324035

এ উট সবার দুয়ারে একদিন আসবেই, পালানোর উপায় নেই

ডেস্ক রিপোর্ট : যে মৃ’ত্যু আমাদের নিত্য মুহূর্তের সাথী সেই মৃ’ত্যুকে আমরা আমাদের স্মৃতি থেকে মুছে দেয়ার চেষ্টা করি । অথচ এ মৃ’ত্যুর কথা আমরা স্মরণ করি বা না-ই করি তা আমাদের সকলের দুয়ারে একদিন হানা দেবেই। আমরা নিজেদেরকে আপাততঃ ফাঁকি দিলেও মৃ’ত্যুকে ফাঁকি দেয়ার কোন জো নেই।

‘মৃ’ত্যু এবং পরকালের হিসেব নিকেশের স্মরণ একজন মানুষকে তার দায়িত্বানুভূতি জাগ্রত করে সমাজে গঠনমূলক ও উপকারী অনেক কাজের অবদান রাখতে অনুপ্রেরণা যোগায়। আজকে আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় যে সকল অন্যায় অবিচার ও পাপাচার বিদ্যমান তার মুলৎপাটনও ঘটাতে পারে উক্ত বিষয়ে স্মরণ। আর এ কথা ভেবেই মহাপুরুষদের জীবনী থেকে নির্বাচিত উপদেশবাণী সম্বলিত বিভিন্ন কাহিনী নিয়ে একটি পুস্তক রচনা করার চেষ্টা করেছি।

“ এ উট সবার দুয়ারে একদিন আসবে ”-এটি একটি ফারসী প্রবাদবাক্য। এর পেছনে একটি ঐতিহাসিক কাহিনী লুকায়িত আছে। ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) যখন তাঁর জন্মস্থান মক্কা নগরী ত্যাগ করে ইয়াসরেব তথা মদিনায় উপস্থিত হন তখন মদিনার জনগণ প্রত্যেকে নবীকে নিজের অতিথি হিসেবে পাবার জন্যে প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হয়। তারা কোন একক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে না পারলে মহানবী (সা.) নিজের উটকে ছেড়ে দিয়ে বললেন এ উট যে বাড়ির সামনে গিয়ে বিশ্রাম নেবে সে বাড়িতে তিনি মেহমান হবেন। শেষ পর্যন্ত তাই হয়েছিল। আর এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পারস্যের ফারসী ভাষায় গড়ে ওঠেছে উক্ত প্রবাদ বাক্যটি।

এ প্রবাদটিতে একটি গভীর অর্থ ও ব্যাখ্যা বিরাজমান। ফারসী ভাষীরা যখন কোন কিছুর আগমন কারো জন্যে অবধারিত ও নিশ্চিত বলে ধারনা করেন তখন উক্ত প্রবাদ বাক্যটি ব্যবহার করে থাকেন। প্রতিটি প্রাণীর জন্যে এ পৃথিবীতে জীবন জীবিকার একটা নির্দ্দিষ্ট সময়সীমা এটে দেয়া আছে। তাই স্বভাবতঃ মানুষেরও আয়ুষ্কাল সীমিত। এ পৃথিবী ছেড়ে তাকে পরপারে পাড়ি জমাতেই হবে। এর কোন বিকল্প নেই। মৃত্যু তার প্রতিনিয়ত সঙ্গী। এ কারণে পারস্যে যখন কেউ মৃ’ত্যুর এ অবধারিত ব্যবস্থাপনার ব্যাপারটি বোঝাতে চান তখন তিনি এ প্রবাদ বাক্যটি ব্যবহার করে থাকেন। এখানে মৃ’ত্যুকে ঐ উটের সাথে তুলনা করা হয়েছে যা এক সময় সবার দুয়ারে গিয়ে পৌছবে।

যে মৃ’ত্যু আমাদের নিত্য মুহূর্তের সাথী সেই মৃ’ত্যুকে আমরা আমাদের স্মৃতি থেকে মুছে দেয়ার চেষ্টা করি । অথচ এ মৃ’ত্যুর কথা আমরা স্মরণ করি বা না-ই করি তা আমাদের সকলের দুয়ারে একদিন হানা দেবেই। আমরা নিজেদেরকে আপাততঃ ফাঁকি দিলেও মৃ’ত্যুকে ফাঁ’কি দেয়ার কোন জো নেই।

মৃ’ত্যু এবং পরকালের হিসেব নিকেশের স্মরণ একজন মানুষকে তার দায়িত্বানুভূতি জাগ্রত করে সমাজে গঠনমূলক ও উপকারী অনেক কাজের অবদান রাখতে অনুপ্রেরণা যোগায়। আজকে আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় যে সকল অন্যায় অবিচার ও পাপাচার বিদ্যমান তার মুলৎপাটনও ঘটাতে পারে উক্ত বিষয়ে স্মরণ। আর এ কথা ভেবেই মহাপুরুষদের জীবনী থেকে নির্বাচিত উপদেশবাণী সম্বলিত বিভিন্ন কাহিনী নিয়ে একটি পুস্তক রচনা করার চেষ্টা করেছি। এখানে আত্ম উন্নয়নমূলক শিক্ষার বিষয়টিও প্রতিটি কাহিনী নির্বাচনে সাহায্য করেছে। পাঠক মহোদয়রা যেন অতি সহজে প্রতিটি কাহিনী থেকে গঠনমূলক শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন সেজন্যে প্রতিটি গল্পে কিছু লাইন বোল্ড করে দেয়া আছে। তারা অল্প পরিশ্রমেই গল্পের আসল শিক্ষা সেখান থেকে খুজে নিতে পারবেন। তাই এ বই পড়ে যদি কোন পাঠকের সামান্যতম গঠনমূলক কোন উপকারে আসে এবং তিনি নিজের সংশোধনে মানুষের জন্যে অবদান রেখে যেতে পারেন তাহলে আমি নিজেকে ধন্য মনে করবো।

ইবনুল-জাওযী (রহ:) তার আদাবুল-হাসান আল-বাসরিতে উল্লেখ করেছেন, ‘মৃ’ত্যু দুনিয়াকে তুচ্ছ প্রমাণ করে ছেড়েছে, কারো জন্য এখানে আনন্দ রাখেনি।’

মুসলিম হিসেবে জন্মগ্রহণ করার চেয়ে মুসলিম হিসেবে মৃ’ত্যুবরণ করতে পারাটাই অধিক গুরুত্বপূর্ণ।

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মৃ’ত্যুর আগে এই দুআ টি অধিকমাত্রায় পড়তেন, ‘সুবহানাল্লাহি অবিহামদিহী, আস্তাগফিরুল্লাহা অআতূবু ইলাইহ্।’ অর্থাৎ, আল্লাহর প্রশংসা সহ তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করছি। আল্লাহর কাছে ক্ষ’মা প্রার্থনা করছি ও তাঁর নিকট তওবাহ করছি। (মুসলিম)

ad

পাঠকের মতামত