309815

ছত্রাক দিয়ে বাড়ি বানানো হবে চাঁদ-মঙ্গলে : নাসা

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ ধীরে ধীরে বাঁচার রসদ ফুরিয়ে আসছে পৃথিবীতে। অনেক বিজ্ঞানী বলছেন, কয়েক শতকের মধ্যেই হয়তো পৃথিবী থেকে পাত্তারি গোটাতে হবে মানুষকে। নতুন সভ্যতা গড়ে তুলতে হবে চাঁদে, মঙ্গলে অথবা আরও দূর কোনও গ্রহে।

কিন্তু, ভিন গ্রহের সেই বাড়ি কেমন হবে তা কখনও ভেবে দেখেছেন?

কল্পবিজ্ঞানের গল্প-সিনেমায় দেখা যায়, ভিনগ্রহে মানুষ থাকে কাঁচ বা ধাতুর তৈরি গম্বুজ বা অন্য আকারের বাড়িতে। তবে নাসা বলছে কাঁচ বা ধাতু দিয়ে নয়, চাঁদ-মঙ্গলে মানুষের ভবিষ্যতের বাড়ি তৈরি হবে ব্যাঙের ছাতার মতো ছত্রাক দিয়ে।

বলা ভাল, মাটির নীচে থাকা ছত্রাকের যে অংশটিকে আমরা দেখতে পাই না সাধারণত, মূলত সেই ‘মাইসেলিয়া’ দিয়ে। আদতে যেটা ছত্রাকের মূল অংশ।

ক্যালিফোর্নিয়ার সিলিকন ভ্যালিতে নাসার এমস রিসার্চ সেন্টারে ‘মাইকো-আর্কিটেকচার প্রজেক্টে’র প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর লিন রথ্‌সচাইল্ড ‘আনন্দবাজার ডিজিটাল’কে রবিবার ই-মেলে এ কথা জানিয়েছেন।

এও জানিয়েছেন, চাঁদ আর মঙ্গলে আমাদের নতুন বসতির সেই সব ঘরবাড়িতে আমরা একাই থাকব না। থাকবে অন্য জীবও। এখন যেমন ফ্ল্যাটে, বাড়িতে মাছের অ্যাকোয়ারিয়াম থাকে, চাঁদ-মঙ্গলে আমাদের ঘরবাড়িতেও তেমনই রাখা থাকবে নানা ধরনের অণুজীব।

কী না পারে ছত্রাকের মাইসেলিয়া! দু’সপ্তাহের মধ্যেই বানিয়ে ফেলেছে বসার ছোট টুল। ছবি: সংগৃহীত
যারা বাঁচার প্রয়োজনে শুষে নেয় সৌরশক্তি। আর তা দিয়ে জল ও বিষাক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসকে বদলে দেয় অক্সিজেনে। কার্যত বায়ুমণ্ডলহীন চাঁদ, মঙ্গলে আমাদের শ্বাসের বাতাস হয়ে উঠবে সেই অক্সিজেনই।

জল ও বিষাক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসকে ভেঙে সেই অণুজীবরা বানাতে পারে আরও কিছু পদার্থ। যা খেয়েদেয়ে তারা বেঁচে থাকবে। তাই এদের ‘সায়ানোব্যাকটেরিয়া’ও বলা হয়।

কল্পবিজ্ঞানের ছবির ধাঁচে হবে না বাড়িগুলি

চাঁদ, মঙ্গলে আমাদের সভ্যতার নতুন বসতি কেমন হবে, তা নিয়ে কল্পবিজ্ঞান ও তার ভিত্তিতে বানানো ফিল্মগুলিতে যে ছবি আঁকা হয়, সেখানকার ‘শহর’গুলি মোটেই তেমন ধাতব হবে না। একটি বালির পাহাড় থেকে অন্য বালির পাহাড়ে পাখির মতো উড়ে যাবে না গাড়িঘোড়াও।

পৃথিবীতে ধাতুর ব্যবহারই সভ্যতার রথের চাকাকে তড়তড়িয়ে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। কিন্তু পৃথিবীর বাইরে আমাদের বসতি বানাতে ধাতুর ব্যবহার যতটা কম করা যায়, সে কথা মাথায় রেখেই কাজ শুরু করে দিয়েছে নাসা। আর তার জন্যই শুরু হয়েছে ছত্রাক নিয়ে কাজ। যা চাঁদ, মঙ্গলকেও করে তুলবে ‘সবুজ থেকে সবুজতর’!

কল্পবিজ্ঞানের ছবির সঙ্গে মিলবে না কেন?

‘মাইকো-আর্কিটেকচার প্রজেক্টে’র অন্যতম বিজ্ঞানী, নাসার সদর দফতরে ‘পাথফাইন্ডার মিশন’-এর সদস্য অমিতাভ ঘোষ বলেছেন, ‘‘সভ্যতার ওই নতুন বসতি বানাতে আমাদের গবেষণা একেবারেই অভিনব পথে এগচ্ছে। এর আগে চাঁদে, মঙ্গলে আমাদের বসতি বানানোর কথা অন্য ভাবে ভাবা হয়েছিল। কচ্ছপের মতো। কচ্ছপ যেমন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পিঠে করে নিয়ে যায় তার আস্তানা গড়ার মালমশলা, এমনকী, খোদ আস্তানাটাকেই নিয়ে যায় পিঠে চাপিয়ে, এত দিন আমরা তেমন ভাবেই ভেবেছিলাম চাঁদে আর মঙ্গলে আমাদের বসতি বানানোর জন্য। কিন্তু মুড়ে নিলেও সেই ভারী বসতিকে পিঠে চাপিয়ে চাঁদ বা মঙ্গলে পৌঁছনোর জন্য অতটা দূরত্ব পাড়ি দিতে হলে বিপুল পরিমাণে শক্তির প্রয়োজন। তাতে জ্বালানির খরচ তো বাড়েই, বাড়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও। জ্বালানি যতটা সম্ভব কম খরচ করাটাই তো এখন সকলের লক্ষ্য।’’

চাঁদ, মঙ্গলের ঘরবাড়িগুলি হবে কত তলার?

রথ্‌সচাইল্ড ও অমিতাভ জানাচ্ছেন, একেবারে গম্বুজের মতো। বলা যায়, তার তিনটি তলা বা স্তর থাকবে। গম্বুজের মাথাটা দেখা যাবে চাঁদ বা মঙ্গলের পিঠে। জমাট বাঁধা ওয়াটার আইস দিয়ে। যা সেই মুলুকের অন্দরে লুকনো (‘ট্র্যাপ্‌ড’) রয়েছে। সেই ওয়াটার আইস অসম্ভব ক্ষতিকারক তীব্র বিকিরণের হাত থেকে আমাদের বসতিগুলিকে বাঁচাবে। আর সেই জলই নীচে গড়িয়ে পড়ে পৌঁছে যাবে আমাদের বসতির দ্বিতীয় তলা বা স্তরে থাকা ছত্রাক ও অণুজীবগুলির কাছে। যাতে সৌরশক্তি দিয়ে সেই জলকে ভেঙে তারা তাদের প্রয়োজনীয় খাবারদাবার পেতে পারে। আবার আমাদের বেঁচে থাকার জন্য ছাড়তে পারবে অক্সিজেনও। পরিবশকে বিষমুক্ত করতে ওই জলের সাহায্যেই কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসকে ভেঙে দিতে পারবে। পারবে তারও নীচের স্তর বা তলায় থাকা ছত্রাকের মাইসেলিয়াকে টিঁকে থাকার রসদ জোগাতে।

তথসুত্র: নাসা।

ad

পাঠকের মতামত