310275

আজ নায়করাজের জন্মদিন

বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা, বাংলার নায়করাজ রাজ্জাকের ৭৯তম জন্মদিন আজ। ১৯৪২ সালের এই দিনে ভারতের কলকাতার একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার পুরো নাম আবদুর রাজ্জাক। কলকাতার থিয়েটারে অভিনয় করার মাধ্যমে রাজ্জাক তার অভিনয় জীবন শুরু করেন।

১৯৫৯ সালে ভারতের মুম্বাইয়ের ফিল্মালয়ে সিনেমার ওপর পড়াশোনা ও ডিপ্লোমা গ্রহণ করেন। কলকাতায় ফিরে ‘শিলালিপি’ ও আরও একটি সিনেমায় অভিনয় করেন। ১৯৬৪ সালে কলকাতায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কবলে পড়ে রাজ্জাক তার পরিবার-পরিজন নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন।

রাজ্জাক আছেন সবার অন্তরে

ফারুক

রাজ্জাক ভাই আমার খুব কাছের মানুষ ছিলেন। সব সময় বড় ভাই হিসেবে জেনেছি। বিপদ-আপদে সব সময় তাকে পাশে পেতাম। এটা ভীষণ সত্যি যে, বাংলা সিনেমার ইতিহাসে তিনি এমনভাবে জড়িয়ে আছেন যে, তাকে ছাড়া বাংলা সিনেমা কল্পনাই করা যায় না। একজন নায়করাজ রাজ্জাক আমাদের চলচ্চিত্রের অহঙ্কার। আমি আর রাজ্জাক ভাই খুব কাছাকাছি সময়ে চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেছিলাম। স্বাভাবিকভাবে সবার ধারণা, আমাদের মধ্যে একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সম্পর্ক ছিল।

কিন্তু সেটি ছাপিয়ে আমাদের মধ্যে একটা দারুণ আন্তরিকতাপূর্ণ ও ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছিল। আমাদের সম্পর্ক ছিল অম্লমধুর। রাজ্জাক ভাইয়ের সঙ্গে প্রথম পরিচয় এফডিসিতে। তখন এফডিসিতে যেতে আমি খুব ভয় পেতাম। রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম। আমার এক বন্ধু চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছিল। ছবির নাম আর মনে নেই। রাজ্জাক ভাই ওই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। কিন্তু ছবিটি নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। তখন আমিসহ কয়েকজন গিয়েছিলাম ঝামেলা মেটাতে।

কবরী

তার কর্মের মধ্যে আমরা তাকে পাই। স্মৃতির মধ্যে আমরা তাকে পাই। রাজ্জাক সাহেবের সঙ্গে আমার সবচেয়ে বেশি ব্যবসায় সফল চলচ্চিত্র। সহকর্মী হিসেবে তিনি খুব উদার মনের মানুষ ছিলেন। ব্যক্তিজীবনেও তিনি একজন ভালো মানুষ ছিলেন। তিনি আমাদের চলচ্চিত্রের গর্ব। এ দেশের চলচ্চিত্রে তার অসংখ্য অবদান রয়েছে, যা প্রজন্মের পর প্রজন্মের কাছে শিক্ষণীয় বিষয় হয়ে রবে। দিন, তারিখ, মাস, বছর কোনোটাই মনে নেই। শুধু মনে আছে, গাজী মাজহারুল আনোয়ারের যোগাযোগ ছবির মাধ্যমে রাজ্জাকের সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয়। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, শেষ পর্যন্ত ছবিটি আর তৈরি হয়নি।

এই ছবির জন্য কথা বলতে গিয়ে গাজী মাজহারুল আনোয়ারের সঙ্গেও পরিচয় হয়। এরপর তার বাসায় রাজ্জাক সাহেবের সঙ্গে অনেক গল্প হয়। একটা পরিকল্পনাও হয়। তখনো আমি তার সঙ্গে কোনো ছবিতে অভিনয় করিনি। তবে যোগাযোগ ছবি নিয়ে আলাপ করতে করতে আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কও তৈরি হয়ে যায়। ‘ময়নামতি’র পর আমাদের নিয়ে হইচই শুরু হয়ে যায়।

আলমগীর

নায়করাজ রাজ্জাক ছিলেন পরিশ্রমী মানুষ। নিজের অভিনয়সত্তা দিয়ে তিনি সফল নায়কে নিজেকে পরিণত করতে পেরেছিলেন। এ জন্য সবাই তাকে নায়করাজ উপাধিতে ভূষিত করতে বাধ্য হয়েছিলেন। রাজ্জাক ভাই মনে-প্রাণে একজন শিল্পী ছিলেন। তিনি ছিলেন সত্যিকারের কিংবদন্তি- এটি অস্বীকার করার উপায় নেই। নায়ক হিসেবে আমাদের চলচ্চিত্রকে দর্শকের কাছে তিনিই জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন। এ দেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে তিনি বিশাল একটি স্থান দখল করে আছেন। এটিই স্বাভাবিক।

রাজ্জাক ভাইয়ের প্রতিভা, পরিশ্রম ও ভাগ্য চলচ্চিত্রে এতটাই সহায় ছিল যে, তাকে কখনো পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। আমাদের প্রিয় রাজ্জাক ভাইয়ের আজ জন্মদিন। এদিনটি আমার কাছে একটু আলাদাভাবে স্মরণ করিয়ে দেয়। কারণ রাজ্জাক ভাইয়ের এক জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মায়ের মৃত্যু সংবাদ পাই। তাই দিনটি আমার কাছে সব সময়ই স্মরণীয়। রাজ্জাক ভাইকে আমি আপন ভাই-ই মনে করি।

ববিতা

রাজ্জাক ভাই তো একটা ইনস্টিটিউশন। তার হাত ধরেই তো চলচ্চিত্রে আসা। ওনার কাছ থেকেই আমি সব শিখেছি। রাজ্জাক ভাই চলচ্চিত্রে আসেন জহির রায়হানের হাত ধরে। আমিও চলচ্চিত্রে আসি জহির ভাইয়ের সিনেমার মাধ্যমেই। প্রথম চলচ্চিত্র ‘সংসার’-এ রাজ্জাক ভাই ছিলেন আমার বাবা। আর সুচন্দা আপু ছিলেন আমার মা চরিত্রে। এরপরের চলচ্চিত্র ‘শেষ পর্যন্ত’ সিনেমায় আমি ছিলাম রাজ্জাক ভাইয়ের নায়িকা। তাই রাজ্জাক ভাই ছিলেন আমার অভিভাবক। তিনি ছিলেন সব সময় ছায়া হিসেবে।

আমার দীর্ঘ অভিনয় জীবনের একটা পিলারের নাম রাজ্জাক। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে রাজ্জাক যেমন একটি উজ্জ্বলতম নক্ষত্র, আমার জীবনেও রাজ্জাক ভাই তেমন। ছিলেন সবচেয়ে প্রিয় অভিভাবক। আমার কাজ নিয়ে সব সময় দিকনির্দেশনা দিতেন নায়করাজ রাজ্জাক। রাজ্জাক ভাইয়ের নিজ প্রডাকশন হাউস রাজলক্ষ্মীর বেশিরভাগ ছবির নায়িকা আমি। এটা নিয়ে আমি গর্ববোধ করি।

ad

পাঠকের মতামত