305726

রায় শুনে ‘নারায়েক তাকবির’, আল্লাহু আকবর’ বলে চিৎকার জঙ্গিদের

গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলা ও বর্বরোচিত হ’ত্যাযজ্ঞের ঘটনায় করা মামলার রায় শোনার পর আদালতে দাঁড়িয়ে ‘আল্লাহ আকবর’, ‘নারায়েক তাকবির’ বলে চিৎকার দিয়েছেন ফাঁসির দণ্ড পাওয়া জঙ্গিরা। আসামিরা এজলাসে রায় শোনার পর অশ্লীল ব্যবহার করতে শুরু করে বলে জানা যায়। এসময় আসামিরা বলতে থাকেন- ‘আমাদের বিচার এখানে নয়, হাশরের ময়দানে হবে’।

বুধবার (২৭ নভেম্বর) দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বহুল আলোচিত এ হামলা মামলার রায় পড়া শুরু হয়। এসময় নৃশংস এ হামলা মামলার ৮ আসামি এজলাসে উপস্থিত ছিলেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- হামলার পরিকল্পনাকারী, হামলাকারীদের প্রশিক্ষণ, অস্ত্র সরবরাহ ও হামলায় সক্রিয় অংশগ্রহণকারী জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী; নব্য জেএমবির প্রশিক্ষক ও গুলশান হামলায় জড়িতদের প্রশিক্ষণ ও প্ররোচনাদানকারী রাকিবুল হাসান রিগ্যান ওরফে রাফিউল ইসলাম রাফি ওরফে রিপন ওরফে হাসান ওরফে অন্তর; হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী আব্দুস সবুর খান হাসান ওরফে হাতকাটা সোহেল মাহফুজ; বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত কানাডার নাগরিক তামিম চৌধুরীর সহযোগী আসলাম হোসেন সরদার ওরফে রাশেদ ইসলাম ওরফে আবু জাররা ওরফে র‌্যাশ; হামলাকারীদের মেস ভাড়া করে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা, অর্থ লেনদেন, অস্ত্র-গ্রেনেড সরবরাহ ও হামলায় সহায়তাকারী হাদিসুর রহমান সাগর; হামলার পরিকল্পনাকারী, হামলাকারীদের প্রশিক্ষণ, প্ররোচনা দেয়া শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ও হামলার পরিকল্পনাকারী এবং অস্ত্র সরবরাহকারী মামুনুর রশীদ ওরফে রিপন। অপরাধ প্রমাণ না হওয়ায় মামলার অপর আসামি মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজানকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে।

২০১৬ সালের ১ জুলাই ভয়াবহ ওই হামলা হয়। সেদিন জঙ্গিরা কু’পিয়ে ও গুলি করে হ’ত্যা করেছিলেন ২০ জন দেশি-বিদেশি নাগরিককে। সব মিলিয়ে ওই জঙ্গি হামলায় ২২ জন মারা যান। ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ওই মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। রায়ের আগে চার্জশিটের ২১১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১১৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছে ট্রাইব্যুনাল।

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে (স্প্যানিশ রেস্তোরাঁ) হামলা চালায় জঙ্গিরা। ওই হামলায় ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে কু’পিয়ে ও গুলি করে হ’ত্যা করে তারা। নিহতের মধ্যে ৯ জন ইতালিয়ান, ৭ জন জাপানি ও একজন ভারতীয় নাগরিক ছিলেন।

ওইরাতেই হামলার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাদের ওপর গ্রেনেড হামলা চালায় জঙ্গিরা। গ্রেনেড হামলায় ডিবি পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন আহমেদ নিহত হন।

১২ ঘণ্টার যৌথ কমান্ডো ‘অপারেশন থার্ডারবোল্ট’ অভিযানে ২ জুলাই সকালে হামলাকারী ৫ জঙ্গি নিহত হয়। অভিযানে রেস্তোরাঁর প্রধান শেফ সাইফুল ইসলাম মারা যান। গুরুতর আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রেস্তোরাঁটির সহকারী শেফ জাকির হোসেন। ২ পুলিশ ও ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২২ জনে।

২০১৬ সালের ৪ জুলাই নিহত ৫ জঙ্গিসহ অজ্ঞাতদের আসামি করে গুলশান থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দায়ের করা হয়।

ঘটনায় জড়িত ২১ জনকে চিহ্নিত করে জীবিত ৮ জনের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেররিজম বিভাগের পরিদর্শক হুমায়ূন কবির ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। বাকি ১৩ জন হামলার পর বিভিন্ন অভিযানে মারা যান।

রায়ের আগে চার্জশিটের ২১১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১১৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছে ট্রাইব্যুনাল।

মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, নব্য জেএমবির জঙ্গিদের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করা এবং বাংলাদেশকে একটি জঙ্গি রাষ্ট্র বানানো। বিদেশি নাগরিকদের হ’ত্যা করে নৃশংসতার প্রকাশ ঘটানোর পাশাপাশি জঙ্গিরা এর মাধ্যমে দেশ ও বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে চেয়েছিল।

৩ বছর আগের সেই হলি আর্টিজান হামলায় পুরো দেশ স্তম্ভিত হয়ে পড়েছিল। আন্তর্জাতিক সব সংবাদমাধ্যমগুলো সেই হামলার খবর বড় শিরোনাম হয়ে উঠেছিল। স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের বিপজ্জনক বিস্তারের মাত্রা।

ad

পাঠকের মতামত