350165

ওবামা-ট্রাম্প-বাইডেন একে অন্যের চেয়ে ভয়ংকর: সোলাইমানির মেয়ে

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিদায়; নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ক্ষমতা গ্রহণে ইরানের প্রতি মার্কিন নীতিতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। রুশ গণমাধ্যম আরটি’কে দেয়া সাক্ষাতকারে এমনটাই দাবি করেছেন মার্কিন ড্রোন হামলায় ‍নিহত ইরানি কমান্ডার কাসেম সোলাইমানির মেয়ে জয়নাব সোলাইমানি।

‘বাইডেন এবং ট্রাম্পের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। তারা একইরকম। তারা একইনীতি অনুসরণ করে। তাদের মধ্যে কোনো অমিল নেই। ট্রাম্প আমার বাবাকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছে। বাইডেন ওই নির্দেশকে সমর্থন করেছে। সুতরাং কোনো পার্থক্য নেই।’

বুধবার প্রচার হতে যাওয়া আরটি’র আফশিন রতানসীর গোয়িং আন্ডারগ্রাউন্ড অনুষ্ঠানে জয়নাব এ কথা বলেন।

নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তিনি ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তিতে ফিরতে প্রস্তুত। আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচিত জয়েন্ট কমপ্রেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) থেকে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

জয়নাব সোলাইমানি বলেন, অতীত ইতিহাসের কারণে বাইডেনকে নিয়ে এখনও সন্দেহের অনেক কারণ রয়েছে। বারাক ওবামা প্রশাসন সন্ত্রাসীগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস যা আনুষ্ঠানিক নাম আইসিস) তৈরি করেছে। পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে বিপর্যয়ে ফেলে দিয়েছে। বাইডেন তাতে সমর্থন দিয়েছে। গেলো কয়েক দশক ধরে ইরানের প্রতি মার্কিননীতি একই রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্র প্রধান পরিবর্তন হওয়ার সঙ্গে সত্যি এর কোনো পরিবর্তন হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সমস্যা তাদের নীতি, যা পরিবর্তন হবে না। তারা একইরকম ব্যক্তি। একই তাদের মানসিকতা। তাদের কার্যক্রমও এক। এবং তারা একজন থেকে আরেকজন আরও ভয়ংকর।

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য পরিকল্পনাকে হুমকিতে ফেলেছিলেন জেনারেল কাসেম সোলাইমানি। এতে ওয়াশিংন ক্ষুব্ধ হয়েছে। তাই ট্রাম্প সোলাইমানিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছে। বলেন জয়নাব।

চলতি বছরের শুরুতে ইরাকের বাগদাদ ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দরের কাছে মার্কিন বিমান হামলায় নিহত হন কাসেম সোলাইমানি। এসময় তার গাড়িবহরে ইরাকের সামরিক বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা ছিলেন। কাসেম সোলাইমানি হত্যায় ইরানজুড়ে নজিরবিহীন শোক পালন করা হয়। শোক নেমে আসে ওই অঞ্চলের অন্যান্য দেশেও।

সোলাইমানিকে দানব হিসেবে অবিহিত করতো যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির জন্য সত্যিকার অর্থেই তিনি তাই ছিলেন। জয়নাব বলেন, তার বাবা দেশের এবং মধ্যপ্রাচ্যের সাধারণ মানুষকে রক্ষায় কাজ করেছেন।

আমার বাবা নিজেরে কাজগুলো খুব ভালো কাজে করেছেন। তাই তারা ক্ষুব্ধ হয়েছে। আপনি দেখবেন, মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে তারা যতগুলো পরিকল্পনা করেছে সবগুলো ভেস্তে গেছে। যেখানে তারা অনুপ্রবেশ করতে চেয়েছে, আঘাত করতে চেয়েছে, ইরান তা ব্যর্থ করে দিয়েছে। অবশ্যই আমার বাবা তাদের জন্য অনেক বড় দৈত্য। কিন্তু বাস্তবে আমরা বাবা মানুষের জীবন রক্ষায় কাজ করেছেন।

সোলাইমানিকে হত্যা কোনোভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের বিজয় নয়। এ হত্যাকাণ্ড যুক্তরাষ্ট্রকে পিছিয়ে দিয়েছে। ইরানসহ এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের মনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আরও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। এ হত্যাকাণ্ড অনেক সাধারণ মানুষকে সোলাইমানির পদাঙ্ক অনুসরণ করে যুক্তরাষ্ট্রকে মোকাবিলায় অনুপ্রাণিত করেছে; হুঁশিয়ার করেন জয়নাব।

‘আমার বাবাকে হত্যার পর যুক্তরাষ্ট্র মনে করেছে সবকিছু বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ তারা মধ্যপ্রাচ্যের শক্তি জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে মেরে ফেলেছে। তারা ভুল। ভুল তাদের চিন্তা। জেনারেল সোলাইমানি শেষ হয়ে যায়নি; বরং সোলাইমানির অনুসারীদের যুগের শুরু হয়েছে।’ বলেন জয়নাব।

ইরানের প্রতি সবশেষ নৃশংসতা সম্পর্কেও সাক্ষাতকারে কথা বলেন জয়নাব। নভেম্বরের শেষ দিকে ইরানের শীর্ষ পরামণু বিজ্ঞানী হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। রাজধানী তেহরানের কাছে তাকে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডে সরাসরি কোনো মানুষ অংশ নেয়নি। স্যাটেলাইট, কৃত্রিম বুদ্ধমত্তা এবং স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবহার করে তাকে খুন করা হয়। জয়নাব বলেন, শুধুমাত্র দেশের কাজ করায় তাকে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছে।

‘তারা খুব সহজে, তার দেশে, তার স্ত্রীর সামনে তাকে খুন করেছে। কিভাবে তাদের সাহস হয়, আমাদের দেশে এসে, আমাদের মানুষকে রাস্তায় ফেলে, এতো সহজে হত্যা করে যায়?’

ad

পাঠকের মতামত