248175

ঋণ পরিষোধ করতে চায় আশরাফকণ্যা রীমা!

নিউজ ডেস্ক।। মাথার উপর থেকে ছাদের শেষ অংশটুকুও উড়ে গেলো রীমার, কয়েকদিন আগে। যেদিন বাবা তার শেষ ঠিকানায় মায়ের কাছে চলে গেলেন। ঠেকাতে পারেনি রীমা তার বাবার অন্তিম যাত্রা। জোর করে তো সব হয় না, অংক কষেও চলে না জীবন। জীবনে যেমন থাকে অনেক যুক্তি অন্যায় আর অবিচার থেকে মুক্তির জন্য; ঠিক তেমনিভাবেই থাকে প্রেম, ভালোবাসা, আবেগ যা অংক বা যুক্তির ধার ধারে না। কর্কট রোগে মা ধরাধাম থেকে চিরবিদায় নেওয়ার পরে নিজের জীবনের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে রীমার বাবা। এর পিছনে কোন যুক্তি নেই, নেই অংকের কোন হিসাব নিকাশ। তাই মায়ের একই রোগে আক্রান্ত বাবার ওষুধে হয় অরুচি। রীমার বাবার পুরো হৃদয় আছন্ন করে থাকে রীমার গর্ভধারিণী মায়ের স্মৃতি যখন সে ছিল তাঁর প্রিয় মাতৃভূমি থেকে নির্বাসিত, বিতাড়িত। তাই মাত্র এক বছরের কিছু বেশি সময়ের ব্যবধানে মা-বাবা দু`জনকেই হারিয়ে একাকী সর্বহারার মত নিঃসঙ্গ হয়েছে রীমা। ২৩ অক্টোবর ২০১৭ আর ৩ জানুয়ারি ২০১৯ দুই বছরের দুটি তারিখ রীমার জীবনকে তথাকথিত আবেগহীন নিষ্ঠুর বাস্তবতার সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। ২০১৭ তে মা আর ২০১৯-এ বাবা চলে গেলেন না ফেরার দেশে যার সেই মেয়েটি আর কেউ নয় আমাদের প্রিয় সদ্যপ্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ও তাঁর স্ত্রী শীলা ইসলামের একমাত্র সন্তান সৈয়দা রীমা ইসলাম।

মেয়ের চোখেই বাবারাই হচ্ছেন তাদের জীবনের আদর্শ পুরুষ। তাই যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরে জন্ম ও বেড়ে ওঠা রীমা কীভাবে এই জোড়া শোক সইবে এ প্রশ্ন স্বজনসহ দেশের তাবৎ মানুষের মনে। রীমার পৃথিবী মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। সে জানতো তাঁর বাবাকে বাংলার অধিকাংশ মানুষ ভালোবাসে, কিন্তু কতটুকু ভালোবাসে তাঁর আন্দাজ ছিল না রীমার, মানে ভালো করে জানা ছিল না তাঁর। জানার মাঝে ছিল অনেক ঘাটতি। বাবার মৃত্যুতে সে দেখেছে তাঁর বাবার জন্য কত মানুষ চোখের জলে বুক ভাসিয়েছে। কত লোক প্রিয়জন হারানোর শোকে মাতম করেছে, শেষ যাত্রায় কীভাবে মানুষের ঢল নামে, ইতিহাস গড়ে। এ থেকেই সে ভাবতে শুরু করেছে বাবা তাঁর শুধু একার না, দেশের জন্যও ছিল প্রত্যাশার প্রদীপ। তাই তো সে মনের অজান্তেই দেশে ফিরে আসার কথা, একটা অবলম্বনের কথা ভাবছেন। সে মা হারিয়েছে কিন্তু মাসি আছে তাঁর এই বাংলায়। যে মায়ের স্নেহেই আগলে রাখবে তাঁকে। বাবার মৃত্যুর পরে সে যা দেখেছে তাতে সে বিশ্বাস করতে পারছে সে একা না। বঙ্গবন্ধুর সহচর হওয়ার কারণে, দেশের ভালো চাওয়ার কারণের তাঁর দাদুকে জেলখানায় হত্যা করা হয়েছে, শুনেছে সে। দাদুর রক্তের ঋণ আর বাবার প্রতি বাংলার মানুষের ভালোবাসা তাঁকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে, ঋণী করে দিয়েছে চরমভাবে। কী করবে সে এখন! বাবার অসমাপ্ত কাজ কি সে এগিয়ে নেবে বঙ্গবন্ধু কন্যার সাথে থেকে! মাঝে মাঝে চোখের লোনা জল মুছে শক্ত হতে চায় সে। আসবে কি সে ফিরে, এই বাংলায়, সেই মাটির কাছে, মানুষের কাছে! যারা তাঁর প্রাণপ্রিয় বাবার মৃত্যু শোকে মাতম করেছে তাদের কাছে, বাবার শরীরের ঘ্রাণ লেগে থাকা দেশের মাটিতে! ভেবে কূল পায় না রীমা।

সৈয়দ আশরাফের রক্তের উত্তরাধিকার রীমা জানতেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে তার বাবা একজন সৎ ও জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ। কিন্তু এতটা জনপ্রিয় ছিলেন, তা কখনও গভীরভাবে ভাবেনি সে। ব্যাংকক থেকে বাবার মরদেহ নিয়ে ঢাকায় অবতরণের পর শোকার্ত হাজারো নেতাকর্মী আর সাধারণ মানুষের আহাজারি দেখে রীমার চোখের জল বাধ মানেনি। জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় প্রথম জানাজায় হাজার হাজার মানুষের ঢল, কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানের দ্বিতীয় জানাজায় লক্ষ লক্ষ মানুষের উপস্থিতি এবং ময়মনসিংহ শহরে তৃতীয় জানাজায় লাখো মানুষের অংশগ্রহণ দেখে আবেগ ধরে রাখতে পারার কথা নয় রীমার মত মেয়ের পক্ষে, কতই বা বয়স তাঁর! তাই এমন একজন বাবার সন্তান হতে পেরে যুগপৎ গৌরব ও অহঙ্কারও অনুভব করে চোখের জল শুকিয়ে যায় তাঁর। দ্বিধা দ্বন্দ্বের দোলাচলে ভাসছে রীমা। ভাবছে একবার দেশে ছুটে গিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে গিয়ে বলি, ‘আমি কী করবো ফুপু, আমাকে বলে দাও, এই দেশ আমার দাদার, আমার বাবার, এই দেশ আমার। আমি আমার রক্তের ঋণ আমি কীভাবে শুধবো; এদেশের মাটি আর মানুষ যে আমাকে ঋণী করে দিয়েছে ফুফু”!  উৎস: বাংলাইনসাইডার।

ad

পাঠকের মতামত