344474

রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য প্রায় ১৭০০ কোটি টাকা দেওয়ার ঘোষণা আমেরিকার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রোহিঙ্গা শরণার্থী দাতা সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে ও এই অঞ্চলে বসবাসরত রোহিঙ্গা শরণার্থী ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি বার্মায় অভ্য’ন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা এবং সহিং’সতায় ক্ষ’তিগ্র’স্ত বার্মার অন্যান্য সম্প্রদায়ের জন্য মানবিক সহায়তা হিসেবে অতিরিক্ত ২০০ মিলিয়ন ইউএস ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৭০০ কোটি টাকা) দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তা করার জন্য আয়োজিত দাতাদের ভার্চুয়াল সম্মেলন ‘সাসটেইনিং সাপোর্ট ফর দি রোহিঙ্গা রিফিউজি রেসপন্স’ অনুষ্ঠানে এই ঘোষণা দেওয়া হয় দেশটির পক্ষ থেকে। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত সম্মেলনটি যৌথভাবে আয়োজন করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর।

এই তহবিল বাংলাদেশে অবস্থিত রোহিঙ্গা শরণার্থী, স্থানীয় জনগোষ্ঠী এবং বার্মার রাখাইন রাজ্যে ২০১৭ সালের আগস্টে পরিচালিত জাতিগত নি’র্মূ’ল অভি’যান থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জীবন র’ক্ষামূলক সহায়তার কাজে ব্যবহার করা হবে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা স’ঙ্ক’ট মো’কাবেলায় এখনো পর্যন্ত অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে বড় ও উদার দাতা দেশ এবং একই সাথে যুক্তরাষ্ট্র এই শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশের অবদানকে স্বীকার করে। কভিড-১৯ মহামা’রি মোকাবেলায় ৪৬ মিলিয়ন ডলারসহ ২০২০ অর্থবছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত আমাদের মানবিক সহায়তার পরিমাণ ৪৩৭ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি।

এর মধ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিভিন্নও কর্মসূচির জন্য ৩৪৯ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রয়েছে। যার মধ্যে কভিড-১৯ মোকাবেলায় ৩৪ মিলিয়ন ডলার রয়েছে। আর বার্মার অভ্যন্তরে বিভিন্নও কর্মসূচির জন্য ৮৫ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ যার মধ্যে কভিড-১৯ মোকাবেলায় ১১ মিলিয়ন ডলার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই নতুন তহবিলসহ ২০১৭ সালের আগস্টে সহিং’সতা শুরু হওয়ার পর থেকে রোহিঙ্গা স’ঙ্ক’ট মো’কাবেলার জন্য মানবিক সহায়তা হিসেবে আমরা বাংলাদেশ, বার্মা ও এই অঞ্চলে প্রায় ১.২ বিলিয়ন ডলার দিয়েছি।

বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, এই সহায়তার মাধ্যমে আমাদের অংশীদার মানবিক সংস্থাগুলো বর্তমানে জাতীয় এবং স্থানীয় পর্যায়ের সকল ক্ষেত্রে কাজ করছে। খাদ্য; পুষ্টি; আশ্রয়; কমিউনিটির সাথে যোগাযোগ; কৃষি; দুর্যোগের জন্য প্রস্তুতি ও ঝুঁ’কি হ্রা’স; শিক্ষা; জরুরি টেলিযোগাযোগ; স্বাস্থ্য; উপকরণ-সরবরাহ; সুর’ক্ষা (জেন্ডারভিত্তিক সহিং’সতা মো’কাবেলা ও শিশু সুর’ক্ষাসহ); জীবিকা পুনরু’দ্ধার ও নতুন জীবিকার ব্যবস্থা করা; বহুমুখী কাজের জন্য নগদ অর্থ প্রদান; এলাকার ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন এবং পানি, পয়ঃনি’ষ্কা’শন ও স্বাস্থ্যবিধি পালনের ক্ষেত্রে কাজ করছে।

বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পে বলেন, যেসব কর্মসূচির সফলতার ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত সেসব কর্মসূচিতে আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে, যেমন ইউএনএইচসিআর, আইওএম, ইউনিসেফ, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি, জাতিসংঘের মানবিক সহায়তামূলক কার্যক্রমের সমন্বয়কারী সংস্থা ওসিএইচএ, ইন্টারন্যাশনাল রেড ক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেট মুভমেন্ট এবং অসংখ্য বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) জীবন র’ক্ষাকারী কার্যক্রম এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সফলতার যাদের প্রমাণিত দক্ষতা রয়েছে।

আমরা যুক্তরাজ্য, ইইউ এবং ইউএনএইচসিআর-এর সাথে মিলে যেসব দাতারা সহায়তা ঘোষণা করেছেন তাদের সাধুবাদ জানাই। অন্যদেরকেও রোহিঙ্গা স’ঙ্ক’ট মো’কাবে’লায় তহবিল নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই। দীর্ঘস্থায়ী অংশীদারদের পাশাপাশি নতুন ও আগ্রহী সকল দাতাদের প্রতি আমার এই আহ্বান। জাতিসংঘ এ বছর বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক চাহিদা মেটাতে ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি সাহায্যের আবেদন করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র তার অংশীদারদের সাথে রাখাইন অঞ্চলে অব্যাহত সহিংসতা নিরসনে কাজ করছে এবং দীর্ঘদিন ধরে অস্থিরতায় ইন্ধন দেওয়া মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান বন্ধের উদ্যোগ নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন পম্পেও। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পে বলেন, বিশেষ করে জাতিসংঘের স্থায়ী সদস্যদের সহিংসতা নিরসনে এবং সহিংসতার শিকার মানুষদের সহায়তা করার বিশেষ দায়বদ্ধতা রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তায় অন্যান্য আঞ্চলিক অংশীদারদের উল্লেখযোগ্য অবদানকে স্বীকার করে এবং তা অব্যাহত রাখতে আহ্বান জানায়। আন্তর্জাতিক মানবিক নীতিমালার ভিত্তিতে আমরা একসাথে এই মানবিক সংকট সমাধানে বহুমুখী প্রচেষ্টা চালাবো। বিশ্বব্যাপী মানবিক কূটনীতিতে আমাদের নেতৃত্বের অংশ হিসেবে, আমরা বার্মার সকল ব্যক্তিকে বাধামুক্ত নিরব’চ্ছি’ন্ন ও টেকসই মানবিক সহায়তা দিতে বার্মার সরকারের প্রতি (সবসময়) আহ্বান জানিয়ে আসছি।

মাইক পম্পে আরো বলেন, এ ছাড়াও আমরা রোহিঙ্গা শরণার্থী ও অন্যান্য বাস্তুচ্যুত মানুষ যাতে তাদের জন্মস্থানে বা পছন্দের জায়গায় স্বেচ্ছায়, নিরাপদে, মর্যাদার সাথে এবং টেকসইভাবে ফিরে আসতে পারে সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পরিবেশ ও ব্যবস্থা তৈরির মাধ্যমে এই স’ঙ্ক’টের টেকসই সমাধানের জন্য আমরা কাজ করা অব্যাহ’ত রেখেছি।

ad

পাঠকের মতামত