308520

সৌম্যর সাথে সাব্বির তাল মেলাতে পারলেই হয়তো কাহিনীটা ভিন্ন হতো

‘কি বলবো বলুন? আমাদের দলে (কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স) দেশের কজন ভাল ও নামি পারফরমার আছে। তারা ভাল খেললে নিজেদের কাজগুলো ঠিকমতো করতে পারলে কোন কথাই থাকতো না। কিন্তু তা আর হচ্ছে কই? কেউই নিজেকে মেলে ধরতে পারছেন না সেভাবে। তাই আমরা ভাল দল গড়েও কাঙ্খিত সাফল্য পাচ্ছি না।’-কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সের টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর আক্ষেপ।

ঠিক অভিযোগ নয়। অপ্রাপ্তি, অতৃপ্তি আর হতাশা থেকেই আজ শনিবার সকালে এ প্রতিবেদকের সাথে ব্যক্তিগত আলাপে ওপরের কথাগুলো বলেছিলেন মিনহাজুল আবেদিন নান্নু। হয়তো টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজারের কথা শুনে থাকবেন সৌম্য সরকার।

শনিবার রাজশাহীর বিপক্ষে চার নম্বরে নেমে ৪৮ বলে ৮৮ রানের ঝড়ো এক ইনিংস খেলেছেন সৌম্য। বিপিএলে এটা তার সবচেয়ে বড় ইনিংস। চার বছর পর প্রথম ফিফটিও। কিন্তু এমন ইনিংসে সৌম্যর টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারটাই যা সমৃদ্ধ হয়েছে, দলের লাভ হয়নি। ১৯১ রানের পিছু ধেয়ে সৌম্যর দল হেরেছে ১৫ রানে।

সৌম্য শেষ পর্যন্ত ম্যাচের সবচেয়ে ঝড়ো ইনিংসটিই উপহার দিয়েছেন। তার স্ট্রইকরেট ছিল ১৮৩.৩৩। কিন্তু লাভ হয়নি। কারণ একটাই-তাকে অন্যরা সেভাবে সাহায্য করতে পারেননি। সবচেয়ে বড় কথা, ২০ ওভারে ১৯১ রানের লক্ষ্যে পৌঁছাতে যেমন হাত খুলে ও বেশি স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করা খুব দরকার, তা পারেননি অন্যরা।

সবচেয়ে সর্বনাশ করে গেছেন তিনজন। ওপেনার রবিউল ইসলাম (১৫ বলে ১২), দক্ষিণ আফ্রিকান স্টিয়ার ভ্যান জিল (২৩ বলে ২১) ও সাব্বির রহমান রুম্মন (২৩ বলে ২৫)। শেষ মুহূর্তে ডেভিড উইজ (দুই বিশাল ছক্কায় ৬ বলে ১৬*) ছাড়া আর কেউ হাত খুলে সময়ের দাবি মেটাতে না পারায় হার এড়ানো সম্ভব হয়নি কুমিল্লার। এর মধ্যে দেশের ক্রিকেটে হার্ড ও ক্লিন হিটার বলে যার রয়েছে পরিচিতি, সেই সাব্বিরের ব্যাটিং রীতিমত হতাশ করেছে সমর্থক ও অনুরাগীদের।

যখন ১৫০+ স্ট্রাইকরেট প্রয়োজন, ঠিক তখন সাব্বির ১১০ স্ট্রাইকরেটের নিচে ব্যাট করেছেন। আউটও হয়েছেন বাজেভাবে। পাকিস্তানি পেসার ইরফানের বলে পুল খেলতে গিয়ে আকাশে ক্যাচ তুলে ফিরে এসেছেন। বল তার শরীরের খুব কাছে ছিল। পুল খেলার জন্য ঠিক আদর্শ ডেলিভারি ছিল না। তারপরও জোর করে পুল খেলতে গিয়ে মিড উইকেটে ক্যাচ তুলে ফেরত আসেন সাব্বির।

সৌম্য-সাব্বিরের সামনে সুযোগ ছিল দুই বিদেশি-শোয়েব মালিক ও আন্দ্রে রাসেলকে ম্লান করে হিরো হবার। পুরো ম্যাচের চালচিত্র যেমনই থাকুক না কেন, প্রথম সেশনে দুই ভিনদেশি শোয়েব মালিক আর আন্দ্রে রাসেলের ঝড়ো উইলোবাজিই গড়ে দিল পার্থক্য। তারা চতুর্থ উইকেটে রাজশাহীকে তুলে দিয়েছেন ৪২ বলে ৮৪ রান।

আর ঠিক একই অবস্থায় কুমিল্লার চতুর্থ উইকেটে দুই স্থানীয় পারফরমার সৌম্য সরকার ও সাব্বির রহমান ৫২ রান করলেন ৪৫ বলে। যাতে সাব্বিরের অবদান ১০৮.৬৯ স্ট্রাইকরেটে ২৩ বলে ২৫।

ডেভিড উইজ শেষ দিকে নেমে যে ঝড়ের গতিতে দু দুটি ছক্কা হাঁকালেন, তা দেখে অনেকেরই প্রশ্ন-সাব্বিরের আগে কেন এ দক্ষিণ আফ্রিকানকে নামানো হলো না? সাব্বির যে ২৫ বল খেলে ১০৮.৬৯ স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করেছেন, সেখানে ডেভিড উইজ খেলেছেন ২৬৬.৬৬ স্ট্রাইকরেটে। প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক।

রাজশাহী অধিনায়ক আন্দ্রে রাসেলের করা শেষ ওভারে ৩৫ রান দরকার থাকা অবস্থায় সৌম্য সরকার এক বাউন্ডারি ও দুই ছক্কায় ১৮ রান তুললেও বাকি দুই ডেলিভারি থেকে এক রান আসায় সব মিলে উঠলো ১৯। তাতেই ১৫ রানের হার কুমিল্লার।

এর আগে দুপুরে আফিফ হোসেন ধ্রুব আর লিটন দাসের চোখ জুড়ানো সূচনা আর তারপর শোয়েব মালিক ও আন্দ্রে রাসেলের প্রায় ২০০ স্ট্রাইকরেটের ব্যাটিংয়ে শেষ ৬২ বলে ১১০ রান পায় রাজশাহী।

শোয়েব মালিক তিন নম্বরে ৩৮ বলে ৬১ রানের এক ঝড়ো ইনিংস উপহার দেন। আর অধিনায়ক আন্দ্রে রাসেলের ব্যাট থেকে আসে ২১ বলে ৩৭ রানের এক আক্রমণাত্মক ইনিংস। মূলত এই জুটি হাত খুলে খেলায় রাজশাহীর রান গিয়ে ঠেকে ১৯০‘তে।

জবাবে সৌম্য সরকার ১৮৩.৩৩ স্ট্রাইকরেটে ৮৮ রানের দারুণ ইনিংস খেলে নট আউট থাকলেও টপ ও মিডল অর্ডারে আর কেউ হাত খুলে সময়ের দাবি মেটাতে না পারায় হার মেনেই মাঠ ছাড়তে হয় কুমিল্লাকে।

ad

পাঠকের মতামত