346821

জামাতে নামাজ আদায়ের গুরুত্ব

মুফতি আমিনুল ইসলাম -ইসলামের প্রতিটি বিধানেই দুনিয়া ও আখিরাতের অসংখ্য কল্যাণ নিহিত আছে। ঈমানের আলোয় উদ্ভাসিত প্রতিটি হৃদয় সেসব কল্যাণ উপলব্ধি ও অবলোকন করে। মুমিনের জীবনে ঈমানের পর আবশ্যকীয় একটি বিধান হলো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়। এর কল্যাণ বলে শেষ করা যাবে না। এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের পদ্ধতিগত বিধান হচ্ছেÑ জামাতে আদায় করা। এই বিধানটিরও তাগিদের সাথে বহুবিধ ফায়দার কথা হাদিস শরিফে উল্লেখ রয়েছে। যার কয়েকটি এখানে উল্লেখ করা হলো

জামাতে নামাজ আদায়ের তাগিদ দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা। ইরশাদ হয়েছে-‘তোমরা রুকুকারীদের সাথে রুকু করো’ (সূরা : বাকারা : ৪৩)। অর্থাৎ জামাতে নামাজ আদায়কারীদের সাথে নামাজ আদায় করো।
নবীজী সা: সারা জীবন জামাতে নামাজ আদায় করে দেখিয়েছেন, নামাজ জামাতে আদায় করতে হয়। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সা: সারা জীবন জামাতের সাথেই নামাজ আদায় করেছেন। এমনকি ইন্তেকালপূর্ব অসুস্থতার সময়ও জামাত ছাড়েননি। সাহাবায়ে কেরামের পুরো জীবনও সেভাবে অতিবাহিত হয়েছে (বুখারি-হাদিস : ৬৪৪)।

পুরুষের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজই জামাতে আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা, যা ওয়াজিবের সাথে তুলনীয় (অর্থাৎ এটি ওয়াজিবের কাছাকাছি) (মুসলিম, হাদিস : ১০৯৩)।

শরিয়ত অনুমোদিত কোনো ওজর বা অপারগতা ছাড়া জামাতে শরিক না হওয়া বৈধ নয়। যে ব্যক্তি জামাত ত্যাগে অভ্যস্ত হয়ে যায়, সে গুনাহগার হবে (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৬৪)।

জামাতে নামাজ আদায় করলে এক রাকাতে ২৭ রাকাতের সওয়াব লাভ হয়। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘জামাতে নামাজের ফজিলত একাকী নামাজের চেয়ে ২৭ গুণ বেশি’ (মুসলিম-১৪৭৭)।

জামাতে নামাজ আদায় করলে প্রতি কদমে নেকি লাভ হয় এবং গুনাহ মাফ হয়। সাথে একটি করে মর্যাদা বৃদ্ধি হয়। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, নবীজী সা: বলেছেন, যে ব্যক্তি উত্তমরূপে পবিত্রতা লাভ করে মসজিদে এসে নামাজ আদায় করে তার প্রতি কদমে একটি নেকি দেয়া হয়। একটি করে গুনাহ মাফ করা হয়। একটি করে মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয় (মুসলিম-১০৯৩)।

জামাতে নামাজ আদায় করলে প্রথম কাতারের সওয়াব লাভ করার সুযোগ হয়। নবীজী সা: ইরশাদ করেছেন, মানুষ যদি আজান এবং প্রথম কাতারে নামাজের সওয়াব জানতো তাহলে প্রয়োজনে লটারি করে হলেও তারা তা লাভ করতো (বুখারি- হাদিস : ৬১৫)।

জামাতে নামাজ আদায় করলে সারা রাত ইবাদতের সওয়াব লাভ করা যায়। রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ইশার নামাজ জামাতে আদায় করে সে যেন অর্ধরাত্রি ইবাদত করল। আবার যদি ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করে তবে সে যেন পূর্ণ রাত ইবাদত করল (মুসলিম-১৪৯১)।

