315263

বাংলাদেশে ক.রোনাভাই.রাসের সংক্রমণ কম কেন, কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

নিউজ ডেস্ক।। প্রাণ.ঘাতী করো.নাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশেও। এখন পর্যন্ত ৬ জনের মৃ.ত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। আর এ পর্যন্ত দেশে আ.ক্রান্ত হয়েছেন ৫৪ জন। ঘনবসতি, স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের সক্ষমতার অভাব এবং সাধারণ মানুষের পরিচ্ছন্নতার অভ্যাসে ঘাটতি প্রভৃতি কারণে দেশে ক.রোনাভাই.রাসের ব্যাপক সংক্রমণের আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। বিশ্বের অনেক উন্নত দেশেও করো.নাভা.ইরাস ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়েছে। সেসব দেশের সঙ্গে স্পষ্ট কিছু পার্থক্য তৈরি হয়ে গিয়েছে বাংলাদেশের। বাংলাদেশে ক.রোনাভাই.রাসের সংক্রমণ কেন কম, বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে সে প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টা করেছে বিবিসি বাংলা।

ক.রোনাভাইরাস বাংলাদেশে ভিন্ন আচরণ করছে? : করো.নাভাইরাস প্রথম ছড়িয়ে পড়ে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে। গত বছরের ডিসেম্বরে ছড়িয়ে পড়া ভাই.রাসটিতে চীনে ৮২ হাজারের বেশি মানুষ আ.ক্রান্ত হয়েছেন। করো.নাভাইরাসে ইউরোপে সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত দেশগুলোর একটি ইতালি। জন্স হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যমতে জানুয়ারির শেষে ইতালিতে সংক্রমণ শুরুর পর ৫৯ দিনে এখনো পর্যন্ত সব মিলিয়ে এক লাখের বেশি মানুষ আ.ক্রান্ত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে ৬৭ দিনে দেড় লাখের বেশি মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। স্পেন, ইরান, যুক্তরাজ্যসহ করো.নাভাই.রাসে বেশি আ.ক্রান্ত দেশগুলোর প্রায় সবগুলো দেশেই ভাইরাসটি বৃদ্ধির হারের ক্ষেত্রে ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতিই দেখা গেছে।

বাংলাদেশে প্রথম যার শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় তিনি ইতালি থেকে আসা প্রবাসী। কিন্তু সেই ইতালি থেকে আসা ভাইরাস বাংলাদেশে কি ভিন্ন আচরণ করছে? এর সম্ভাব্য কী ধরনের কারণ থাকতে পারে? এ বিষয়য়ে ভাইরোলজিষ্ট অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলছেন, ‘বাংলাদেশের ডাটা অন্যদের সঙ্গে মেলে না কেন সে নিয়ে আমিও চিন্তা করছি। আমাদের এখানে ভাইরাসটি ইতালি থেকে এসেছে। সেটি ইতালিতে হ্যাভক তৈরি করলো আর আমাদের এখানে কিছুই করছে না এরকম একটা ব্যাপার। বিষয়টা আমিও বুঝতে পারছি না।’ তিনি বলেন, ‘তবে উহান থেকে যে ভাইরাসটির উৎপত্তি তা কিন্তু মিউটেশন হয়েছে। কিছু দেশে একই ধরনের সংক্রমণের প্যাটার্ন হয়েছে। আবার অন্য কোথাও একটু ভিন্ন। আমাদের ভাইরাসটি উহান থেকে আসেনি।’

এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘দেখুন, জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে অনেক দেশে কিন্তু একটা দেশেই, মাইক্রোকেফালি দেখা দিল। – সেটা ব্রাজিলে। তারপর একটা ভাইরাস মালয়েশিয়াতে তৈরি হয়েছে। সেটা হচ্ছে নিপাহ ভাইরাস। যেটা বাংলাদেশে ৯৯ সালের দিকে আসলো এবং বাংলাদেশেই ঘোরাফেরা করছে। ভাইরাসের চরিত্র যথেষ্ট গবেষণা না করে বলা কঠিন।’

ভাইরাস কাদের আক্রান্ত করে সেটিই বিবেচ্য জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যিনি ভাইরাসটি বহন করছেন তার কথাও বিবেচনা করতে হবে। সেটি ব্যাখ্যা করে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলছেন, ‘একটা ভাইরাস আছে সেটা আফ্রিকানদের যখন আক্রান্ত করে তখন তাদের এক ধরনের ক্যানসার হয়, একটা লিম্ফোমা হয়। আর সেই ভাইরাসটিই যখন চীনাদের ইনফেক্ট করে তখন তাদের নেজো-ফেরেঞ্জিয়াল কার্সিনোমা হয়। যারা ইনফেকটেড হয় তাদের জীনগত বিষয়টাও দেখতে হবে। একটা দেশের মানুষজনের জীনগত বৈশিষ্ট্যের উপরেও অনেক সময় রোগের প্রাদুর্ভাবের সম্পর্ক থাকে।’

