305937

ঘোর সঙ্কটে ভারতের অর্থনীতি, জিডিপি কমে সাড়ে ৪ শতাংশ

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ কাজে এল না ভারতের অর্থমন্ত্রণালয়ের নীতি নির্ধারকদের টোটকা। পতনের রেকর্ড গড়ে আরও তলানিতে দেশটির আর্থিক বৃদ্ধির হার। দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে জাতীয় উৎপাদন (জিডিপি) বৃদ্ধির হার কমে দাঁড়াল মাত্র ৪.৫ শতাংশ। যার অর্থ গত ৬ বছরের মধ্যে তলানিতে এসে ঠেকছে আর্থিক বৃদ্ধি।

উল্লেখ্য, সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকে জিডিপি কমে ৪.৭ শতাংশে দাঁড়াতে পারে বলে এর আগে রয়টার্সের তরফে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সরকারি পরিসংখ্যানে দেশের অর্থনীতির আরও করুণ চিত্র সামনে চলে এল।

আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু অক্টোবরে ভারতের আটটি প্রধান পরিকাঠামো ক্ষেত্রের উৎপাদন সরাসরি ৫.৮ শতাংশ কমেছে। অন্যদিকে, অর্থ বছরের প্রথম সাত মাসেই রাজকোষ ঘাটতি ৭.২ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা গোটা বছরের আনুমানিক রাজকোষ ঘাটতির পরিমাণের থেকে বেশি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাধীনতার পর দীর্ঘ সময় দেশের আর্থিক বৃদ্ধির গড় হার ৩.৫ শতাংশের আশেপাশে ঘোরাফেরা করেছিল। তাকে ব্যঙ্গ করে ‘হিন্দু রেট অব গ্রোথ’ তকমা দেন অর্থনীতিবিদ রাজ কৃষ্ণ। সেই তকমা জনপ্রিয় হয়েছিল।

মোদি সরকার দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর জুলাইয়ে সংসদে আর্থিক অবস্থা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়ে নতুন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন পাল্টা বলেছিলেন, ‘কংগ্রেস আমলে অর্থনীতি কেন দ্বিগুণ হয়নি? তখন কেন হিন্দু রেট অব গ্রোথ চাপানো হয়েছিল!’ এ বার মোদির আমলেই প্রবৃদ্ধির হার ৪.৫ শতাংশে নেমে আসায় প্রশ্ন উঠছে, ‘হিন্দু রেট’-এই কি ভারত ফিরে যাচ্ছে?

জেএনইউ-এর অর্থনীতির অধ্যাপিকা জয়তী ঘোষের বলেছেন, ‘হিন্দু রেট অব গ্রোথে তো তা-ও ৩.৫ শতাংশ বৃদ্ধির হার ছিল। এখন কি বৃদ্ধি আদৌ হচ্ছে? না কি অর্থনীতির সংকোচন হচ্ছে? বেকারত্বের হার, সংসারের খরচ কমে যাওয়া, গাড়ি থেকে নিত্য প্রয়োজনের জিনিসপত্রের বিক্রি কমা, একের পর এক সংস্থার ব্যবসা গুটিয়ে ফেলার মতো অর্থনীতির অন্যান্য মাপকাঠি কিন্তু সে কথাই বলছে।’’

আশঙ্কা ছিল আগেই

আগেই আশঙ্কা করা হয়েছিল যে প্রকাশ হতে চলা এই ত্রৈমাসিকের জিডিপি ৫ শতাংশের নিচে নেমে যাতে পারে। দেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্ক এক রিসার্চ রিপোর্টে জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরে ভারতীয় অর্থনীতির বৃদ্ধির হার হবে ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে (এপ্রিল-জুন) অর্থনীতির বৃদ্ধির হার গত ছয় বছরের তলানি ৫ শতাংশ নেমে এসেছিল। এসবিআই রিসার্চ রিপোর্টে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, জুলাই-সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধির হার আরও কমে ৪.২ শতাংশ হতে পারে। তবে আশঙ্কা মতো ৪.২ শতাংশে নামেনি প্রবৃদ্ধির হার। তবে সেই সংখ্যার খুব কাছে পৌঁছে যায় জিডিপি।

কী কারণে জিডিপি পতন?

দীর্ঘদিন ধরে গাড়ি শিল্পে মন্দা, বুনিয়াদি শিল্পে উৎপাদন সংকোচন, নির্মাণ ও পরিকাঠামো শিল্প বিনিয়োগ কমে আসা সহ বিভিন্ন কারণে জুলাই-সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকে অর্থনীতির বৃদ্ধির হার ৪.২% নেমে আসতে পারে বলে এসবিআই রিসার্চ রিপোর্টে বলা হয়েছে। এছাড়া অতিবৃষ্টির কারণে কৃষি ফলন নষ্ট ও খনন প্রক্রিয়া ব্যহত হয়। এর আগে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক, বিশ্ব ব্যাঙ্ক, আইএমএফ সকলেই চলতি অর্থবছরে ভারতের বৃদ্ধির অনুমান কমিয়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে এনেছিল।

শেয়ার বাজারে পতন

এদিকে পরিসংখ্যান এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়ন মন্ত্রকের তরফে আজ সন্ধ্যা নাগাদ জিডিপি সংক্রান্ত রিপোর্ট পেশ করা হবে। এই রিপোর্ট প্রকাশের আগেই আজ শেয়ার বাজার দেখল বড় পতন। বৃহস্পতিবার সর্বকালীন শিখরে পৌঁছায় শেয়ার বাজার। তবে জিডিপি সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রকাশের আবহে আজ বাজার ৩৩৬ পয়েন্ট পড়ে যায় সেনসেক্স।

ad

পাঠকের মতামত