জামাতে নামাজ আদায় করলে সারা দিন আল্লাহর হেফাজতে থাকা যায়। নবীজী সা: ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করে, সে আল্লাহর হেফাজতে থাকে। আল্লাহর হেফাজতে থাকা ব্যক্তিকে যে কষ্ট দেবে, আল্লাহ তাকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ-২/২৯)।

বিনা ওজরে জামাত পরিত্যাগকারীর নিন্দায় নবীজী কঠোর কথা বলেছেন। রাসূল সা: বলেন, ‘আমার প্রাণ যাঁর হাতে, তাঁর শপথ করে বলছি, আমার ইচ্ছা হয় আমি কাঠ সংগ্রহ করার নির্দেশ দেই আর নামাজের আজান দেয়ার জন্য হুকুম দেই। তারপর আমি এক ব্যক্তিকে হুকুম করি, যেন সে লোকদের নামাজের ইমামতি করে। আর আমি ওই সব লোকদের দিকে যাই, যারা নামাজের জামাতে হাজির হয়নি এবং তাদের বাড়িঘরগুলো আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেই’ (বুখারি, হাদিস : ৬১৮)।

তবে কিছু অপারগতার কারণে জামাতে উপস্থিত না হওয়ার অনুমতি আছে। যথা
১. যদি মুষলধারে বৃষ্টি হয় (বুখারি : ১১২৬)।
২. প্রচণ্ড ঠাণ্ডা, ঘর থেকে বের হলে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকলে জামাতে শরিক না হওয়ার অবকাশ আছে (বুখারি : ৬২৬)।
৩. রাস্তায় বেশি কাদা হলে (বদরুল মুনির : ৪/৪১৯)।
৪. অতি আঁধার হওয়া (জমউল জাওয়ামে : ১/৩০৫৮)।
৫. রাতে যদি অতিমাত্রায় মেঘ হয় (মুসনাদে আহমাদ : ৫৩০২)।
৬. অসুস্থ হলে (আবু দাউদ : ৪৬৪)।
৭. দৃষ্টিহীন ব্যক্তির জন্য (সহিহ বুখারি : ৬২৭)।
৮. এমন বৃদ্ধ, যিনি মসজিদে আসতে সক্ষম নন (ইবনে মাজাহ : ৭৮৫)।
৯. কোনো রোগীর সেবাশুশ্রƒষায় আত্মনিয়োজিত থাকলে (প্রাগুক্ত)।
১০. ঘন ঘন প্রস্রাব-পায়খানার বেগ হলে (তিরমিজি : ১৩২)।
১১. বন্দী অবস্থায় (ইবনে মাজাহ: ৭৮৫)।
১২. এক পা বা উভয় পা কর্তিত হলে (আবু দাউদ : ৪৬৪)।
১৩. এমন রোগ হওয়া, যার কারণে চলতে অক্ষম। যেমন অর্ধাঙ্গ রোগ ইত্যাদি (প্রাগুক্ত)।
১৪. খানা সামনে, সেও ক্ষুধার্ত, মনের আকর্ষণ খানার দিকে। এমন অবস্থায় জামাতে না গেলেও চলবে (সহিহ বুখারি : ৬৩১)।
১৫. সফরের প্রস্তুতি গ্রহণের সময় (সহিহ বুখারি : ৩/৬৭)।
১৬. জামাতে নামাজ আদায় করতে গেলে কোনো সম্পদ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকলে জামাত ত্যাগ করতে পারবে (আবু দাউদ : ৪৬৪)।
১৭. জামাতে যাওয়ার কারণে ট্রেন, ফ্লাইট বা গাড়ি চলে যাওয়ার আশঙ্কা হলে জামাতে শরিক না হওয়ার অনুমতি আছে (আবু দাউদ : ৪৬৪)।

উল্লেখ্য, মহিলাদের জন্য মসজিদ থেকে ঘরে নামাজ আদায় করা উত্তম।
মসজিদে না গিয়ে বাড়িতে নামাজ পড়বে। এটাই নবীজীর পছন্দ। সুতরাং মহিলারা বাড়িতে আদায় করবেন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে তাওফিক দান করুন। আমীন।
লেখক : মুহাদ্দিস, জামেয়া রাহমানিয়া দারুল ইসলাম, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা

ad

পাঠকের মতামত