318426

আগামী ৪০ দিনে নিয়ন্ত্রণে আসবে করোনা, ৬০ দিন পর থাকবেই না!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিশ্বকে ল’ণ্ডভ’ণ্ড করে দিয়ে করোনা ভাইরাস দৃশ্যত শ’ক্তি হা’রাতে শুরু করেছে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সং’ক্র’মিত দেশগুলোতে করোনার তা’ণ্ডব ইতোমধ্যেই চূড়ায় পৌঁছেছে। এখন সারাবিশ্বেই করোনার অদম্য গতিতে কিছুটা ছেদ পড়ছে। বিশ্বখ্যাত ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষক বলেছেন, আগামী ৪০ দিনের মধ্যেই বিশ্ব থেকে করোনা নামের ম’হাবি’পদ অনেকাংশেই কেটে যাবে এবং নতুন সং’ক্র’মণের সংখ্যা ‘নগণ্য’ হয়ে পড়বে। তখন মৃ’ত্যুও হবে সামান্যসংখ্যক মানুষের।

ক্যামব্রিজের রাজনৈতিক অর্থনীতির অধ্যাপক এবং ট্রিনিটি কলেজের ফেলো অলিভার লিন্টন এক গবেষণা নিবন্ধে করোনার গতিধা’রা বিশ্নেষণ করে এ আশার বাণী শুনিয়েছেন। তার দেওয়া পূ’র্বা’ভাসে দেখা যায়, ইতোমধ্যে বিশ্বে করোনার তা’ণ্ড’ব চূড়ায় পৌঁছে নিম্নমুখী হতে শুরু করেছে। তিনি বলেছেন, ‘করোনা মহামা’রির সমাপ্তি দৃষ্টিসীমার মধ্যে চলে এসেছে। এটা সবার জন্য সুখবর।’ অধ্যাপক লিন্টনের নিবন্ধটি ক্যামব্রিজের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

অধ্যাপক লিন্টন দেখিয়েছেন, করোনার চূড়া’ন্ত তা’ণ্ডবের দিনগুলোতে বিশ্বে দৈনিক ৮০ হাজারের বেশি লোক আক্রা’ন্ত হবেন আর মা’রা যাবেন ১০ হাজারের বেশি লোক। তবে সুখবর হচ্ছে, ১৮ এপ্রিলের আগেই সেই দুঃসময় কেটে গেছে। এখন বিশ্বে প্রতিদিনই সং’ক্র’মণ ও মৃ’ত্যু কমতে থাকবে। আগামী ২০ দিনের মধ্যে দৈনিক আক্রা’ন্তের সংখ্যা ৪০ হাজারের নিচে নেমে আসবে। ৩০ দিনের মাথায় দৈনিক আক্রা’ন্ত হবে ২০ হাজারেরও কম লোক। এভাবে ৪০ দিনের মাথায় পাঁচ-সাত হাজার এবং দুই মাস পর সং’ক্র’মণ কার্যত শূন্যে নামবে। এর মানে হচ্ছে দুই মাস পর বিশ্বে করোনার তা’ণ্ডব থাকবে না। সং’ক্র’মণের মতো মৃত্যুও একই হা’রে কমে আসবে।

বলা বাহুল্য অধ্যাপক লিন্টন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ নন। এই পূর্বা’ভাস দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি বলেছেন, চীনসহ বিভিন্ন দেশের করোনা রোগের তথ্য নিয়ে তিনি এটি তৈরি করেছেন। তবে করোনায় আক্রা’ন্ত ও মৃ’ত্যু নিয়ে বিভিন্ন দেশে প্রশ্ন উঠছে। ফলে এই পূর্বা’ভাস একেবারে নি’র্ভু’ল হওয়ার সম্ভাবনাও কম। তবে ইতোমধ্যেই তার পূর্বা’ভাস মিলতে শুরু করেছে। কোয়াড্রেটিক টাইম ট্রেন্ড মডেল অনুসরণ করে তিনি এই পূর্বাভাস দিয়েছেন।

অধ্যাপক লিন্টন বলেছেন, তার হিসাবে যুক্তরাজ্যে আক্রা’ন্ত হবে এক লাখ ৬০ হাজার মানুষ আর মা’রা যাবে ১৯ হাজার ৮০০ জন। যুক্তরাষ্ট্রে আক্রা’ন্ত হতে পারে ১০ লাখ লোক যাতে মৃ’ত্যু হতে পারে এক লাখ ১২ হাজার মানুষের। তার পূর্বা’ভাস হলো ইতালি, স্পেন ও যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই সং’ক্র’মণের চূড়া অতি’ক্রম করেছে।

