307369

ভারতে গণহ’ত্যার প্রস্তুতি চলছে : জেনোসাইড ওয়াচ

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ ‘ভারতে গণহ’ত্যার প্রস্তুতি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আসাম এবং কাশ্মীরে মুসলিমদের বিরুদ্ধে নিপীড়ন গণহ’ত্যার আগের পর্যায়ে রয়েছে। এর পরের পর্ব হলো নির্মূলকরণ- আমরা যেটাকে গণহ’ত্যা বলে থাকি।’

গণহ’ত্যা প্রতিরোধ ও বন্ধে আন্তর্জাতিক সংস্থা জেনোসাইড ওয়াচের প্রতিষ্ঠাতা যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা ড. গ্রেগরি স্ট্যানটন এসব কথা বলেছেন। বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত মার্কিন কংগ্রেসের সদস্য ও দেশটির সরকারি কর্মকর্তাদের এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ভারতের চলমান অস্থিরতা নিয়ে আলোচনা করেন তিনি।

মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে কর্মরত অবস্থায় ১৯৯৬ সালে গণহ’ত্যার ওপর একটি উপস্থাপনা তৈরি করেন তিনি। এই উপস্থাপনার পর বিশ্বজুড়ে ব্যাপক খ্যাতি পান ড. গ্রেগরি স্ট্যানটন। ‘গণহ’ত্যার দশ ধাপ’ নামের এ উপস্থাপনায় ড. স্ট্যান্টন কীভাবে একটি জনগোষ্ঠীর ওপর ব্যাপক পরিকল্পিত উপায়ে গণহ’ত্যার নীলনকশা বাস্তবায়ন করা হয়; সেটি দেখান।

এই গণহ’ত্যার মঞ্চ তৈরি ও কৌশল এবং টার্গেট জনগোষ্ঠীকে কীভাবে সমাজের কাছে হিংস্র হিসেবে উপস্থাপন করা হয়, অনুষ্ঠানে সেটিও তুলে ধরেন স্ট্যান্টন।

>>আন্তর্জাতিক এই বিশেষজ্ঞের মতে গণহ’ত্যার দশ ধাপ

প্রথম ধাপ : সমাজে বিভাজন তৈরি করা। এই বিভাজন ‘আমরা’ বনাম ‘তারা’।

দ্বিতীয় ধাপ : একটি প্রতীক দাঁড় করানো, ভূক্তভোগীদের ‘বিদেশি’ হিসেবে ডাকা।

তৃতীয় ধাপ : বৈষম্য। একটি শ্রেণিকে নাগরিকত্বের বাইরে রাখা। বৈষ্যমের আইনী বৈধতা তৈরি করা; যাতে ওই শ্রেণির মানুষের কোন নাগরিক বা মানবিক অধিকার না থাকে।

চতুর্থ ধাপ : অমানবিকীকরণ করা; যখন গণহ’ত্যার বিষয়টি অগ্রসর হতে থাকে। যেকোনো ভাবে ভিকটিমকে নিকৃষ্ট হিসেবে তুলে ধরা। তাদেরকে সন্ত্রাসী কিংবা অন্য কোনো জন্তুর সঙ্গে তুলনা করা। অথবা ক্যান্সারের মতো রোগের সঙ্গে টার্গেট জনগোষ্ঠীকে তুলনা করা; যাতে তাদেরকে সমাজের কাছে বালাই হিসেবে উপস্থাপন করা যায় এবং এর চিকিৎসা জরুরি।

পঞ্চম ধাপ : গণহ’ত্যা সংঘটনের জন্য একটি সংস্থা তৈরি করা। কাশ্মীরে এই ভূমিকা পালন করেছে ইন্ডিয়ান আর্মি। অন্যদিক আসামে এনআরসি বাস্তবায়নকারীরা।

ষষ্ঠ ধাপ : মেরুকরণ; যা প্রচারণার মাধ্যমে করা হয়।

সপ্তম ধাপ : প্রস্তুতি।

অষ্টম ধাপ : নিপীড়ন। বর্তমানে আসাম এবং কাশ্মীর এই ধাপে রয়েছে।

নবম ধাপ : নির্মূলকরণ।

দশম ধাপ : অস্বীকার করা।

মার্কিন প্রখ্যাত এই মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্রস্তাবনা তৈরি করেছিলেন। তার এই প্রস্তাবনার ওপর ভিত্তি করে রুয়ান্ডা এবং বুরুন্ডিতে গণহ’ত্যার তদন্তে একটি কমিশন গঠন করেছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। কম্বোডিয়া, রুয়ান্ডা ও রোহিঙ্গা গণহ’ত্যা নিয়েও তার গবেষণা রয়েছে; যা বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত।

সিটিজেনস ফর জাস্টিস অ্যান্ড পিসের সেক্রেটারি ও মানবাধিকার কর্মী তিস্তা সেটালভাদও মার্কিন কংগ্রেস কর্মকর্তাদের ওই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিয়েছেন। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি বলেন, আসামে মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত করার জন্য জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকাকে (এনআরসি) ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি বাস্তবায়নের জন্য নির্ধারিত কিছু বিধি-বিধান এবং মান নির্ধারণকারী প্রক্রিয়া রয়েছে; কিন্তু সেসবের কিছুই মানা হয়নি। আমরা সংবিধানের নীতিমালার আলোকে এটি বাস্তবায়ন করার আহ্বান জানিয়েছি।

ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের সমালোচনা করে মানবাধিকার কর্মী তিস্তা সেটালভাদ বলেন, এটা দেশজুড়ে মানুষের মাঝে প্রচুর দুর্ভোগ তৈরি করবে। এটা ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের বৈশিষ্ঠকে মৌলিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করবে। যে কারণে সচেতন সব নাগরিক সংবিধানের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা না করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন ঘিরে ভারতে চলমান সহিংসতা, জম্মু-কাশ্মীরের অচলাবস্থা, মুসলিম নিপীড়নের ঘটনায় ওয়াশিংটন ডিসিতে কংগ্রেস সদস্য ও মার্কিন কর্মকর্তাদের নিয়ে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল দেশটিতে বসবাসরত ভারতীয় মুসলিম-হিন্দুদের তিনটি সংগঠন। এই তিন বেসরকারি সংগঠন হলো, ইন্ডিয়ান আমেরিকান মুসলিম কাউন্সিল (আইএএমসি), এমগেইজ অ্যাকশন ও হিন্দুস ফর হিউম্যান রাইটস (এইচএফএইচআর)।

সূত্র : সিয়াসাত।

ad

পাঠকের মতামত