300297

৪ প্রজন্ম ধরে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে, কিন্তু এখন ‘দেশহীন’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক- আসামের মন্ত্রী ভরসা দিচ্ছেন, যতক্ষণ নরেন্দ্র মোদি আছেন, অমিত শাহ আছেন, ততক্ষণ হিন্দুদের দেশহীন হওয়ার আশঙ্কা নেই। কিন্তু দেশের সেবা করেও ‘দেশহীন’ হয়ে পড়া বাঙালি, নেপালি পরিবারগুলো কারো নামেই আস্থা রাখতে পারছে না।

চার প্রজন্ম ধরে সেনাবাহিনীতে থাকার পরেও এনআরসি-ছুট হিসেবে জুটেছে দেশহীনের তকমা। সামরিক পদক ফেরানোর কথা ভাবছেন তারা। স্বজনের বলিদানের বিনিমিয়ে পাওয়া জাতীয় স্মারক নিয়েই বা কী করবেন বুঝছেন না অনেকে।

আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তেজপুরের অবিনাশচন্দ্র দেব ১৯৭০ সালের মে মাসে ভারতীয় বিমানবাহিনীতে যোগ দেন। সংগ্রাম পদক-সহ তিনটি পদক পেয়েছেন তিনি। তার বিমানবাহিনীতে যোগ দেওয়ার নথিই যথেষ্ট ভেবে নিয়ে ছেলে অজয় দেব লেগ্যাসি জমা দেন। কিন্তু প্রথম তালিকায় নাম আসেনি মরাভারলির বাসিন্দা দেব পরিবারের।

ছোট মেয়ে অঞ্জনাদেবীর স্বামী বিপ্লব দাস বলেন, পরিচিতির সূত্র ধরে এনআরসির এক কর্মীর কাছে জানতে পারি, আমার স্ত্রীর বার্থ সার্টিফিকেটে সিলমোহর স্পষ্ট নয় বলে নাম বাদ পড়েছে। ফের সব নথি, পেনশনের কাগজ দেয়ার পরেও অবিনাশবাবুর তিন ছেলেমেয়ে এবং অজয় ও অনিতার ছেলেমেয়েদের নাম তালিকায় ওঠেনি। অবিনাশবাবুর বাড়িতে ঝুলতে থাকা গর্বের তিনটি পদক এখন ছেলেমেয়েদের কাছে অর্থহীন মনে হচ্ছে।

একইভাবে যোরহাটের চিত্তরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন দেশ স্বাধীন হওয়ার পরের বছর। তার পরিবারেরও নাম নেই এনআরসিতে। আসাম আন্দোলনে মারা যাওয়া জাতীয় বীর মদন মল্লিকের নাম ডি-ভোটার তালিকায় ঢোকানোয় তার পরিবার যেমন খসড়াছুট, তেমনই, ছয়গাঁওয়ের ঢেকেনাবড়ির বাসিন্দা আর এক জাতীয় বীর মৃণল ভৌমিকের পরিবারের ৬ জনের নামও এনআরসি থেকে বাদ পড়েছে! সরকারি স্মারক, ৫ লক্ষ টাকা পাওয়া পরিবারটি বুঝতেই পারছে না কেন বিদেশিমুক্ত আসাম গড়তে প্রাণ দেওয়া জাতীয় শহিদের নামও তালিকা থেকে বাদ!

ধেমাজির শিলাপথারের বাসিন্দা, অবসরপ্রাপ্ত জওয়ান দলবাহাদুরের লজ্জা আরো বেশি। কারণ তার বাবা-মা থেকে নাতি-নাতজামাইয়ের নিয়ে পরিবারের মোট ১৩ জন সামরিক বাহিনীতে আছেন বা ছিলেন। কিন্তু তার পরেও তার নিজের ও অনেকেরই নাম এনআরসিতে নেই। বাবা শ্বেত বাহাদুর কামি ছিলেন ব্রিটিশ জমানার সেনাবাহিনীতে। কিন্তু গরুর গোশত খাওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে তিনি ১৯৪০-এর দশকে চাকরি খোয়ান। দেশ স্বাধীন হলে ফের কাজে যোগ দেন শ্বেতবাহাদুর। তার স্ত্রী ভুবেশ্বরী কামি ছিলেন সেনাবাহিনীর নার্স। শ্বেতবাহাদুরের পাঁচ ছেলে ও পাঁচ জামাই সেনাকর্মী! দুই নাতি ও এক নাতজামাইও সেনাবাহিনীতে কর্মরত। কিন্তু এমন পরিবারের সিংহভাগ সদস্যের নাম না-আসায় ধেমাজিবাসী বিস্মিত। পরিবারের সদস্যরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সরকারের দেওয়া সব পদক ফেরত দেবেন। শিলাপথার নগরের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত জ্যোতিষ দাসের ছেলে, গবেষক উত্তম দাস, স্ত্রী মিনতি দাস ও তাদের পরিবারের ১১ জনের নাম এনআরসিতে খারিজ হয়েছে।

রাজ্যের পূর্ত স্বাস্থ্য ও অর্থমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা অবশ্য অভয় দিয়ে বলেন, এই তালিকায় ভয় পাওয়ার কিছু নেই। প্রধানমন্ত্রী ও অমিত শাহ আছেন। সব বিদেশির নাম বাদ ও ভারতীয়দের নাম না-ঢোকা পর্যন্ত তালিকা চূড়ান্ত নয়।

তিনি এ-ও জানান, তালিকায় বিস্তর ভুলের তথ্য সুপ্রিম কোর্টে তুলে ধরে এনআরসি পূনর্মূল্যায়নের দাবি ফের তুলবে রাজ্য সরকার। এ নিয়ে তিনি আসু, আসাম পাবলিক ওয়ার্কস ও অন্য সব সংগঠনকে হাত মেলানোর ডাক দেন।

বলেন, “সকলে মিলে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলে, আমার বিশ্বাস, আদালত এই এনআরসির উপরে স্থগিতাদেশ দেবে। ৮ ও ৯ সেপ্টেম্বর অমিত শাহ উত্তর-পূর্ব পরিষদের বৈঠকে আসছেন। তখন এ নিয়ে বিশদে আলোচনা হবে।”

ad

পাঠকের মতামত