354491

পাঁচ প্রকারের কান্না : যার দোয়া সম্পর্কে সতর্ক থাকতে বলেছেন হযরত মোহাম্মদ সাঃ

ডেস্ক রিপোর্ট : ফিজিওলজিক্যাল কান্না, সারাক্ষন সব মানুষের এই কান্না চলে, এ কারণে আমাদের চোখ ভেজা থাকে, শুকায় না। এই কান্না না থাকলে যে রোগটি হয় তার নাম জোরগেন্স সিনড্রোম। এই কান্না কাঁদতে হয় না কারণ চোখ প্রতিদিন ৫ থেকে ১০ আউন্স এই ক্ষুদে কান্না তৈরি করে।

দ্বিতীয় : রিফ্লেক্স কান্না। গ্লিসারিন, পেঁয়াজ, আঘাত, চুলকানি, কিছুর খোঁচা, যন্ত্রণা, ধুলো, কঙ্কর, বাতাস, ধোঁয়া ও কাঁদানে গ্যাসের কারণে রিফ্লেক্স কান্না হয়। এই কান্নাও কাঁদতে হয় না, অবস্থা তৈরি হলে এমনি এমনি টপটপে কান্না শুরু হয়।

তৃতীয়:  আবেগের কান্না, এটির জন্যে দায়ী মস্তিষ্কের উপরী ভাগ। মানসিক বেদনা, আঘাত বা শোক, শারীরিক বেদনা, স্মৃতি কথা থেকে আবেগ সৃষ্টি হলে চোখের জল কান্না হয়ে গড়িয়ে পড়তে শুরু করে। গবেষণায় দেখা গেছে আবেগের কারণে নারী প্রতিমাসে ৫.৩ বার আর পুরুষ কাঁদে ১.৪ বার। আমি নিজে দুঃখের সিনেমা দেখলে বা দুঃখের গল্পে ২.৮ বার কাঁদি।

ধর্মীয় কান্না। ঈশ্বর বা সৃষ্টিকর্তার ভয়ে, ভালোবাসায়, প্রেমের আবেগে বা তাঁর কাছ থেকে করুণা পাবার আশায় যে কান্না সেটি এই গ্রূপের। আবেগী কান্না ব্রেইনের উপরী ভাগের অংশে নিয়ন্ত্রিত হয়, কিন্তু ধর্মীয় বিশ্বাসের কান্না মস্তিষ্কের অন্য একটি অংশ ‘পন্স’ থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়।

পঞ্চম: মজলুমের বা অত্যচারীতের কান্না। পুরো মস্তিষ্কের সব অংশ থেকে এই কান্নার উৎপত্তি হয়। এজন্যেই সম্ভবতঃ সব চেয়ে করুন ও শক্তিশালী হচ্ছে মজলুমের কান্না। মজলুম তার উপরে অত্যাচারের কথা মনে হলেই কেঁদে দেয়, তার চোখ থেকে অঝোর ধারায় পানি পড়তে থাকে।

আরবী শব্দ জুলুম এর অর্থ হলো নির্যাতন বা অবিচার। সাধারণ অর্থে কাউকে অন্যায়ভাবে শারীরিক, মানসিক, আর্থিক বা যেকোনো পন্থায় অবিচার বা নির্যাতন করাকে জুলুম বলে। জুলুমের আরেকটি সংজ্ঞা হলো, কোনো কিছু নিজ স্থান বাদ দিয়ে অন্য কোনো স্থানে প্রয়োগ করা বা রাখা। এই সংজ্ঞাটি ব্যাপক অর্থবহ। সব ধরনের জুলুম এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।
পবিত্র কোরআনের অসংখ্য আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন জুলুমের ব্যাপারে মানবজাতিকে সতর্ক করেছেন। ‘অচিরেই জালিমরা জানতে পারবে, তাদের প্রত্যাবর্তনস্থল কোথায় হবে।’ (সুরা শুআরা, আয়াত ২২৭) আরেক আয়াতে এসেছে, জালিমরা কখনো সফলকাম হয় না।’ –সুরা আনআম, আয়াত ৫৭।

আল্লাহ নিজের জন্যও জুলুমকে হারাম করেছেন। রাসুল (সা) হাদিসে কুদসিতে আল্লাহর কথা বর্ণনা করে বলেন,আল্লাহ বলেছেন, ‘হে আমার বান্দা, আমি নিজের ওপর জুলুম হারাম করেছি এবং তোমাদের জন্যও তা হারাম করেছি। অতএব তোমরা একে অপরের ওপর জুলুম কোরো না।’ (মুসলিম, হাদিস ৬৭৩৭)।

মানুষের অধিকার হরণ করা ও তাদের ধন-সম্পদ আত্মসাৎ করা অনেক বড় জুলুম। এই ধরনের জুলুম নিয়ে রাসুল (সা) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই যারা মানুষকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাআলা তাদের শাস্তি প্রদান করবেন।’ (মুসলিম, হাদিস ২৬১৩)।

জালিমের বিচার শুধু কিয়ামতের দিবসেই হবে না, বরং দুনিয়া থেকেই আল্লাহ তাআলা তাদের জুলুমের প্রতিদান দেওয়া শুরু করেন। রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, ‘দুটি পাপের শাস্তি আল্লাহ তাআলা আখিরাতের পাশাপাশি দুনিয়ায়ও দিয়ে থাকেন। তা হলো, জুলুম ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার শাস্তি।’ ( তিরমিজি হাদিস ২৫১১)।

সমাজে যদি অত্যাচার,অনাচার, বিশৃঙ্খলা ও অস্থিরতা থাকে তার মূল কারণ হলো জুলুম। একে অপরের ওপর নানা রকম অবিচারের ফলে আল্লাহ মানুষের ওপর বিশৃঙ্খলার কষ্ট চাপিয়ে দেন। আল্লাহ বলেন, ‘জল ও স্থলভাগে যে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় তা মানুষের কর্মের ফলস্বরূপ।’
(সুরা রুম, আয়াত ৪১)।

মজলুম বা নিপীড়িতের দোয়া কখনো ব্যর্থ হয় না। তাই মজলুমের চোখের জল ও অন্তরের অভিশাপ অত্যন্ত শক্তিশালী পানি। মজলুমের আর্তনাদের ফলে আল্লাহর পক্ষ থেকে জালিমদের ওপর নেমে আসে কঠিন আজাব, তাদের সর্বপ্রকার অধঃপতন ত্বরান্বিত হয় দুনিয়াতে ও আখেরাতে।

রাসুল (সা) বলেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহর কাছ থেকে ফেরত আসে না। ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া, ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া এবং মজলুমের দোয়া। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদের দোয়া মেঘমালার ওপরে তুলে নেন এবং দোয়া পৌঁছার জন্য আসমানের দরজাগুলো খুলে দেন। মহান রব বলেন, আমার সম্মানের শপথ, কিছুটা বিলম্ব হলেও আমি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করব।’ (তিরমিজি হাদিস ৩৫৯৮)।

রাসুল (সা) বলেন, ‘তোমরা মজলুমের দোয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকো। কেননা মহান আল্লাহ ও তার দোয়ার মাঝে কোনো পর্দা থাকে না।’ (বুখারি হাদিস ১৪৯৬)।

আল্লাহ গাফুরুর রাহীমের কাছে দোয়া করি, হে আল্লাহ, আপনি আমাদেরকে সব ধরণের জালিমের অত্যাচার ও নিপীড়ন থেকে রক্ষা করুন এবং মজলুমের অভিসম্পাত থেকে বাঁচিয়ে রাখুন। আমিন

 

ad

পাঠকের মতামত