263423

মোদীর বার্তায় যুদ্ধের আশঙ্কা, পাকিস্তান বলছে পারমাণবিক হামলা

ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরে গাড়ি বোমা হামলায় দেশটির সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের (সিআরপিএফ) ৪৬ জন সদস্য নিহত হয়েছেন। হামলার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদ। পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিরা যত হামলা চালিয়েছে বৃহস্পতিবারের হামলাটিই তার মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী।এ ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে ভারত। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, যারা একের পর এক এই ধরণের ভুল করে চলেছেন, তাদের এই জন্য উপযুক্ত মূল্য দিতে হবে।তিনি বলেন, জঙ্গিরা বিরাট ভুল করে ফেলেছে। এই হামলার জন্য যাদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, আমি তাদের কথা দিচ্ছি তারা উপযুক্ত বিচার পাবে।

এদিকে দীর্ঘদিন ধরেই নয়াদিল্লী দাবি করে আসছে পাকিস্তান তার দেশে সক্রিয় এ জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে। জইশ-ই-মোহম্মদের ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞাও চেয়ে আসছে তারা। জঙ্গিগোষ্ঠীটির নেতা মাওলানা মাসুদ আজহারকে সন্ত্রাসীর তালিকায় রাখতেও ভারত অনেক দিন ধরেই জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে চাপ দিয়ে আসছে। তবে হামলার নিন্দা করলেও মাসুদ আজহারকে বিশ্ব সন্ত্রাসী ঘোষণা না করার ব্যাপারে আগের অবস্থানেই অনড় রয়েছে চীন।নরেন্দ্র মোদী পাকিস্তানকে ইঙ্গিত করে বলেন, আমাদের প্রতিবেশী দেশ যে রাস্তা দিয়ে চলছে তা তাদের ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে। সারা ভারতবাসী এই হিংসাত্মক ঘটনার উপযুক্ত জবাব দেবে। পৃথিবীর বহু দেশ এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে। এই আতঙ্কবাদী সমূলে উৎপাটিত করার জন্য সারা পৃথিবীকে একত্রে লড়াই করতে হবে।

ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়, ঘটনার পরে প্রধানমন্ত্রীর কথা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার শুরু হয়ে গিয়েছে। দেশটির অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি জানিয়েছেন, পাকিস্তানকে কূটনৈতিকভাবে কোণঠাসা করতে যা যা দরকার সমস্তটাই করবে ভারত। অপরাধীদের যোগ্য শাস্তি দেওয়া হবে।ইতোমধ্যে পাকিস্তানকে ১৯৯৬ সালে দেওয়া মোস্ট ফেভারড নেশনের তকমা প্রত্যাহার করে নিয়েছে ভারত। শুক্রবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাসভবনে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের পর এ ঘোষণা দেন অরুণ জেটলি। তিনি বলেন, সম্পূর্ণ রূপে একঘরে করে দেওয়া হবে পাকিস্তানকে।

সেনাবাহিনীর বরাত দিয়ে ভারতীয় আরেকটি অনলাইন গণমাধ্যম এবেলার খবরে বলা হয়েছে, হামলার ঘটনায় জাতীয় নিরাপত্তা বৈঠক করেছেন মোদী। এনএসএস প্রধান অজিত ডোভালও বৈঠকে বসেছেন।রয়টার্সের খবরে বলা হয়, জম্মু-কাশ্মীরে হামলার ঘটনায় দেশটিতে অবস্থিত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত সোহায়েল মাহমুদকে তলব করেছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।বিবিসির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় পাকিস্তানকে কঠিন শাস্তি দিতে প্রস্তুত আছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। কিন্তু প্রতিশোধ নেওয়ার এই পরিকল্পনা মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে বলা হচ্ছে। কারণ ভারত-পাকিস্তান উভয় দেশের পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। আর পাকিস্তান তো বারবারই সতর্কবার্তা দিয়ে রেখেছে যে, হামলা হলে তারা পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবে না।এদিকে ইসলামাবাদ কাশ্মীরে হামলার তীব্র নিন্দা ও উদ্বেগ জানিয়েছে এবং হামলা নিয়ে তাদের ওপর আসা সব ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

আনন্দবাজারের খবরে বলা হয়, হামলার ঘটনায় ব্যবস্থা নিতে ভারতের সেনাবাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন মোদী। তিনি বলেছেন, সেনাবাহিনীকে অবাধ ছাড়পত্র দিয়ে দেওয়া হয়েছে। পাল্টা আঘাত কবে করা হবে, কীভাবে করা হবে এবং কোথায় করা হবে, সে বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা দিয়ে দেওয়া হয়েছে সশস্ত্র বাহিনীকে।মোদীর এই মন্তব্যে ফের ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-এর জল্পনা শুরু হয়েছে। যেভাবে সেনা প্রত্যাঘাত করতে চায়, সেভাবেই করতে পারে- এ কথায় আবার অনেকে মনে করছেন এবার অন্য কোনও ধাঁচের সামরিক পদক্ষেপ নেবে কিনা ভারত। বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে চলছে আলোচনা ও বিশ্লেষণ।

বৃহস্পতিবার জম্মু-কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে পুলওয়ামা জেলার আওয়ান্তিপুরা এলাকায় হামলার ঘটনা ঘটে। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, সিআরপিএফের প্রায় ৭৮টি গাড়ি লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়। এতে সিআরপিএফর ৪৬ সদস্য নিহত হন।এর আগে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে উরির সেনা ছাউনিতে জঙ্গি হামলায় নিহত হয়েছিলেন ১৯ সেনাকর্মী। কিন্তু এবারের এ হামলা উরির ভয়াবহতাকেও ছাপিয়ে গেছে।

ad

পাঠকের মতামত