304684

সাড়ে তিন বছরেও তনু হ’ত্যার বিচার হলো না কেন : প্রশ্ন মায়ের

‘বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে’ পুরনো এ প্রবাদ শতভাগ মিথ্যা হয়েছে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাতের ঘাতকদের ফাঁসির রায়ের মধ্য দিয়ে। কিন্তু প্রায় সাড়ে তিন বছরেও তদন্তেই আটকে আছে কুমিল্লা ময়নামতির কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনু ও চট্টগ্রামে পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু আক্তার হ’ত্যা মামলার বিচারকাজ। কবে তদন্ত শেষ হবে, কবে শেষ হবে বিচারকাজ- এ নিয়ে সংশয়ে নিহত তনু ও মিতুর স্বজনরা। গতকাল নুসরাত হ’ত্যা মামলার রায় হওয়ার পর তাদের প্রত্যাশা, এবার হয়তো দ্রুত এসব হ’ত্যাকা-ের বিচারকাজ সম্পন্ন হবে এবং দোষীরা শাস্তি পাবে।

২০১৬ সালের ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাস এলাকার পাওয়ার হাউসের অদূরে একটি ঝোপ থেকে কলেজছাত্রী তনুর লাশ উদ্ধার করা হয়। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী ছিলেন তিনি। একই বছরের ৫ জুন ভোরে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় খুন হন পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু।

গতকাল বৃহস্পতিবার নুসরাত হ’ত্যার ঘটনায় আদালতের রায় শুনে দ্রুত সময়ে তনু হ’ত্যার বিচার দাবি করেন তার মা আনোয়ারা বেগম। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে সিআইডি যোগাযোগ করছে না। ১৫দিন আগে সিআইডি অফিসে ফোন দিয়েছি। তারা দেখছে বলে জানিয়েছে। সারাদিন টিভিতে নুসরাত হ’ত্যাকারীদের খবর দেখলাম। খবর দেখতে দেখতে আফসোস করেছি, তনুর হ’ত্যাকারীদের যদি এরকম সাজা হতো।’

আনোয়ারা বেগম বলেন, বুকের ধন হারানোর ব্যথা মা ছাড়া কেউ বুঝবে না। আমার অন্তর পুড়ে গেছে। তনু হ’ত্যার বিচার হলে ওর অন্তর শান্তি পেত। বিচারের নামে আমার পরিবার ইতোমধ্যে অনেক কাঁটা-পথ পাড়ি দিয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বরং অনেক ক্ষেত্রে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। তিনি মনে করেন, প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়া তনু হ’ত্যার বিচার পাওয়া সম্ভব নয়।

তিনি আরও বলেন, ‘তনুর বাবা এবং আমি খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছি। আগের মতো বিভিন্ন অফিসে যেতে পারি না। মৃত্যুর আগে মেয়ের হ’ত্যাকাণ্ডের বিচার দেখে যেতে চাই। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মেয়ের হ’ত্যার বিচার চাওয়ার সুযোগ পেলে অন্তরে শান্তি পেতাম।’

তনুর মা দাবি করেন, ‘সার্জেন্ট জাহিদ ও তার স্ত্রীকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হ’ত্যাকারীদের পরিচয় বেরিয়ে আসবে। কারণ সার্জেন্ট জাহিদের বাসায় টিউশনি করতে যাওয়ার পর জঙ্গলে তনুর মরদেহ পাওয়া যায়।’

তনুর ভাই রুবেল আক্ষেপ করে বলেন, শুধু পরিবার নয়, তনু হ’ত্যার বিচার দেশবাসীরও গণদাবি। দেশবাসী ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে হলেও তনু হ’ত্যার বিচার বাস্তবায়ন প্রয়োজন। রুবেল বলেন, তার বোন তনুর বিচার দাবি করতে করতে আমার মা-বাবা এখন ক্লান্ত-শ্রান্ত।

রুবেল জানান, তনু হ’ত্যার পর থেকে তার মা-বাবা দুজনই স্ট্রোক করেছেন। এখন তারা অনেকটাই নির্বাক। বিচারপ্রার্থী হিসেবে তারা বহুবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেছেন, পারেননি।

তনু ‘হ’ত্যা মামলাটি কোতোয়ালি থানা পুলিশ হয়ে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও সবশেষে সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়। তবে এতগুলো বছরে তদন্তেই পড়ে আছে পুলিশ। তারা বলছে, তদন্ত চলছে।

এ ব্যাপারে কুমিল্লার ‘সাংবাদিক মোহাম্মদ ফজলে রাব্বী সংসদে’র সহ-সভাপতি ডা. গোলাম শাহজাহান বলেন, ‘নুসরাতের হ’ত্যাকারীদের দ্রুততম সময়ে সাজা দেওয়া ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক। তার মতো তনুর হ’ত্যাকারীরাও সাজা পাবে, এমন প্রত্যাশা সবার।’

গণজাগরণ মঞ্চ, কুমিল্লার মুখপাত্র খায়রুল আনাম রায়হান বলেন, ‘তনু হ’ত্যা মামলার তদন্তে সিআইডি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে; যা খুবই দুঃখজনক। আমরা চাই, দ্রুত তনু হ’ত্যার আ’সামি শনাক্ত হোক। নুসরাতের মতো তনুর হ’ত্যাকারীদেরও সাজা হোক।’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিআইডি কুমিল্লার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের কাজে কোনও স্থবিরতা নেই; আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ডিএনএ পরীক্ষা এবং ম্যাচিং করার বিষয়টি সময়সাপেক্ষ। ডিএনএ রিপোর্ট এখনও হাতে পাইনি। রিপোর্ট পেলে আমরা এগিয়ে যেতে পারবো।’

ad

পাঠকের মতামত