305658

পাঁচ মিনিটের মিশনে প্রকাশ্যেই বাইক চুরি (ভিডিও)

চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনী। সুযোগ পেলেই গোপনে অন্যের মূল্যবান জিনিস নিয়ে কেটে পড়েন চোর মহাশয়। তবে ধরা পড়লে আর রক্ষা থাকে না। তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নির্জন-অন্ধকার স্থানকে চুরির জন্য বেছে নেয় তারা। কিন্তু দলবদ্ধ হয়ে সেই কাজটি যে প্রকাশ্যেই করা যায়, আবারও তার প্রমাণ মিলল।

মতিঝিলের মতো একটি ব্যস্ততম এলাকায় প্রকাশ্যে দিনের বেলায়ই তালা ভেঙে চুরি করা হয় একটি মোটরসাইকেল। অথচ যেখান থেকে বাইকটির তালা ভেঙে চুরি করা হচ্ছিল সেখনাকার আশেপাশে ওই সময় অনেক মানুষ চলাফেরা করছিল। কেউই বিষয়টি খেয়াল করেননি। কারণ বাইকটি চুরির সময় চোর দলের একাধিক সদস্য ওই স্থানে দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিলেন।

বাইক চুরির এই পুরো দৃশ্যটি ধরা পড়ছে এক ভবনে লাগানো থাকা সিসিটিভি ক্যামেরায়। ওই ক্যামেরায় চোরদের চেহারা স্পষ্টভাবে দেখা গেছে। ঘটনার পরে বাইকের মালিক বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নম্বর- ৩৫। কিন্তু তিন দিন পার হলেও সেই বাইক চোরদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। উদ্ধার হয়নি হারিয়ে যাওয়া সেই বাইকটিও।

চুরি হওয়া বাইকটির মালিকের নাম মো. নজরুল ইসলাম। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। ১৫৩ মতিঝিল বা/এ রনি হাউজের চতুর্থতলায় থাকেন তিনি। অনেক কষ্টে শখের বশে মাত্র কয়েক মাস আগেই একটি নীল রঙের অ্যাপাচি আরটিআর-১৬০ সিসি বাইক কিনেছিলেন নজরুল ইসলাম। নিজের অফিসের নিচেই বেশির ভাগ সময় তার বাইকটি রাখতেন তিনি।

মো. নজরল ইসলাম বলেন, ‘গত ২৪ নভেম্বর প্রতিদিনের মতোই আমার বাইকটি অফিসের নিচে পার্ক করা ছিল। সকাল ১০টার দিকে আমার বাইকটি সেখান থেকে চুরি হয়ে যায়। পরে আমার অফিসের সিসিটিভি ক্যামেরায় বাইক চোরদের সকল কার্যক্রম দেখতে পাই। তারা তিনজন মিলে মাত্র পাঁচ মিনিটেই আমার বাইকের তালা ভেঙে বাইকটি নিয়ে পালিয়ে যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই ঘটনার পরে আমি মতিঝিল থানায় অজ্ঞাতনামা তিনজনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছি। মামলার সহায়তায় জন্য আমি পুলিশকেও সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দিয়েছি। কিন্তু আজ তিন দিন পার হলেও চোরদের কেউই ধরা পড়েনি। আমার বাইকটিও উদ্ধার হয়নি।’

বাইক উদ্ধার ও চোরদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘চোরদের চেহারা দেখার পরেও যদি তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার না করা হয় তাহলে বিষয়টি দুঃখজনক। কারণ তারা গ্রেপ্তার না হলে অন্য আরেকজনের বাইক চুরি করবেন।’

পাঁচ মিনিটের চুরির মিশনে যা দেখা গেছে

নজরুল ইসলামের বাইক চুরির ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ থেকে দেখা যায়, সকাল থেকেই তার অফিসের সড়কটিতে অনেক মানুষ চলাফেরা করছিল। অফিসগামী মানুষের চাপই ছিল বেশি। অফিসের সামনের এবং আশেপাশের বিভিন্ন দোকানিরা তাদের দোকান খুলছিলেন।

সকাল ৯টা ৩৭ মিনিটের দিকে সড়কের এক পাশ থেকে দুই ব্যক্তি হাঁটতে হাঁটতে চলে আসেন বাইক রাখার স্থানে। আর অপর পাশ থেকে এসে সেখানে যোগ দেন আরেক ব্যক্তি। এরপর কয়েক মিনিট এদিক সেদিক তাকিয়ে নিজেদের মধ্যে গল্প করেছিলেন তারা। সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে মূল কাজ শুরু করেন তারা। এক ব্যক্তি তালা ভাঙতে চলে যান বাইকের কাছে। আর অপর দুইজন একটু দূর থেকে দাঁড়িয়ে তা দেখছিলেন।

ওই সময়ে নীল শার্ট পরা এক ব্যক্তি পাশের এক দোকানে গিয়ে একটি সিগারেট ধরিয়ে আবারও বাইকের কাছাকাছি চলে আসেন। আশেপাশে বার বার তাকিয়ে একই জায়গায় ঘোরাঘুরি করছিলেন তিনি। তার সঙ্গে থাকা অপর এক ব্যক্তি একটু পরপর ওই দিকে নজর রাখছিলেন।

এভাবেই কেটে যায় ৫ মিনিট। সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে নীল শার্ট পরা এক ব্যক্তি দ্রুত চলে যান বাইকের কাছে। আর তালা ভাঙা ব্যক্তি ততক্ষণে সটকে পড়েছেন। তিনি বাইকের ওপরে বসে একটি কালো রঙের হেলমেট পরে খুব দ্রুত গতিতে বাইকটি নিয়ে সেখান থেকে একাই চলে যান। আর একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা সেই ব্যক্তিও আস্তে আস্তে সরে পড়েন।

পুলিশের ভাষ্য

এই বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রাজ্জাক  বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তবে সিসিটিভি ফুটেজে যেহেতু ক্লু পাওয়া গেছে, বাইক চুরিতে অংশ নেওয়া তিনজনই পেশাদার চোর। আশা করি খুব দ্রুতই গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।’

তিন চোরের পাঁচ মিনিটের মিশনে বাইক চুরি, দেখুন সিসিটিভির ফুটেজ

তিন চোরের পাঁচ মিনিটের মিশনে বাইক চুরি, দেখুন সিসিটিভির ফুটেজ

Posted by Amader Shomoy on Tuesday, 26 November 2019

ad

পাঠকের মতামত