346551

যানজট কমাতে মাটির নিচে চলবে গাড়ি

ঢাকা মহানগরীর যানজট কমাতে এবার সাবওয়ে নির্মাণের পথ উন্মুক্ত হচ্ছে। এর ফলে মাটির নিচ দিয়ে চলবে গণপরিবহন। সড়কে ১০০ বাসে ঘণ্টায় ১০ হাজার যাত্রী চলাচল করতে পারেন। পাতাল রেল হলে সাবওয়েতে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী চলাচল করতে পারবেন। তা ছাড়া এতে সড়কের ওপর চাপ থাকবে না। এ রকম বিবেচনায় সাবওয়ে নির্মাণের সমীক্ষা চলছে। এরই মধ্যে ১১টি রুট চিহ্নিত করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী মো. ফেরদৌস এ বিষয়ে আমাদের সময়কে জানান, নগরীর যানবাহনের চাপ সামলাতে সাবওয়ে নির্মাণ করা হবে। বর্তমানে ফিজিবিলিটি স্টাডি চলছে। এর পর অর্থায়নের চেষ্টা করা হবে।

জানা গেছে, প্রতিটি শহরে সড়কের আদর্শ মান ২০-২৫ শতাংশ; কিন্তু ঢাকায় তা মাত্র ১৫-২০ শতাংশ। রাজধানীতে গাড়ির ধারণক্ষমতা তিন লাখ হলেও চলছে ১০ লাখেরও বেশি। তাই সাবওয়ের দিকে হাঁটছে সরকার। এর নির্মাণখননে অত্যাধুনিক টানেল বোরিং মেশিন ব্যবহৃত হয়। এতে জনদুর্ভোগ খুবই কম। তা ছাড়া উড়াল সড়ক বা সেতুর সম্ভাব্য আয়ুষ্কাল ৫০-৭৫ বছর হলেও সাবওয়ের স্থায়িত্বকাল ১০০ থেকে ১২৫ বছর। আর উন্নত শহর সিউল, লন্ডন, নিউইয়র্ক, সানফ্রান্সিসকো, বাগোতার মতো শহরে উড়াল সড়ক, ফ্লাইওভার বা ভায়াডাক্ট অপসারণ করে এখন সাবওয়ে নির্মাণ করছে। ২৫১ কিলোমিটার দীর্ঘ সাবওয়ে নেটওয়ার্কের অধীনে প্রাথমিকভাবে ৯০ কিলোমিটারকে বাস্তবে রূপ দেওয়া হবে।

এ প্রকল্পের সমীক্ষা প্রকল্পে যুক্ত পরামর্শকের পক্ষ থেকে ১১টি রুট চিহ্নিত করা হয়। সম্প্রতি সেতু বিভাগে রুটের তালিকা পাঠানো হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, রুট বি হিসেবে গাবতলী-ভোলাব ইউনিয়ন রোড ৩০ দশমিক ৫১ কিলোমিটার দীর্ঘ সাবওয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। রুটগুলো হচ্ছে- গোলারটেক, তুরাগ সিটি, জাতীয় চিড়িয়াখানা, মিরপুর-১১, কালশি মোড়, মাটিকাটা রোড, বিমানবাহিনী সদর দপ্তর, বারিধারা ডিওএইচএস, ফিউচার পার্ক, বসুন্ধরা ব্লক-ডি, বসুন্ধরা ব্লক আই অ্যান্ড জে, বসুন্ধরা সাউথ, বসুন্ধরা ব্লক-এম, বসুন্ধরা ব্লক-এন, মাস্তুল, ডেলনা, টোলনা, পূর্বাচল সেক্টর-১৫, পূর্বাচল সেক্টর-১৮, পূর্বাচল সেক্টর সেন্ট্রাল, পূর্বাচল সেক্টর-১৯, পূর্বাচল সেক্টর-২১, পূর্বাচল সেক্টর ইস্ট, পূর্বাচল মালুম সিটি ও ভোলাব ইউনিয়ন রোড।

