306063

রাজাপুরে ইমামের ইজ্জত হরণের ব্যর্থ চেষ্টা

ঝালকাঠির রাজাপুরে মিথ্যা অভিযোগে মামলা দিয়ে একের পর এক মানুষ হয়রানির অভিযোগ উঠেছে এক নারীর বিরুদ্ধে। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে উপজেলার সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ-আঙ্গারিয়া গ্রামবাসী।

এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। এলাকার ভুক্তভোগী কয়েকজন জানান আয়শা নামের ঐ নারী তার শিলতাহানি করা হয়েছে এমন নাটক সাজিয়ে স্থানীয় রেজোয়ান নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন।

ঐ মামলার অভিযুক্ত রেজাউল ওরফে রেজোয়ান বলেন, আমাদের সব কাগজপত্র থাকার পরও আয়শা আমাদের যৌথ পরিবারের ১৩ শতাংশ জমি দখলে রেখেছে। সম্প্রতি তাদের (ঐ নারীর) জমি আত্মসাৎ করতে উঠেপড়ে লেগেছে আঙ্গারিয়া আলিম মাদরাসার শিক্ষক ও রাজাপুর থানা মসজিদের ইমাম মাওলানা আমিনুল ইসলাম নেছারি এমন অভিযোগ দায়ের করেন রাজাপুর থানা পুলিশের কাছে ঐ নারির মা তাসলিমা বেগম।

তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেন ভাড়াটে লোকজন দিয়ে তাদের বাড়ি ছাড়তে হুমকি, কুপ্রস্তাবের কারণে আয়শার অন্যত্র চলে যাওয়া, মা ও মেয়ে রাতে অন্যত্র গিয়ে বসবাস, বাড়ির চারপাশে পর্দা সরিয়ে ফেলা, রান্না ঘরের চুলা ভাঙ্গা, দরজা-জানালার সামনে মলমূত্র ত্যাগ করাসহ নানান অভিযোগ।

এ বিষয়ে পুলিশের কাছে সাহায্য চেয়ে না পেয়ে ইমামারে কথিত অত্যাচার থেকে বাঁচতে অবশেষে মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) রাজাপুর প্রেসক্লাবে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন তাসলিমা বেগমের মেয়ে ঐ আয়শা আক্তার। এ নিয়ে আঞ্চলিক ও জাতীয় দৈনিকে মুখরোচক সংবাদ পরিবেশন হয় বিধবার বাড়ি দখলে নিতে ইমামের কাণ্ড!, ঝালকাঠিতে ইমামের অত্যাচার থেকে বাঁচতে বিধবার আকুতি ইত্যাদি শিরোনামে।

রাজাপুর উপজেলা সদরের কেন্দ্রীয় থানা জামে মসজিদের ইমাম আমিনুল ইসলাম নেছারির বিরুদ্ধে মিডিয়ায় অভিযোগ করা এই নারীর নাম মোসা. আয়শা (৩২) বাব মরহুম আবুল কালাম, গ্রাম আদাখোলা। আয়শার মায়ের সাধারণ ডায়েরির আবেদনের প্রেক্ষিতে শনিবার (৩০ নভেম্বর) রাজাপুর থানার এস আই আমিনুল ইসলাম তদন্তের জন্য ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ঐ সময় উপস্থিত ছিলেন আয়শার বৈপিত্রেয় চাচা ভাতকাঠির আলতাফ হোসেন মাস্টার (আয়শার পরিবারের আশ্রয়দাতা)।

তদন্তের স্বার্থে তদন্ত কালে আবেদনকারী জমির মালিকানা প্রমাণ করে এমন কাগজ পত্র দেখাতে পারেন নাই ঐ জমি দখলে থাকা পরিবারের লোকজন। এমনকি সে বা তার পরিবার ঐ বাড়িতে বসবাস করেন না বহু বছর এমন প্রমাণ মেলেছে ঘটনাস্থলে। আর সেখানে বসবাস করার উপযোগী কোনো বসত ঘরও নেই, সেখানে রয়েছে ভাঙাচোরা বাড়িঘর। তাই মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনা কোনো অভিযোগেরই সত্যতা মেলেনি, তদন্তকালে উপস্থিত এলাকাবাসীর সামনে ইমাম আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন তারা।

অনুসন্ধানে জানাগেছে, প্রকৃতপক্ষে আয়শার পরিবারের দখলে থাকা ঐ জমির (এসএ-২০১৩) আংশিক মালিক মফেজ উদ্দিন ও কানাই তালুকদার গং এর কাছ থেকে ১০ এপ্রিল ১৯৫৭ সালে ৯২৩ নং দলিল মূলে ক্রয় সূত্রে ঐ ১৩ শতাংশের আংশিক মালিক আয়শার বৈপিত্রেয় চাচা ও তার পরিবার। হাফেজী মাদ্রাসা সংলগ্ন অপর অংশের মালিক একই গ্রামের মৃত আসমত আলি তালুকদারের ছেলে নিজে ওয়ারিশ হিসেবে একই এলাকার মৃত জুলমত আলি খন্দকারের স্ত্রী মোসা. নুরজাহানের কাছে ১২ মার্চ ১৯৯১ ইং ৫৮১ নং কবলা দলিল মূলে এসএ-৩৮৬ নং খতিয়ানের ২০১৩ দাগের ৫ শতাংশ জমি বিক্রি করেন। দলিল ও রেকর্ড মূলে মালিক নুরজাহানের ওয়ারিশ ৫ পুত্র মজিদ, রশিদ, করিম, মালেক, মান্নান বিক্রি করলে এতিখানা লিল্লাহ বোডিং ও হাফেজী মাদ্রাসা পক্ষে ইমাম আমিনুল ইসলাম নেছারি ২১৮৭ নং কবলা মূলে মালিক হন।

ঘটনা প্রবাহের সাথে সংশ্লিষ্ট ঐ এলাকার ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর খান জানান, বিষয়টি নিয়ে অনেক দিন দরবার করেও অবৈধ দখলদার আয়শা ও তার পরিবারের সাথে সমঝোতা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এলাকার যে কেউ ঐ অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে কথা বলতে চাইলে তাকে সম্মান হারাতে হয় এমন ভাষ্য এলাকার সাধারণ মানুষের। ইতিপূর্বে ঐ জমি হাতিয়ে নিতে অভিযোগকারী আয়শা জমির প্রকৃত ওয়ারিশ জনৈক রেজাউল ওরফে রেজওয়ানকে হাত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে নারী নির্যাতনের মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন বলে জানান এলাকার লোকজন।

এ বিষয়ে তার পরবর্তী পদক্ষেপ কি এমন প্রশ্নের জবাবে ইমাম আমিনুল ইসলাম বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত কোনো অভিযোগেরই সত্যতা নেই। আমাকে যে হয়রানি করা হয়েছে তার সুষ্ঠ তদন্ত করতে হবে এবং সঠিক বিষয় তুলে ধরতে হবে সাংবাদিক ভাইদের তাহলেই সমাজ থেকে মিথ্যুকের দল ছিটকে পড়বে।

তিনি আরও বলেন পরবর্তীতে যেন কোনো সম্মানিত ব্যক্তি এমন পরিস্থিতিতে না পড়ে সে বিষয়ে তিনি সাংবাদিকসহ প্রশাসনের সকলের সহযোগিতা চান।

ad

পাঠকের মতামত