248699

শিক্ষককে হত্যার হুমকি সাবেক ছাত্রলীগ নেতার

উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। একজন সিনিয়র শিক্ষককে ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা কর্তৃক হত্যার হুমকির প্রতিবাদে আন্দোলনে শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এই হত্যার হুমকির সুষ্ঠু বিচার না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস, পরীক্ষাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের প্রশাসনিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছেন শিক্ষক, কর্মকর্তা কর্মচারীরা। অন্যদিকে অভিযুক্ত একজন শিক্ষককে বহিষ্কারের দাবিতে রাজপথে নেমেছেন ছাত্রলীগের ব্যানারে শিক্ষার্থীরা। ফলে শিক্ষক কর্মকর্তা আর কর্মচারীদের মুখোমুখি অবস্থানে শিক্ষার্থীরা। এই দুই পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে গোটা ক্যাম্পাসে। সংঘর্ষের আশঙ্কায় ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এদিকে শিক্ষককে ছাত্রলীগ নেতা কর্তৃক হত্যার হুমকির ঘটনা তদন্তে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দিয়েছেন ভিসি ড. আনোয়ার হোসেন। শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় কনফারেন্স রুমে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এই আশ্বাস প্রদান করে যারা যশোর শহরে বসে বিশ্ববিদ্যালয়কে অশান্ত করার হীন চেষ্টা করছেন তাদেরকে কঠোর হস্তে দমন করার জন্য সরকার ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ২১ লাখ টাকার ফার্নিচার সরবরাহকে কেন্দ্র করে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিপুল বিশ্ববিদ্যায়ের প্রভোষ্ট ও রিজেন্ড বোর্ডের সদস্য সিনিয়র শিক্ষক ড. ইকবাল কবির জাহিদকে মোবাইল ফোনে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।

এক পর্যায়ে তিনি প্রফেসর ড. জাহিদকে হত্যার হুমকি দেন বলে একটি মোবাইল কল রেকর্ড শুনিয়ে ড. জাহিদ সাংবাদিকদের কাছে এসব অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বিপুল বেনামে বিশ্ববিদ্যালয়ের টেন্ডারে অংশ নিয়ে ২১ লাখ টাকার ফার্নিচার সরবরাহ করে। যা অত্যন্ত নিম্ন মানের। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ওই নিম্ন মানের ফার্ণিচার বুঝে নিয়ে বিল ছাড় না করার কারণে তিনি ড. ইকবাল কবির জাহিদকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। একই সঙ্গে এই ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে তিনি গত সংসদ নির্বাচনের কাজে ব্যবহৃত নৌকা প্রতীক ক্যাম্পাস থেকে সরিয়ে ফেলার ঘটনাকে পুঁজি করে একটি মনগড়া বক্তব্য তৈরি করে একজন সিনিয়র শিক্ষককে হত্যার হুমকি প্রদানসহ তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছেন। এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারী আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছেন।

একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়কে বহিরাগত সন্ত্রাসী মুক্ত করার দাবিতে অনঢ় শিক্ষক সমাজ। এ দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. নাজমুল হাসান।এদিকে নৌকা প্রতীককে অপমাননা করার অপরাধে শিক্ষক ড. জাহিদ ইকবালের বিচারের দাবিতে ছাত্রলীগের ব্যানারে আন্দোলন শুরু করেছে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের একাংশ। তারা শিক্ষক ড. ইকবাল কবির জাহিদকে রাজাকার পরিবারের সদস্য এবং সাবেক শিবির নেতা বলে অভিহিত করে অবিলম্বে তার অপসারণ দাবি করেন। এসব দাবির পক্ষে বিপক্ষে শনিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পৃথক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে উভয় পক্ষ। পরে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ও ভিসি প্রশাসন পৃথক ভাবে এই বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

ভিসি ড. আনোয়ার হেসেন বলেন, আমার জীবন থাকতে কোন শিক্ষককে অপমাননাকারীরা এই ক্যাম্পাসে অবস্থান করতে পারবে না। শহর থেকে কলকাটি নাড়ার মাধ্যমে একটি মহল এই সম্ভাবনাময় বিশ্ববিদ্যালয়টিকে অচল করার চক্রান্ত করছে। এটা হতে দেওয়া হবে না। যারা নিম্নমানের ফার্ণিচার সরবরাহ করে গায়ের জোরে বিল আদায় করে নিতে চায় তারাই এই হত্যার হুমকি প্রদান করে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে শুধু নয় দেশের গোটা শিক্ষক সমাজকে কলুষিত করেছেন। তিনি এই ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করে দোষীদের চিহ্নিত পূর্বক শাস্তি নিশ্চিত করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীসহ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশিনের সহায়তা কামনা করেন।

এদকে উত্থাপিত অভিযোগ সম্পর্কে যোগাযোগ করা হলে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিপুল বলেন, এসবই মিথ্যা অবিযোগ। তিনি কোন দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন কাজের ঠিকাদার ছিলেন না। ২১ লাখ টাকার ফার্ণিচার সরবরাহের ঘটনা তিনি এই প্রথম শুনলেন। তিনি বলেন, শিক্ষক ড. ইকবাল কবির জাহিদ রাজাকার পরিবারের সদস্য। তিনি ছাত্রজীবনে শিবির করতেন। তার চাচা বিএনপি করেন। তিনি ড্যাবের নেতা। তার পরিবারের সদস্যরা এখনো জামাতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেওয়ার পর থেকে তিনি ছাত্রলীগকে সহ্য করতে পারেন না। নৌকা প্রতীককে তিনি অপমান করেছেন। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে এই সাবেক ছাত্র নেতা দাবি করেন।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারী আর ছাত্রলীগের ব্যানারে শিক্ষার্থীদের একাংশ প্রকাশ্যে অবস্থান গ্রহণ করায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। যে কোন সময় অপ্রীতিকর কোন ঘটনা ঘটার আশঙ্কায় ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল

ad

পাঠকের মতামত