রুট ডি হিসেবে কেরানীগঞ্জের ভাওয়াল থেকে ঠুলঠুলিয়া (ইস্ট খিলগাঁ) পর্যন্ত ১৫ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার ধরা হয়েছে। সেখানে থাকবে ২৪টি স্টেশন। রুটটি হচ্ছে- আটি ভাওয়াল, চান্দিপুর, আটিবাজার, ভাঙ্গাবাড়ি ব্রিজ, হাজারীবাগ, জিগাতলা, সায়েন্সল্যাব, শাহবাগ, কাকরাইল, রাজারবাগ, বাসাব, আবদুল আজিজ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ ও ইস্ট নন্দিপাড়া।

গাবতলী থেকে বসুন্ধরা রিভারভিউ পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার পথের জন্য ১৫টি স্টেশন। এটি রুট জি হিসেবে চিহ্নিত। রুটগুলো হচ্ছে- গাবতলী, আদাবর, মোহাম্মদপুর, নিউ চৌরাস্তা মোড়, শঙ্কর, হাজারীবাগ, শহীদ শেখ রাসেল হাইস্কুল, নবাগঞ্জ পার্ক, লালবাগ, মিটফোর্ড গেট, সদরঘাট, মিল ব্যারাক, শ্মশান ঘাট, বসুন্ধরা ভিউ নর্থ। রুট জে হিসেবে চিহ্নিত গাবতলী-পূর্বাচল নর্থ। ২৯ দশমিক ৪০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ সাবওয়েতে ২৫টি স্টেশন থাকবে।

প্রস্তাবিত অ্যালাইনমেন্ট- হাজারীবাগ, মোহাম্মদপুর, নবদয় হাউজিং সোসাইটি, রামচন্দ্রপুর, গুলশান, মহাখালী, ফ্যালকন, বিজয় সরণি, কলেজ গেট-১, বাড্ডা, নামাপাড়া, সাঁতারকুল, সানভ্যালি নর্থ, পশ্চিম হারারদিয়া, কায়েমসার, বরুনা, জলসিঁড়ি সেক্টর-৪, জরসিঁড়ি সেক্টর-১৫ সাউথ, জলসিঁড়ি সেক্টর-১৫ নর্থ, জলসিঁড়ি সেক্টর-১০, পূর্বাচল সাউথ, পূর্বাচল সেক্টর-২, পূর্বাচল সেক্টর-১০, পূর্বাচল সেন্ট্রাল। সাবওয়ের ‘ও’ রুট হিসেবে বলা হয়েছে টঙ্গী জংশন থেকে ঝিলমিল এলাকাকে।

২৮ দশমিক ৭১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ রুটে ২৭টি স্টেশন থাকবে। টঙ্গী জংশন, টিএসএস, মাছিমপুর, উত্তরা সেক্টর-১০, উত্তরা সেক্টর-১৩, উত্তরা সেক্টর-১৪, নর্থ বাউনিয়া, উত্তরা সেক্টর-১৭, সাগুফতা নিউ রোড, কালশী মোড়, পলাশনগর, ভাসানটেক সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, কচুক্ষেত, রজনীগন্ধা মার্কেট, রাওয়া, মহাখালী, বিজিপ্রেস, হাতিরঝিল, রমনা, কাকরাইল, গুলিস্তান, নয়াবাজার, সদরঘাট, খেজুরবাগ, মুসলিমনগর, তেঘরিয়া বাজার ও ঝিলমিলের নেটওয়ার্ক।

রুট পি হচ্ছে শাহকবির মাজার, গাওয়ার, এয়ারপোর্ট, কুর্মিটোলা, আজিজ মার্কেট, মাটিকাটা রোড, ভাসানটেক বাজার, লেকভিউ পার্ক, গুলশান-২, গুলশান-১, পুলিশ প্লাজা, রামপুরা, তালতলা, বাসাবো, মুগদা, কমলাপুর, গোলাপবাগ, সায়েদাবাদ, মুরগীতলা সদরঘাট। শাহকবির মাজার রোড থেকে সদরঘাট পর্যন্ত এ রুটের দৈর্ঘ্য ২২ দশমিক ৯৯ কিলোমিটার। এতে স্টেশন থাকবে ২০টি।

