301959

‘৩৩ দিনের যুদ্ধ বন্ধ করা না হলে ইসরাইলি বাহিনী ধ্বংস হয়ে যেত’

২০০৬ সালে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপে ইসরাইল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধ বন্ধ করা না হলে ইহুদিবাদী সেনাবাহিনী ধ্বংস হয়ে যেত বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি’র কুদস ব্রিগেডের কমান্ডার মেজর জেনারেল কাসেম সোলায়মানি। কুদস ব্রিগেডের কমান্ডার পদে নিয়োগ পাওয়ার ২০ বছর পর প্রথমবারের মতো ইরানের সর্বোচ্চ নেতার ব্যক্তিগত ওয়েবপোর্টাল খামেনেয়ীডটআইআর’কে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি একথা জানান।

তিনি ৩৩ দিনের যুদ্ধ শুরুর প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে বলেন, ২০০৩ সালে আমেরিকার ইরাক দখলের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকা ও ইসরাইলের কথিত সামরিক শক্তি সম্পর্কে ভীতি ছড়ানো হয়। এরপর লেবাননের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহকে ধ্বংস করার জন্য আরব দেশগুলোর সঙ্গে গোপন সমঝোতায় পৌঁছে ওয়াশিংটন ও তেল আবিব।

জেনারেল সোলায়মানি বলেন, সে সময় এই গোপন ষড়যন্ত্রের প্রকাশ্য যে জিগিরটি তোলা হয়েছিল তার নাম ছিল ‘বৃহৎ মধ্যপ্রাচ্য পরিকল্পনা’ যা ৩৩ দিনের যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর আর কারো মুখে শোনা যায়নি। কুদস ব্রিগেডের কমান্ডার বলেন, লেবাননে ইসরাইলি বাহিনীর হামলা শুরুর এক সপ্তাহ পর তেহরানে সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ীর সভাপতিত্বে ইরানের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

ওই বৈঠকে যুদ্ধ পরিস্থিতি সম্পর্কে আমার দেয়া রিপোর্ট শুনে সর্বোচ্চ নেতা বলেন, “আমার মনে হচ্ছে খন্দকের যুদ্ধের মতোই এই যুদ্ধে হিজবুল্লাহ বিজয়ী হবে।” জেনারেল সোলায়মানি বলেন, ওই বৈঠকের পর তিনি সর্বোচ্চ নেতার দিক-নির্দেশনা ও পরামর্শ নিয়ে লেবাননে ফিরে যান এবং হিজবুল্লাহ নেতা সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহকে অবহিত করেন।

তিনি বলেন, তার বার্তায় হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা দারুণভাবে উজ্জীবিত হয় এবং তাদের মধ্যে এই আত্মবিশ্বাস জন্মে যে, চলমান যুদ্ধে তারাই বিজয়ী হতে যাচ্ছে। জেনারেল সোলায়মানি বলেন, একইসঙ্গে অনেকগুলো ফ্রন্টে ইসরাইলি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাচ্ছিল হিজবুল্লাহ। তিনি বলেন, ভূমধ্যসাগরে ইসরাইলি যুদ্ধজাহাজে হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার পর ওই এলাকা থেকে সব যুদ্ধজাহাজ সরিয়ে ফেলেছিল তেল আবিব।

২০০৬ সালের গ্রীষ্মের ওই যুদ্ধের সমাপ্তি প্রসঙ্গে আইআরজিসি’র কুদস ব্রিগেডের কমান্ডার বলেন, হিজবুল্লাহর হাতে প্রচণ্ড মার খেয়ে নিজের সব পূর্বশর্ত ভুলে যায় ইহুদিবাদী ইসরাইল। তারা জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় হিজবুল্লাহর পূর্বশর্ত মেনে নিয়ে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় এবং এভাবেই হিজবুল্লাহ একটি বিশাল বিজয় অর্জন করে।

২০০৬ সালের জুন মাসে ইহুদিবাদী ইসরাইল লেবাননের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহকে ‘ধ্বংস করা’র ঘোষণা দিয়ে দক্ষিণ লেবাননে আগ্রাসন চালায়। কিন্তু যে ইসরাইল ১৯৬৭ সালে মাত্র এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে সম্মিলিত আরব বাহিনীকে পরাভূত করেছিল সেই ইসরাইল টানা ৩৩ দিন যুদ্ধ করেও হিজবুল্লাহকে কাবু করতে পারেনি বরং শেষদিকে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের হাতে প্রচণ্ড মার খেয়ে পিছু হটতে বাধ্য হয়।

অবশ্য শুরুর দিকে জাতিসংঘ চোখ বন্ধ করে রাখলেও শেষদিকে মধ্যস্থতার মাধ্যমে দক্ষিণ লেবানন থেকে ইসরাইলকে নিরাপদে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়।

ad

পাঠকের মতামত