306374

দুই যুগ বিনা বেতনে শিক্ষকতা করছেন রহিমা !

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার জাবরকাকোল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক রহিমা খাতুন। প্রায় ২ যুগ ধরে নিরবিচ্ছিন্ন শিক্ষকতা করেও শিক্ষক গেজেটে নাম নেই রহিমা খাতুনের। সহকর্মীরা জাতিকরণের আওতায় এলেও বাদ পড়েছেন রহিমা খাতুন।

তবে এর জন্য নিজের অজ্ঞতা ও স্বামীর খামখেয়ালিকেই দায়ী করছেন রহিমা। বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জাবরকোল গ্রামটি বালিয়াকান্দি সদর ইউনিয়নের মধ্যে অবস্থিত হলেও ২ কিলোমিটারের মধ্যে কোন বিদ্যালয় ছিল না। ১৯৯৬ সালে সালে জাবরকোল বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই সহকারি শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা করে আসছেন রহিমা খাতুন ও তার স্বামী। যোগদানের পর থেকেই বিনা বেতনে এলাকার শিশুদের শিক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে নিরলসভাবে বিদ্যালয়ে পাঠদান করছেন।

২০১৩ সালে বিদ্যালয় জাতীয়করণের জন্য উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটি বিদ্যালয়টি জাতীয়করণের জন্য নাম প্রস্তাব করে। সেখানে শিক্ষক সংক্রান্ত তথ্যেও নিয়ম অনুযায়ী রহিমা খাতুন ও তার স্বামীসহ ৫ জনের নাম কর্মরত শিক্ষক হিসেবে দেখানো হয়। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষক সংখ্যা এবং শিক্ষকদের বয়স সংক্রান্ত একটি নীতিমালা জারী করে। ওই নীতিমালায় রহিমা খাতুনের স্বামী ফেরদৌস রহমান বাদ পড়েন শিক্ষক তালিকা থেকে।

এ কারণেই ফেরদৌস তার স্ত্রীকে চাপ দেন বিদ্যালয়ের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর না করতে। পরে তিনি তার স্বামীর চাপে স্বামীসহ আলাদাভাবে পৃথক হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন। ২০১৮ সালে ৩য় ধাপে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হয়। গত ৭ অক্টোবর শিক্ষক গেজেটে রহিমা খাতুন বাদে ৩জন শিক্ষকের নামে অফিস আদেশ হয়।

এ বিষয়ে রহিমা খাতুন বলেন, আমার স্বামীর অজ্ঞতায় আজ শিক্ষক গেজেটে আমার নাম নেই। তবে আমি তো নিয়মিত স্কুলে ছিলাম। বিনা বেতনে আজ ২৪ বছর শিক্ষকতা করছি। বয়সের বাধায় আমার স্বামী অনেক আগেই শিক্ষক তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। সেই ক্ষোভে তিনি আমাকে বিদ্যালয়ের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে দেননি।

রহিমা বলেন, তবে বিদ্যালয়ে যাতায়াত কিংবা ক্লাসে কোন বাধা দেননি তিনি। আমার ধারণা ওই ভুলেই জাতীয়করণকৃত বিদ্যালয়ের শিক্ষক গেজেট থেকে নাম বাদ পড়ে আমার। ২৪ বছর শিক্ষকতা করছি। এর মধ্যে বেতন না পেয়ে অনেক শিক্ষক চলে গেছে। প্রতিষ্ঠানটি থেকে কোন আর্থিক সুবিধা না পেলেও এলাকার কোমলমতি শিশুদের শিক্ষাদানে নিরবিচ্ছিন্ন ছিলাম।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) দিপ্তী রায় বলেন, স্কুলে আমিসহ আরো ২জন শিক্ষকের চাকরি জাতীয়করণ হয়েছে। তবে রহিমা বেগমের হয়নি। তিনি নিয়মিত স্কুলে আসতেন কিন্তু বিদ্যালয়ের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতেন না।

সজিব, রিহাদ, ইভা, খাদিজা নামের স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা জানায়, স্কুলে ভর্তির সময় থেকেই দেখছি আমাদের রহিমা বেগম ম্যাডাম আমাদের ক্লাস নেন। স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দাও জানান যে, রহিমা বেগম নিয়মিত স্কুলে আসেন। তাই মানবিক কারণে হলেও তার বিষয়টি বিবেচনায় আসা উচিত।

এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ আশরাফুল হক বলেন, আমি যাচাই-বাছাইয়ের সময় এখানে ছিলাম না। তবে স্থানীয়ভাবে ও বিভিন্ন সূত্র থেকে জানতে পেরেছি রহিমা খাতুন নিয়মিত স্কুলে আসতেন। তিনি তার স্বামীর সাথে ভিন্ন প্যানেলে থাকায় শিক্ষক গেজেট থেকে বাদ পড়েছেন। এটা তারই ভুল। তবে রহিমা খাতুন উর্দ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করতে পারেন। আমি তার আবেদন ফরওর্য়াডিং করে পাঠাবো, তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন রহিমা খাতুনের বিষয়ে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হোসনে ইয়াসমিন করিমী বলেন, রহিমার নিজের ভুলেই আজ এই ঘটনাটি ঘটেছে। তিনি নিয়মিত স্কুল করলেও বিদ্যালয়ের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতেন না। আমরা বিভিন্ন সময় তাকে অনুরোধ করেছি মূল শিক্ষকদের সাথে তথ্য প্রদানের জন্য কিন্তু সে কথা মানেন নাই। উপজেলা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে বিয়ষটি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারেন তিনি। তারা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।

ad

পাঠকের মতামত