চীনে করোনা সংক্রা’ন্ত উপা’ত্ত ও মহামা’রির সাধারণ তথ্য ব্যবহার করে এই পূর্বা’ভাস দিয়েছেন অধ্যাপক লিন্টন। তিনি বলেছেন, চীনের উহানে করোনার সং’ক্র’মণ শনা’ক্ত হয় ৩১ ডিসেম্বর আর সেখানে লকডাউন জারি করা হয় ২৩ জানুয়ারি। অর্থাৎ সং’ক্র’মণ শনা’ক্তের ২৪তম দিনে লকডাউন শুরু হয়। তাদের সং’ক্র’মণ চূড়ায় পৌঁছায় ৪২তম দিনে আর মৃ’ত্যু সর্বোচ্চ হয় ৫০তম দিনে। এই মডেল ব্যবহার করে তিনি এই পূর্বা’ভাস দিচ্ছেন। তবে সামাজিক দূরত্ব ও ভ্রমণ নিষে’ধা’জ্ঞার মতো বিষয়গুলো ত’ড়িঘ’ড়ি করে তুলে নিলে যে কোনো দেশে দ্বিতীয় দফায় আবার সং’ক্র’মণ শুরু হয়ে চূড়ায় পৌঁছাতে পারে বলেও তিনি সত’র্ক করে দিয়েছেন।

অধ্যাপক লিন্টন লিখেছেন, করোনার সং’ক্র’মণ কোনো দেশে চূড়ায় পৌঁছানোটা বড় বিষয় নয়, যদি তাদের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় আ’ক্রা’ন্তদের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়। তবে চূড়ায় পৌঁছানোর পর সং’ক্র’মণ কমতে থাকলে একপর্যায়ে আ’ক্রা’ন্তের সংখ্যা নগ’ণ্য হয়ে পড়বে। তাতে সামাজিক দূরত্ব র’ক্ষার মতো ক’ড়াক’ড়ি শিথিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজতর হয়।

বৈশ্বিক চিত্র কী বলছে : অধ্যাপক লিন্টনের পূর্বাভাস ইতোমধ্যেই মিলতে শুরু করেছে। তিন দিন ধ’রেই বিশ্বে সং’ক্র’মণ ও মৃ’ত্যু কমেছে। সং’ক্র’মণের দিক থেকে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে দুটি ছাড়া সবগুলো দেশেই প্রকোপ কমেছে। এর মধ্যে আটটি দেশই হয়তো চূড়া অতি’ক্রম করে নিম্নমুখী হচ্ছে অথবা অবস্থা অপরিবর্তনীয় (প্ল্যাটো) রয়েছে।

করোনা সং’ক্র’মণে শীর্ষ ১০ দেশ হচ্ছে- যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, চীন, তুরস্ক, ইরান ও রাশিয়া। গতকালই প্রথম আক্রা’ন্তের মোট সংখ্যায় ইরানকে পেছনে ফেলেছে তুরস্ক। দশ দেশের মধ্যে তুরস্ক ও রাশিয়ায় আক্রা’ন্ত ও মৃ’ত্যু এখনও ঊর্ধ্বমুখী। এদিকে, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনবহুল দেশ ভারতে আক্রা’ন্ত ও মৃ’ত্যুর সংখ্যা বাড়লেও তা ভ’য়ং’কর রূপ ধ’রেনি। ভারত সরকার বলেছে, মে মাসের প্রথম দিকে সেখানে সং’ক্র’মণ চূড়ায় পৌঁছাতে পারে।

করোনা ভাইরাসে আক্রা’ন্ত ও মৃ’ত্যুর সা’র্বক্ষ’ণিক হিসাব রাখা ওয়ার্ল্ডওমিটারের হিসাবে গতকাল রোববার রাত ১১টা পর্যন্ত বিশ্বে করোনা ভাইরাসে আক্রা’ন্তের সংখ্যা ছিল ২৪ লাখ ৭০ হাজার ৮৫০ জন। মৃ’ত্যু হয়েছে এক লাখ ৬৫ হাজার ৬৭৩ জনের। করোনায় আক্রা’ন্ত হয়ে ছয় লাখ ১২ হাজারের বেশি মানুষ সুস্থ হয়েছেন।

গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে করোনায় আক্রা’ন্ত হয়েছেন ৮১ হাজার ৩৩০ জন এবং মৃ’ত্যু হয়েছে ৬০০৪ জনের। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রা’ন্ত হন ৬২ হাজার ৬১ জন। মৃ’ত্যু হয়েছে ৭ হাজার ৪০০ জনের। করোনায় ইউরোপে আক্রা’ন্ত হয়েছেন ১১ লাখ ৫২ হাজারের বেশি মানুষ। মৃ’ত্যু হয়েছে এক লাখ ১ হাজারের বেশি লোকের। তথ্যসূত্র : ক্যামব্রিজ ওয়েবসাইট

ad

পাঠকের মতামত