জনসমাগম করোনা ছড়ানোর অন্যতম প্রধান মাধ্যম হলেও সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর বাড়িতে যাওয়ার ঢল পড়ে মানুষের
পরীক্ষা নিয়ে সন্দেহ : বাংলাদেশে করোনাভাইরাস শনাক্তে যথেষ্ট পরীক্ষা হচ্ছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। প্রচুর পরীক্ষা করে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণের আনার ব্যাপারে সফলতার জন্য প্রশংসিত হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া। সংক্রমণ শুরুর পর থেকে দক্ষিণ কোরিয়ায় সাড়ে তিন লাখের মতো মানুষকে করোনাভাইরাসের পরীক্ষা করা হয়েছে। বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্তের কথা জানানো হয় গত ৮ মার্চ। এরপর ১৮ই মার্চ প্রথম ব্যক্তির মৃত্যু সম্পর্কে তথ্য জানা যায়। পরবর্তী ২৩ দিনে দেশে মোট ১৭শ’র মতো ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষা করা হয় বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর।

সাধারণ অনেকের মতো করোনাভাইরাসের পরীক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষক, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ পরিচালিত হয় গোয়েন্দাদের দ্বারা। তারা জানে কীভাবে তথ্য লুকাতে হয়। পরীক্ষার দায়িত্ব একটা এজেন্সিকে দেওয়া হলো। দুই হাজার কিট থাকা সত্বেও তারা দুশো’টা ব্যবহার করতেই সময় নিয়েছে অনেক বেশি।’

আইইডিসিআরের হটলাইনে ফোন করে অনেকেই সঠিক পরামর্শ পাচ্ছেন না, কেউবা আবার কথাই বলতে পারছেন না- এমন অভিযোগ উঠেছে। জাফরুল্লাহ চৌধুরীও বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমার হাসপাতালে একটা রোগী এলো যার লক্ষণ দেখে করোনাভাইরাস মনে হচ্ছিল। আমি নিজে চার ঘণ্টা চেষ্টা করে যখন ফোনে পেলাম, তারা জিজ্ঞেস করলো উনি কি বিদেশ থেকে আসছে। না বলার পর তারা ফোন রেখে দিল। টেস্টই তো হচ্ছে না যথেষ্ট।’

তথ্যের ঘাটতি রয়েছে : আইইডিসিআরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, করোনা পরীক্ষায় দেশে পর্যাপ্ত কিট নেই। তবে কয়েকদিন আগে চীন থেকে অনুদান হিসেবে ৩০ হাজার কিট এসেছে। আবার শুরুতে সরকার বাংলাদেশে সকল বন্দরে বিদেশ ফেরতদের স্ক্রিনিংয়ের কথা জানালেও সেটা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। বিভিন্ন মহলের সমালোচনার মুখে গত ১৬ ই মার্চ দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ২৪ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়, তবে ২৬ মার্চ গণ-পরিবহন বন্ধ হওয়ার আগেই একসঙ্গে ঢাকা ছাড়েন লাখ লাখ মানুষ। জনসমাগম এড়িয়ে চলাকে ভাইরাসটি প্রতিরোধের অন্যতম উপায় বলা হচ্ছে। এতে করে নতুন আশঙ্কা তৈরি হয় করোনাভাইরাসটি আরও বেশি ছড়িয়ে পড়ার। ঢাকায় চলাচলে বিধি-নিষেধ আরোপের আগে করোনাভাইরাসে নিয়ে আতংক ছড়ানোর সময় থেকেই অনেকে মুখোশ পরে বাইরে বেরুচ্ছিলেন।

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেস-এর এপিডোমোলজি বিভাগের প্রধান ড. প্রদীপ কুমার সেন গুপ্ত বলছেন, বলেন, ‘এটা নতুন ভাইরাস। পশ্চিমা বিশ্বেও কিন্তু খুব বেশি তথ্য নেই। কিছু হাইপোথিসিস আছে, যেমন তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা একটা ফ্যাক্টর হতে পারে। কিন্তু এ সম্পর্কে কোন ভ্যালিড ডাটা নেই। তাই হাইপোথিসিসগুলোকে গ্রহণ বা নাকচ কোনটিই করতে পারছি না।’

বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারতে প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয় ৩০ জানুয়ারি। সেখানে এখনো পর্যন্ত দেড় হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। দেশটিতে ২১ দিনের লকডাউন জারি রয়েছে। যা ঘোষণা করার পর কোটি কোটি মানুষ একসঙ্গে শহর ছেড়েছেন। সেখানেও জনসংখ্যার অনুপাতে সংক্রমণ কম দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে শুরু থেকেই ব্যাপক সতর্কতার দাবি করে আসছে সরকার। পরীক্ষার পদ্ধতি ও যথেষ্ট পরীক্ষা হচ্ছে কিনা সেটা নিয়ে যে সন্দেহ তৈরি হয়েছে সে সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে বিবিসি বাংলার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

ad

পাঠকের মতামত