশ্য সাহেদ যখন সেলফি তুলতো তখন কেউ ‘না’ করতে পারতো না। রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক পরিচয় দিলে কোনো বিশিষ্টজন তাকে না করবেন কীভাবে? সাহেদের বিভিন্ন সময় পোস্ট করা সেলফি গুলো দেখা বোঝা যেত সে যেচে গিয়েই ওই ছবিগুলো তুলেছে। আর এসব ছবিকে পুঁজি করেই সবখানে ফায়দা লুটতো। তার ‘বি’রুদ্ধে অ’ভিযোগ করতে গেলে থানায় মা’মলা কিংবা জিডি নেওয়া হতো না।

রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় সাহেদের বি’রুদ্ধে মা’মলা করতে গিয়ে ভুক্তভোগীরা নিজেরা হয়রানির শি’কার হয়েছেন। একাধিক ব্যক্তি এই অ’ভিযোগ করেছেন গণমাধ্যমের নিকট। এ বিষয় উত্তরা পশ্চিম থানা গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে চায়নি।

গাজীপুরের একটি জমি নিয়ে ঝা’মেলা মেটাতে উপস্থিত হন সাহেদ। সেই জমির ওপর নির্মাণাধীন ভবনের কাজ রাজউকে আটকে যায়। দুই কোটি টাকা দিয়ে তিনি নকশাটি রাজউক থেকে পাশ করে দেবেন বলে নিশ্চিত করেন। রাজিও হয়ে যান জমির মালিক। প্রথমে ১৫ লাখ টাকা অগ্রিম নেন। তারপরে কয়েকদিন পরে বাকি টাকা। কিন্তু সেই নকশার অনুমোদন মেলেনি।

প্র’তারণার শি’কার ওই ব্যক্তিকে জিজ্ঞাস করা হয় কেন বিশ্বাস করে টাকা দিলেন? ওই ব্যক্তি বলেন, ‘আমাকে দুইদিন তিনি এমন এমন ব্যক্তির কাছে নিয়ে গেছেন যে কারণে আমি বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়েছি।’

এভাবে অনেকেই ছবি দেখে ও বিশিষ্টজনদের সঙ্গে ফোনালাপ শুনে সাহেদের কথা বিশ্বাস করতো।

এসএসসি পাস ব্যক্তি সাহেদ করিম রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক। শুধু হাসপাতালই নয়; এমএলএম কম্পানি, পত্রিকাসহ আরো কত কিছুর মালিক এই সাহেদ! উপার্জন করেছেন কোটি কোটি টাকা। বিশিষ্ট অনেক ব্যক্তির সাথেই তার ছিল দহরমমহরম। প্র’তারণাকাজে তিনি এই সম্পর্ককেই ব্যবহার করে আসছিলেন।

সাহেদের বি’রুদ্ধে নতুন নতুন অ’ভিযোগের তথ্য পাচ্ছেন পুলিশ ও র‌্যাবের তদন্তকারীরা। ৩২টি মা’মলার পর তাঁর বি’রুদ্ধে আরো ২৩টি জা’লিয়াতি মা’মলার তথ্য পাওয়া গেছে। আর্থিক লেনদেনে প্র’তারণার শি’কার হয়ে মা’মলা করা ভুক্তভোগীরাই র‌্যাবকে এসব তথ্য দিয়েছেন। দায়িত্বশীলরা বলছেন, সাহেদকে গ্রে’প্তারে অ’ভিযান অব্যাহত রয়েছে। পুলিশ গতকাল শনিবার সাহেদের উত্তরার কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়ে তাঁর পাসপোর্ট, কম্পিউটারসহ কিছু আলামত জব্দ করেছে।

সাহেদের সাবেক এক নারী কর্মী পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমি তো সাহেদের তিনটি বউ দেখছি। তাদের একজন প্রিয়তির আম্মু (সাদিয়া আরাবী), যে বনানীতে থাকে। নাজিয়ার আম্মুকেও তো কিছুদিন আগে কক্সবাজার থেকে আটক করছে। আরেকজনের নাম চৈতি, সে-ই তার অরজিনাল বউ জানতাম। তার যে আর কোনো বউ আছে তা জানতাম না। পরে বাকিদের ব্যাপারে জানি।’ তিনি আরো বলেন, ‘মার্জিয়া নামের একজনকে শুধু শুধুই বেতনের নামে প্রতি মাসে ৪০ হাজার টাকা দিতে হতো। স্যার তাকে বিয়ে করছে; কিন্তু অন্যদের সামনে হয়তো সেটা দেখাচ্ছে না। লিজা ম্যাডামও মনে হয় তার বিবাহিত ছিল। অনেক খবরদারি করত। মার্জিয়াকে নিয়ে একবার অনেক ঝ’গড়া হয়েছিল।’

সাহেদের স্ত্রী (পরিচয় পাওয়া) সাদিয়া আরাবীকে গতকাল কয়েকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি। র‌্যাবের তদ’ন্তকারীরাও একই রকম তথ্য পেয়েছেন বলে জানান। একটি গো’য়েন্দা সূত্র জানায়, সাহেদের পাঁচজন সুন্দরী বান্ধবী ছিলেন। তাঁদের একজন অফিসের ঘনিষ্ঠ কর্মী লিজা। সাদিয়া ও হিরা মণি নামের দুজনও তাঁর সুরক্ষিত পাসওয়ার্ড দেওয়া কক্ষে সময় কাটাতেন। সাহেদ সুন্দরী তরুণীদের বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে কাজ বাগিয়ে নিতেন।

সূত্র জানায়, কয়েকটি ব্যাংকে নিজের অ্যাকাউন্টের জন্য সাহেদ পৃথক স্বাক্ষর ব্যবহার করেন। সরবরাহকারীসহ বিভিন্ন ব্যাবসায়িক লেনদেনে তিনি ভিন্ন স্বাক্ষর ব্যবহার করতেন। এ কারণে অনেক সময় চেক প্রত্যাখ্যাত হতো। উৎস: কালের কণ্ঠ।

ad

পাঠকের মতামত