354445

মৌসুমীর প্রতারণার জাল

নিউজ ডেস্ক।। একাধিক বিয়ে করে স্বামীর কাছ থেকে বড় অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে বিচ্ছেদ নাটকের অভিযোগ উঠেছে আমেরিকা প্রবাসী এক সুন্দরী নারীর বিরুদ্ধে। এ কাজে সহযোগিতা করেন খোদ তার বাবা-মা।

অভিযুক্ত শারমিন সুরভী মৌসুমী বাবার বাড়ি সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট চুনাহাটি গ্রামে। তিনি এ গ্রামের যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী রফিকুর আর এম এ মুনিম ও ইমামা বেগম চৌধুরীর মেয়ে।

সুন্দরী মৌসুমীর ভয়ঙ্কর প্রতারণার শিকার হয়েছেন এক চিকিৎসক ও আরেক প্রবাসী যুবক। অবশেষে মৌসুমীর দ্বিতীয় স্বামী সিলেটের যুবক জাকির আহমদ আইনের আশ্রয় নিয়েছেন। মৌসুমী ও তার বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) এয়ারপোর্ট থানায়।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১৫ জানুয়ারি শারমিন সুরভী মৌসুমীর সঙ্গে ২১ লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য্যক্রমে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন জাকির। আগের বিয়ের তথ্য গোপন করে মেয়েকে কুমারী দেখিয়ে তার সঙ্গে বিয়ে দেন তা মা-বাবা। বিয়ের ১৩ দিন পর ২৮ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান মৌসুমী ও তার মা-বাবা।

যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর মৌসুমী, তার মা মোবাইল ফোনে কথাবার্তা বলতেন। ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। গত বছরের ২১ নভেম্বর মৌসুমী ফোন দিয়ে বলেন, তোমাকে যুক্তরাষ্ট্রে আনতে হলে মায়ের অ্যাকাউন্টে ২৫ লাখ টাকা দিতে হবে। এ খবর জানতে পেরে জাকেরকে তার মা বলেন, এতো টাকা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার দরকার নেই। তুমি সাইপ্রাসে ছিলে আবার সাইপ্রাসে চলে যাও।

এরপর ২৫ নভেম্বর আবারো মৌসুমী বাবা-মার পরামর্শে ফোনে দিয়ে বলেন, তুমি আমার জন্য সিলেটের উপশহরে বাসা ভাড়া করবে। দেশে গেলে ওই বাসাতে উঠবো। তোমার বাবা-মার সঙ্গে থাকবো না। জাকের স্ত্রীকে পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, মা-বাবার সঙ্গে থাকলে তোমার কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে মৌসুমীর মা ফোন নিয়ে বলেন, আমার মেয়ের কথা না শুনলে তোমার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখা হবে না।

এসব কথাবার্তা মৌসুমীর গ্রামের বাড়ি জৈন্তাপুরে গিয়ে স্বজনদের জানান জাকের। ওই সময় স্বজনদের মাধ্যমে জানতে পারেন- মৌসুমীর আরেক বিয়ে হয়েছিল। ২০১২ সালের ৩০ ডিসেম্বর ফরিদ আহমদ নামে এক চিকিৎসকের সঙ্গে মৌসুমীকে বিয়ে দিয়েছিলেন তার বাবা-মা। এ তথ্য তার কাছে গোপন রাখা হয়। ওই চিকিৎসকের ঔরসজাত একটি পুত্র সন্তানও রয়েছে। ২০১৫ সালের ৩ এপ্রিল সন্তান জন্ম দেন মৌসুমী।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হতে মৌসুমীর সাবেক স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন জাকের। ওই চিকিৎসক পরিবারও মৌসুমীর প্রতারণার ফাঁদে আর্থিক ও মানসিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে জানতে পারেন।

জানা যায়, অভিযুক্ত বাবা-মায়ের সম্মতিক্রমেই ডা. ফরিদের সঙ্গে মৌসুমীর বিয়ে হয় ৩০ লাখ টাকা দেনমোহরে। পরে বিভিন্ন অভিযোগ এনে মোহরানা আদায়ের জন্য পারিবারিক মামলা (নং-৩৯/২০১৮) দায়ের করেন মৌসুমী। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ১৫ মার্চ সোলেনামা দাখিলের মাধ্যমে তা নিস্পত্তি হয়।
চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি ডা. ফরিদের কাছ থেকে এসব ঘটনা জানতে পারেন জাকের আহমদ।

প্রতারণার শিকার জাকির বলেন, তার সঙ্গে ১৫ লাখ টাকার স্বর্ণালঙ্কার দিয়ে এবং দেনমোহর বাবদ ৬ লাখ টাকা মু’অজ্জল রেখে কাবিন সাব্যস্তক্রমে মৌসুমীর বিয়ে হয়। অভিযুক্তরা যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাওয়ার পর কাবিনের কপি সংগ্রহ করে দেখা যায়, তাতে ২১ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে। সেই সঙ্গে স্বর্ণালঙ্কারের ৬ লাখ টাকার পরিবর্তে এক লাখ টাকা কর্তন দেখান সুকৌশলে। আর আগের বিয়ের কথাও গোপন রাখা হয়েছে।

মূলত: আর্থিকভাবে লাভবান হতে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে মৌসুমীকে কুমারী দেখিয়ে বিয়ে দেন তার বাবা-মা। মেয়ে মা-বাবা প্রত্যক্ষ মদদে ভয়ঙ্কর প্রতারণা করেছেন জাকিরের সঙ্গে। যে কারণে শেষ পর্যন্ত আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন জাকির।

আদালতে করা অভিযোগের সঙ্গে মৌসুমীর পূর্ববর্তী নিকাহনামা, সাবেক স্বামীর বিরুদ্ধে পারিবারিক আদালতে মামলার (৩৯/২০১৮) কপি, আরজি, জবাব, সোলেনামা ও রায় ডিক্রির ছায়ালিপি, মৌসুমীর বর্তমান বিয়ের ছবি ও পরবর্তী বিয়ের নিকাহনামা ফিরিস্তি দিয়ে দাখিল করেছে জাকির।

আদালতের নির্দেশে তদন্তে সত্যতা পেয়ে এসএমপির এয়ারপোর্ট থানাপুলিশ মৌসুমী ও তার বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে বিশ্বাস ভঙ্গ করে প্রতারণার মাধ্যমে আগের বিয়ে গোপন করে বিবাহ সম্পন্ন করার অপরাধে মামলা (নং-৭(২)২০২১) দায়ের করেছে।

এসএমপির বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খান মুহাম্মদ মাইনুল জাকির মামলার তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন। উৎস: বিডি-প্রতিদিন

ad

পাঠকের মতামত