186797

‘এমন অনেক মেয়েকে চিনি, যারা ধর্ষণের শিকার’

যুক্তরাজ্যের সংগীত জগতে যৌন হয়রানি খুবই ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে রয়েছে, যেখানে ক্ষমতাশালী লোকজন অহরহ এসব ক্ষমতার সুযোগ নেন। এই জগতের অন্ধকার দিক নিয়ে প্রথমবারের মুখ খুলেছেন কয়েকজন ভুক্তভোগী।

অ্যামি (পরিচয় প্রকাশ এড়াতে নামটি পরিবর্তন করা হয়েছে) ১৫ বছরে প্রথম এই জগতে পা রাখেন। তিনি বলেছেন, আমি অনেক ছোটবেলা থেকেই গান লিখতাম। একদিন একজন আমাকে ইমেইল করে জানালো, তিনি আমাকে সাহায্য করতে চান এবং আমার ম্যানেজার হতে চান। এরপর আমি তার সাথে কাজ করতে শুরু করি।

গান গেয়ে কিছুটা সফলতাও পান অ্যামি। কিন্তু তারপর থেকেই তার উপর নির্যাতন শুরু হয়। অ্যামি বলেছেন, ‘‘একদিন তিনি বলেন, তিনি আমার প্রেমে পড়েছেন এবং আমাকে তার বান্ধবী হতে হবে। না হলে তিনি আমার ক্যারিয়ার ধ্বংস করে দেবেন।”

এর পরের দুই বছর অ্যামির উপর ক্রমাগত নির্যাতন চালিয়ে যান ওই ব্যক্তি, যিনি এখনো সংগীত শিল্পের বড় অবস্থানে রয়েছেন। অ্যামি কি করতে পারবেন আর পারবেন না, তারও একটি তালিকা তৈরি করে দিয়েছিলেন তিনি। এমনকি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কথা বলতে বাধা দেয়া হতো তাকে।

কিছুদিন পর তার উপর যৌন সহিংসতাও শুরু হয়। একপর্যায়ে গান-টান ছেড়ে নয়টা পাঁচটার একটি চাকরি খুঁজে নেয়ার কথাও ভাবতে শুরু করেন অ্যামি।

কোলি হাউল বলেছেন, আমি এমন অনেকের কথা জানি, যারা সংগীত জগতে এসে ধর্ষণের শিকার হয়েছে পেশাজীবনের শুরুর দিকে অনেক ব্যক্তির দ্বারা শোষণের শিকার হয়েছিলেন গায়িকা, গীতিকার কোলি হাউল।

একবার একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা তার নিতম্ব চেপে ধরেন এবং বাজে প্রস্তাব দেন। তারপরেও নিজেকে ভাগ্যবতী বলে মনে করেন মিস হাউল। কারণ তিনি বলছেন, ‘আমি এমন অনেক মেয়েকে চিনি, যারা ধর্ষণের শিকার হয়েছে। কারণ এই শিল্পে অনেক পুরুষের কাছেই এমন ক্ষমতা রয়েছে যে, এরকম ঘটনার পরও তারা বহাল তবিয়তে টিকে থাকতে পারে।’

সংগীত ব্যবস্থাপক ২৯ বছরের ইয়াসমিন লাজোয়ি বলেছেন, সংগীত শিল্পে কাজ করা একজন নারীকে আপনি পাবেন না, যিনি কোনো না কোনোভাবে যৌন হয়রানি বা অপব্যবহারের শিকার হয়েছেন।

নিজের জীবনে যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার পর হতাশা থেকেই তিনি অন্য মেয়েদেরও এরকম নির্যাতনের তথ্য সংগ্রহ শুরু করেন। তিনি বলেছেন, ‘‘আমি প্রথমে ভেবেছিলাম, হয়তো যৌন হয়রানির কিছু তথ্য আমরা জানতে পারবো। কিন্তু কোম্পানি অফিসেই ধর্ষণ, তরুণীদের মুখমেহনে বাধ্য করা, বড় সংগীত কোম্পানির নিজস্ব অ্যাপার্টমেন্টে ধর্ষণ, নারীদের উপর হামলার মতো তথ্য আসতে শুরু করলো।”

২০ বছর পর নিজের উপর যৌন হয়রানির বিষয়ে মুখ খুলেছেন মিশেল ডে ভিরেস। বড় একটি সংগীত কোম্পানি কর্মজীবন শুরুর পর একজন বয়স্ক ব্যক্তির সঙ্গে তাকে একই অ্যাপার্টমেন্টে থাকতে দেয়া হয়। কিন্তু সেই ব্যক্তি নানাভাবে তাকে যৌন হয়রানি করতো। নগ্ন অবস্থায় তার রুমে চলে আসতো। একপর্যায়ে তার নিজেকে যৌন দাসীর মতো মনে হচ্ছিল।

একদিন তিনি মামলা করার জন্য আইনজীবীর কাছে যান। কিন্তু সেই আইনজীবী তাকে বলেন, তুমি যদি মামলা করো, তাহলে আর এই শিল্পে টিকতে পারবে না।

ad

পাঠকের মতামত