324120

হাসপাতালের শয্যাই কফিন!

ডেস্ক রিপোর্ট।। করোনা সং’ক্রমণের দৌলতে সারা বিশ্ব গত কয়েক মাসে নানা বিচিত্র ছবি দেখেছে। তার মধ্যে রয়েছে ফ্যাশনেবল মাস্কও। কিন্তু এবার দেখা মিলল বেশ অদ্ভুতদর্শন কফিনের।

দক্ষিণ আমেরিকার দেশ কলম্বিয়া, ইকুয়ডরে তৈরি হচ্ছে নানা ধরনের কফিন। কোথাও হাসপাতালের শয্যাকে কফিনের রূপ দেয়া হচ্ছে, কোথাও বা কার্ডবোর্ড দিয়ে কফিন তৈরির উদ্যোগ চলছে।

গত কয়েক মাস ধরে বিশ্বজুড়ে করোনা মানচিত্রে সবচেয়ে বড় জায়গাটি আমেরিকা দখল করলেও বিশেষ আলোচনা হচ্ছে না দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশটাকে নিয়ে।

প্রধানত তৃতীয় বিশ্বের দেশের আধিক্য থাকা দক্ষিণ আমেরিকাতেও কিন্তু পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনা আ’ক্রান্তের সংখ্যা। শুধু তা-ই নয়, যে তথ্য প্রকাশ্যে আসছে তা চমকে দেয়ার মতো। কলম্বিয়ার নানা অঞ্চলে করোনা আ’ক্রান্ত রোগীতে এখন ছেয়ে গেছে।

শুধু তা-ই নয়, লাফিয়ে বাড়ছে মৃ’ত্যু’র সংখ্যা। অবস্থা এতটাই সঙ্গীন যে রোগীদের কবর দিতে পর্যাপ্ত কফিন পাওয়া যাচ্ছে না দেশজুড়ে।

প্রায় একই তথ্য কলম্বিয়ার প্রতিবেশী ইকুয়েডরে। সেখানকার তথ্য আরও ভ’য়াবহ। ইকুয়েডরের সবচেয়ে বড় শহর গুয়ায়াকুইলের রাস্তার পাশে সারি সারি রাখা রয়েছে করোনায় মৃ’তদে’র দেহ, যা কবরস্থ করা সম্ভব হয়নি শুধুমাত্র কফিনের অভাবে। হাসপাতালের বিছানাতেই মৃ’ত’দেহ শুইয়ে তা সমাধিস্ত করা হয়েছে। আরও ম’র্মান্তি’ক তথ্য এই যে, এই ঘটনা থেকে অনুপ্রেরণা পেয়ে এক কলম্বিয়ান ব্যবসায়ী এই ধরনের হাসপাতালের শয্যা তৈরির পরিকল্পনা’ করছেন যা পরবর্তী পর্যায়ে কফিনে রূপান্তরিত করা যেতে পারে।

গত দু’ মাস গোটা কলম্বিয়াই কোয়ারান্টাইন পালন করে। এবার তার শেষ পর্যায়ে এসে গেছে। প্রাথমিক পর্যায়ে এই দেশে কোভিড আ’ক্রা’ন্তের সংখ্যা তেমন না বাড়লেও এখন অবস্থা এমন জায়গায় এসে পৌঁছেছে যে হাসপাতালগুলোতে কোভিড রোগীদের জায়গা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। জায়গা মিলছে না অন্ত্যেষ্টি স্থলগুলোতেও।

কফিনের জোগান বজায় রাখতে যেমন হাসপাতালের শয্যাকে কফিন বানানোর উদ্যোগ চলছে। তেমন আরেক ব্যবসায়ী কার্ডবোর্ডের কফিন বানানোর ভাবনাও ভেবে ফেলেছেন।

এবিসি ডিসপ্লে নামের এক স্থানীয় বিজ্ঞাপন সংস্থার প্রধান রোডোলফো গোমেজ জানিয়েছেন, ইকুয়েডরে কী হচ্ছে সে তো আমরা দেখতে পাচ্ছি। পরিবারের সদস্যদের দেহ রাস্তায় বের করে দিচ্ছে। ম’হামা’রির কারণে অন্ত্যেষ্টি পর্যন্ত ঠিক করে করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই আমরা এমন বিছানা তৈরি করার পরিকল্পনা করেছি যা কফিনে রূপান্তরিত করা যাবে।

এই বিছানাগুলিতে ধাতব রেলিং দেয়া থাকছে, থাকছে চাকা এবং ব্রেক। প্রয়োজনে ওঠানো নামানো করা যায়। এক-একটি শয্যা ১৫০ কিলো পর্যন্ত ওজন বহন করতে পারবে। এটি বায়ো ডিগ্রেডেবল অর্থাৎ প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যেতে পারে এমন পদার্থ দিয়ে তৈরি এই শয্যাগুলোর দাম ৯২ থেকে ১৩২ মার্কিন ডলার।

এমনকী, এই ধরনের শয্যা যা কফিনে বদলে ফেলা যাবে তাতে রোগী বহন করলে মৃ’তের আত্মীয়-পরিজনদের সং’ক্রমণের আ’শঙ্কাও কম হবে বলে জানিয়েছেন গোমেজ।

রোগীর মৃ’ত্যু হলে সহজেই এই বিছানার মধ্যে দেহকে মুড়ে ফেলে কফিনবন্দি করে ফেলা যাবে। গোমেজের বোগোটার কারখানায় ইতিমধ্যে মাসে তিন হাজার কফিন-বেড তৈরি করার ব্যবস্থা করা হয়ে গিয়েছে। এমনকী, এই বেড যারা তৈরি করছেন তারাও কোনও রকম সং’ক্রমণের আ’শঙ্কা থেকে দূরে থেকেই কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন গোমেজ।

উৎপাদিত প্রথম বেড-কফিনগুলো দান করা হবে লেতিসিয়া শহরের হাসপাতালে।

পেরু, চিলি, মেক্সিকো, এমনকী আমেরিকার সম্ভাব্য ক্রেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করার কাজ সেরে ফেলছেন এই উদ্ভাবনাকারী। তবে রোগশয্যায় শুয়ে রোগী ভবিষ্যতের কফিনের কথা ভেবে কতটা স্বচ্ছন্দবোধ করবেন, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। সময়টিভি

ad

পাঠকের মতামত