রুট এস নাম দেওয়া হয়েছে কেরানীগঞ্জ থেকে সোনাপুর সাবওয়ের। ১৯ দশমিক ৫০ কিলোমিটার এ পথেও থাকবে ২০টি স্টেশন। কেরানীগঞ্জ, কামরাঙ্গীরচর, শহীদনগর, লালবাগ, চকবাজার, নয়াবাজার, দয়াগঞ্জ, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, ধনিয়া, রায়েরবাগ, মাতুয়াইল, সাইনবোর্ড, সানারপাড়, মৌচাক, চিটাগাং রোড, কাঁচপুর ও সোনাপুর হচ্ছে এর রুট।

রুট টি হিসেবে থাকবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত। ৪৭ দশমিক ৫৪ কিলোমিটার এ পথে ৪৪টি স্টেশন থাকবে। রুটগুলো হচ্ছে- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, আদর্শনগর, কলমা, আকুপাড়া, আশুরিয়া মডেল টাউন ওয়েস্ট, আশুলিয়া মডেল টাউন সেন্ট্রাল, আশুলিয়া মডেল টাউন ইস্ট, বিনোদপুর, উত্তরা সেক্টর-১৬, উত্তরা নর্থ, উত্তরা সেক্টর-১২, উত্তরা সেক্টর-১৩, আযমপুর রোড, আযমপুর কাঁচাবাজার, শাহকবির মাজার রোড, নোয়াপাড়া (দক্ষিণখান), নদ্দাপাড়া (দক্ষিণখান), বরুয়া নর্থ, বরুয়া সাউথ, পিওএইচএস, বসুন্ধরা ব্লক কে অ্যান্ড এল, বসুন্ধরা সাউথ, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, মেরুল ব্রিজ, সানভ্যালি নর্থ, আফতাবনগর নর্থ, আফতাবনগর ইস্ট, ওয়েস্ট নন্দীপাড়া, গ্রীন মডেল টাউন, মাতুয়াইল উত্তরবন্দ, মাতুয়াইল উত্তরপাড়া, শনিরআখড়া, রায়েরবাগ, ইস্ট মোহাম্মদবাগ, আদর্শনগর, শিবু মার্কেট, ডিসি অফিস নিউ কোর্ট ও চাষাঢ়া।

রুট ইউ ধরা হয়েছে তেঘরিয়া বাজার-নারায়ণগঞ্জ। ১৩ দশমিক ৮৩ কিলোমিটারের এ রুটে আটটি স্টেশন থাকবে। তেঘরিয়া বাজার, স্টেশন (এসটি) ০২, বসুন্ধরা রিভারভিউ সাউথ, এসটি০৪, এসটি০৫, এসটি০৬, নারায়ণগঞ্জ ও এসটি০৮। রুট ভি হচ্ছে টঙ্গী জংশন থেকে কোনাবাড়ী। ১০ স্টেশনের এ রুটের দৈর্ঘ্য ১০ কিলোমিটার। টঙ্গী জংশন, চেরাগআলী মার্কেট, এসটি০৫, এসটি০৬, এসটি০৭ ও কোনাবাড়ী।

রুট ডব্লিউ হচ্ছে- গাবতলী থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। ১৫ দশমিক ৫২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ রুটে ছয়টি স্টেশন থাকবে। রুটগুলো হচ্ছে- গাবতলী, এসটি০২, এসটি০৩, এসটি০৪, এসটি০৫, এসটি০৬, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও এসটি০৮। প্রসঙ্গ, এসটি তথা স্টেশন লেখা গন্তব্যে এখনো স্টেশন চূড়ান্ত হয়নি। তাই এসটি লিখে রাখা হয়েছে।

সরকারের সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (আরএসটিপি) অনুযায়ী এমআরটি লাইন-১ (নদার্ন), এমআরটি লাইন-৫ (সাউদার্ন) ও এমআরটি লাইন-৬ এর অ্যালাইনমেন্টের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সাবওয়ে নেটওয়ার্ক তৈরির সিদ্ধান্ত হয়।

ad

পাঠকের মতামত