263556

শেখ হাসিনার পর কে হবেন প্রধানমন্ত্রী?

নিউজ ডেস্ক।। জার্মান সফরে গিয়ে ডয়েচে ভেলে’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তাঁর অভিপ্রায়ের কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি আর দায়িত্ব পালন করতে চান না। এটাই তাঁর শেষ মেয়াদ। প্রধানমন্ত্রীর এই সাক্ষাৎকারের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন মহল আর দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে আলাপ-আলোচনা, জল্পনা-কল্পনা। ২০২৩ সাল পর্যন্ত রয়েছে বর্তমান সরকারের মেয়াদ। এই মেয়াদের পর তাহলে কে প্রধানমন্ত্রী হবেন- তা নিয়ে এখনই আওয়ামী লীগে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। তবে আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, আগামী নির্বাচন তো অনেক পরের বিষয়।

নির্বাচনের আগেই আগামী অক্টোবরে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দলের সভাপতি বিভিন্ন নেতাদের কাছে খোলামেলাভাবেই বলেছেন যে এই অক্টোবরে কাউন্সিল অধিবেশনেই তিনি সভাপতির পদ ছাড়তে চান এবং দলে আনতে চান নতুন নেতৃত্ব। যদিও এমন অভিপ্রায় তিনি আগেও করেছিলেন। কিন্তু দলের নেতাকর্মী এবং কাউন্সিলরদের আবেগ আর আপত্তির মুখে তিনি সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেন। এবার তিনি তাঁর অবস্থানে অনঢ় বলেই জানা গেছে। তবে আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় একজন নেতা বলছেন, আগামী কাউন্সিলেই শেখ হাসিনা হয়তো সভাপতির পদ ছাড়বে না। তিনি সভাপতির পদে থাকলেও ২০২৩ এর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না।

তিনি যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করেন তবে আওয়ামী লীগের দল পরিচালনা বা সংসদীয় গণতন্ত্রের রীতি অনুযায়ী সংসদে দল বিজয়ী বা পরাজিত যাই হোক- সংসদ নেতা বা নির্বাচনে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো নেতা প্রয়োজন হবে। সেই নেতা কে হবেন তা নিয়েও আওয়ামী লীগের মধ্যে নানা মত ও চিন্তাভাবনা শোনা যাচ্ছে। দলের একজন দায়িত্বশীল নেতা বলেছেন, আগামী অক্টোবরে কাউন্সিলের মাধ্যমেই আওয়ামী লীগ নতুন পথযাত্রা শুরু করবে। ঐ নেতা বলেছেন, অক্টোবরের কাউন্সিলে তিনি হয়তো সভাপতির পদ ছেড়ে নতুন নেতৃত্ব আনবেন। এই নেতৃত্বই ২০২৩ সালের নির্বাচনের জন্য দলকে নেতৃত্ব দেবে। এবং এখান থেকেই নতুন নেতৃত্বের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের পথচলা শুরু হতে পারে।

সেক্ষেত্রে তাদের যুক্তি হচ্ছে যে, ২০২৩ এর নির্বাচনের আগেই যদি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নির্বাচন না করেন, তখন হঠাৎ করে নতুন একজন নেতা দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে কিনা এবং দলের পুরো নেতৃত্বকে গ্রহণ করা কিছুটা সমস্যা হতেই পারে। এ কারণেই তারা চিন্তা করছেন যে আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী হয়তো অক্টোবরেই নতুন নেতৃত্বের একটা ইঙ্গিত দেবেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কে হবেন আওয়ামী লীগের নতুন নেতা। এ নিয়ে দলের মধ্যে নানারকম মত আর চিন্তাভাবনা আছে। তবে একটা ব্যাপারে সবাই একমত যে, বঙ্গবন্ধুর কোনো উত্তরাধিকারেরই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসা উচিৎ। কারণ আওয়ামী লীগ খুবই আবেগঘন এবং স্পর্শকাতর একটি রাজনৈতিক দল।

এখানে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের বাইরে অন্যকেউ নেতৃত্বে আসেল দলের অখণ্ড ঐক্য আর শৃঙ্খলা রাখা কঠিন হযে পড়বে। এবং এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের তৃণমূল থেকে শীর্ষ পর্যায়ের সব নেতাই মোটামুটি নিশ্চিত যে দলের নেতৃত্ব বঙ্গবন্ধুর পরিবার থেকেই আসছে। এক্ষেত্রে কে দলের নেতৃত্ব দেবেন এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, আগামী কাউন্সিলে হয়তো আওয়ামী সভাপতি শেখ হাসিনা নতুন নেতৃত্ব আনবেন। এক্ষেত্রে কাউন্সিলরদের পছন্দের ওপর তিনি বিষয়টি ছেড়ে দেবেন।

তবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন যে, সজীব ওয়াজেদ জয় যেহেতু গত ১০ বছর ধরে সরকার পরিচালনা এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রণয়নে বিভিন্নভাবে অবদান রাখছেন- তিনিই হয়তো আওয়ামী লীগের পরবর্তী নেতা হিসেবে আবির্ভূত হবেন। এর বিকল্প চিন্তাও আছে যে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলও নেতৃত্বে আসতে পারেন। তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মনোবিজ্ঞানী এবং এবং অটিজম বিষয়ে বিশ্বখ্যাত বিশেষজ্ঞ হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছেন। তিনিও দলকে সূচারুভাবে পরিচালনা করতে পারবেন বলে ধারণা অনেকের।

কেউ আবার দল পরিচালনায় শেখ রেহানার নামও নিচ্ছেন। তার নেতৃত্বেই হয়তো ২০২৩ সালে আওয়ামী লীগ আবার দল গঠন করবে। তবে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠরা বলছেন, সরাসরি রাজনীতিতে জড়ানোর ইচ্ছা শেখ রেহানার নেই। বরং তিনি বড়বোনের পাশে থেকেই তাকে সহযোগীতা করতে চান। এছাড়াও রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিকী ববির নামও আসছে পরবর্তী নেতৃত্বের জন্য।

তবে শেষপর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতা কে হবেন বা আদৌ শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব ছাড়বেন কিনা এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। একপক্ষ মনে করছেন, ২০২৩ সালের নির্বাচনে সরাসরি অংশগ্রহণ এবং প্রধানমন্ত্রীত্ব না করলেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই ঐ নির্বাচন হবে এবং তাঁর পছন্দের কাউকেই প্রধানমন্ত্রী করা হবে। তাদের মতে, শেখ হাসিনা আর আওয়ামী লীগ একে অন্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। ২০২৩ এর পরে হয়তো তিনি আর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে থাকবেন না।

কিন্তু আমৃত্যু তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিত্ব করে যাবেন বলে তারা প্রত্যাশা করেন। অনেকের ধারণা শেখ হাসিনা ছাড়া আওয়ামী লীগের এই জনপ্রিয়তা এবং অগ্রযাত্রা ধরে রাখা কষ্টসাধ্য হবে। এরপর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে হয়তো অন্য কেউ আসবে, কিন্তু যতদিন শেখ হাসিনা বেঁচে থাকবেন, তার নেতৃত্বেই এই দল পরিচালনা হবে। উৎস: বাংলা ইনসাইডার।

ad

পাঠকের মতামত