303388

শান্তিতে নোবেলজয়ী ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদের অজানা অতীত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইথিওপিয়া ও ইরিত্রিয়ার মধ্যে চলমান দুই দশকের যুদ্ধ বন্ধে ভূমিকা রাখায় এ বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জিতেছেন ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ। আজ যাকে নিয়ে গোটা দুনিয়ায় হৈচৈ পড়ে গেছে, সেই আবির অতীত জীবনটা অনেকেরই অজানা। ছোটবেলা থেকেই তাকে নিজ দেশের অস্থিতিশীল অবস্থার সঙ্গে যেমন লড়তে হয়েছে, ঠিক তেমনি নিজের পরিবারের দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়েও তাকে জীবনযুদ্ধে জয়ী হতে হয়েছে। বাংলা ইনসাইডার

ইথিওপিয়ার কাফা প্রদেশের বেশাহাসা শহরে ১৯৭৬ সালের ১৫ আগস্ট জন্ম আবি আহমেদের। একজন দুজন নয়, তার ছিলেন চার মা। বলাই বাহুল্য, একজন আবির নিজের মা। বাকি তিনজন সৎ। আবির বাবা আহমেদ আলি মুসলিম ধর্মাবলম্বী অরোমো জাতিগোষ্ঠীর লোক। আর মা টেজেতা ওলডে খিস্টান ধর্মাবলম্বী। আবির বাবা ছিলেন দরিদ্র কৃষক। চার স্ত্রী থাকায় তার পরিবারে ঝগড়া-ঝাটি আর অভাব অনটন কোনটারই কমতি ছিলো না।

আবির চার মা থাকলেও মায়ের ভালোবাসাটা তার কপালে খুব কমই জুটেছে। সৎ মায়েদের কাছ থেকে ভালোবাসা পাওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। তার নিজের মায়ের কাছ থেকেও যত্ন আত্তি তেমন একটা পাননি আবি। পাবেন কেমন করে, তার নিজের মায়ের ছিল ছয় সন্তান। তার মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ আবি। মোট ১৩ ভাইবোনের মধ্যেও আবি সবার ছোট। যত্ন আত্তি তো দূরে থাক, দুবেলা দুমুঠো পেট পুরে খাওয়াই তার জন্য ছিল বিশাল বড় ব্যাপার।

ছোটবেলা থেকেই পরিবারে অভাব অনটন দেখে বড় হয়েছেন আবি। ঘরে থাকার জায়গা না পেয়ে ঘরের বারান্দায় ঘুমিয়েছেন। বিদ্যুৎ ও পানির স্বল্পতা ছিল তাদের বাড়িতে। এতগুলো ভাইবোনের মধ্যে বিছানাতেও ঘুমানোর সাধ্য হয়নি তার। ছোটবেলা থেকেই ঘুমিয়েছেন মেঝেতে।

গরিব কৃষকের সন্তান আবি ছোটবেলা থেকেই ছিল প্রযুক্তি পাগল। বিজ্ঞানের বিভিন্ন খুটিনাটি আবিষ্কার তাকে মুগ্ধ করতো। বাবা গরীব হওয়ায় লেখাপড়া চালিয়ে নিতে তাকে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়েছে।ছোটবেলা থেকে দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়তে থাকা আবি কিশোর বয়েসে সামরিক বাহিনীর রেডিও অপারেটর হিসেবে যোগ দেন। ইথিওপিয়ার সাইবার গোয়েন্দা সংস্থা ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি এজেন্সির প্রতিষ্ঠাতা প্রধান ছিলেন তিনি।

ব্যক্তিগত জীবনে আবি তিন কন্যার জনক। একজন দত্তক নেওয়া ছেলেও আছে তার। আবির স্ত্রী যিজান তায়াচেয়ু পরিবারকে নিয়ে থাকতেই বেশি পছন্দ করেন।

আবি রাজনীতিতে সক্রিয় হন ২০১০ সালে। সরকারে ঢোকার আগে তিনি লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদবি পেয়েছিলেন। তার আগে তিনি আফ্রিকার আরেক দেশ রুয়ান্ডায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনের দূত হিসেবে কাজ করেন। রাজনীতিতে এসেই মানুষের কথা বলে জনপ্রিয় হয়ে যান আবি। ২০১৬ সালে পান ইথিওপিয়ার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব।

২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ক্ষমতাসীন জোটের নেতা হেইলেমারিয়াম হঠাৎ জোটের প্রধান ও প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য হন। হেইলেমারিয়ামের পদ ছাড়ার পরই তার উত্তরসূরি হিসেবে ক্ষমতা পান ৪২ বছর বয়সী আবি। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রতিজ্ঞা করেন, তিনি একটি নতুন ইথিওপিয়া উপহার দেবেন। সব জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধি নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনায় সমতা আনবেন।

রাষ্ট্র পরিচালনায় সমতা আনার ঘোষণার প্রমাণ স্বরূপ আবি নির্বাচিত হয়ে যে মন্ত্রিসভা গঠন করেছিলেন তার অর্ধেক ছিল নারী। যা দেশটির ইতিহাসে বিরল। এমনকি প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি একজন নারীকে মনোনীত করেন। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির চেয়ারেও বসান একজন নারীকে।

আফ্রিকায় আবির মতো নেতা খুব বেশি দেখা যায়নি। মহাদেশটির সবচেয়ে কমবয়সী নেতা হলেও কাজের মাধ্যমে আফিকার গন্ডি ছাড়িয়ে নিজেকে পরিচিত করেছেন একজন বিশ্বজনীন নেতা হিসেবে। যুদ্ধ আর ক্রমবর্ধমান হারে জাতিগত সংঘাত বাড়তে থাকা একটা মহাদেশকে নতুনের দিশা দেখিয়েছেন তিনি। তাইতো তার নোবেল প্রাপ্তির খবরে শুধু নিজ দেশ নয়, গোটা আফ্রিকাতেই শুরু হয়ে গেছে উৎসব।

ad

পাঠকের মতামত