315836

করোনা রোগীরা সাধারণ মানুষের মতো আচরণ করেন না, অভিজ্ঞতা জানালেন নার্স

নিউজ ডেস্ক।। হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) যে ধরনের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছেন, তা কোনোভাবেই ভুলতে পারছেন না জ্যাক স্যাভোয়ি নামে যুক্তরাজ্যের এক নার্স। সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের অ্যাকাউন্টে লাইফ সাপোর্টে থাকা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের মর্মান্তিক পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়েছেন তিনি। আক্রান্ত রোগীর সঙ্গে সেলফি তুলে সেগুলোও যোগ করেছেন পোস্টে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম দ্য মিরর তাদের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। এতে বলা হয়, এখনো করোনাভাইরাসকে মানুষ গুরুত্ব দিচ্ছেন না যে কারণে নিজের ফেসবুকে হৃদয়বিদারক পোস্টটি শেয়ার করেন জ্যাক স্যাভোয়ি।  কী লিখেছেন জ্যাক-

ফেসবুক পোস্টে জ্যাক স্যাভোয়ি লিখেন- যেদিন থেকে আমাদের দেশে মানে যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে লাগলো, আমি অনলাইন থেকে বিভিন্ন আর্টিকেল পড়ে দেখলাম, কীভাবে নিজেকে আরও সুরক্ষিত রাখা যায় সে ব্যাপারে। কারণ, একজন আইসিইউ নার্স হিসেবে আমার সুরক্ষা নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। আমি মানসিকভাবেও প্রস্তুত হতে থাকি। পিপিই যেভাবে পরিধান করা দরকার, নিয়ম মেনে সেটাও করছি। তবে এখানে কাজ করতে এসে এর আগে কখনো মানসিকভাবে এতটা ভয় পাইনি।

জ্যাক আরও লিখেন- করোনা আক্রান্ত রোগীরা স্বাভাবিক নয়; সাধারণ মানুষের মতো কোনো আচরণ তারা করে না। আর এই অস্বাভাবিক আচরণ তাদের যায় না ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের করোনা নেগেটিভ প্রমাণ হয়। ছবিতে আমাকে যে পিপিই পরে থাকতে দেখছেন, করোনা আক্রান্ত রোগী এই পরিস্থিতিতে সাধারণত কোনো মানুষকে দেখছে। যখন আমরা থাকছি না, তখন রোগী একাই থাকছে। সে কারণে করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে করোনা রোগীরা নেগেটিভ না হওয়া পর্যন্ত স্বাভাবিক আচরণ করতে পারছে না।

আমার হৃদয় বারবার ভেঙে যাচ্ছে। ভীষণ খারাপ লাগছে তাদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে। সেই সঙ্গে তাদের চোখেমুখে সারাক্ষণ একটা উৎকণ্ঠা লক্ষ্য করছি। একমাত্র এই রোগীদের ক্ষেত্রেই তাদের পরিবারের লোকজনকে আসতে দেওয়া হচ্ছে না। আবার তাদেরকে একপর্যায়ে লাইফসাপোর্টে নেওয়া হলেও আরেক ধরনের উদ্বেগ কাজ করছে। এই অসময়ে মানসিক শক্তি অনেক বেশি দরকার। কিন্তু করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেই মানসিক শক্তি নিজের থেকেই তৈরি করে নিতে হচ্ছে। আর তাকে এতে সহায়তা করছে নার্স ও ডাক্তাররা।

তিনি লিখেন- আমি এ ধরনের পোস্ট আর কখনোই লিখতে চাই না। এখনো বিশাল সংখ্যক মানুষ করোনাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। এসব খেয়াল করেই লিখতে হলো। এই ভয়াবহ পরিস্থিতি এড়াতে ঘরে থাকুন। নার্স থেকে শুরু করে হাসপাতালের কর্মীরা করোনা আক্রান্ত রোগীদের কেবিনে প্রবেশ করতেই এক ধরনের ভয় পাচ্ছে। আমি এবং আমার সহকর্মীরা ক্লান্ত। আমাদের মধ্যেও ভয় কাজ করছে। তারপরেও আমরা এই জনস্বাস্থ্য সঙ্কটের মধ্যেও কাজ করে যাবো। পরিস্থিতি নির্বিশেষে আমরা প্রতিটি দিনই রোগীদের জন্য লড়াই করবো। তবে দয়া করে বিনা প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে বের হয়ে নিজে এবং অন্যদের আক্রান্ত করে আমাদের লড়াইকে আরো কঠিন করে তুলবেন না। নিজে ঘরে থাকুন, কাছের মানুষদেরও ঘরে রাখতে চেষ্টা করুন এবং যারা আক্রান্ত হয়েছে এবং যারা আক্রান্তদের বাঁচাতে লড়াইয়ে নেমেছে- তাদের সবার জন্য দোয়া করুন।

ad

পাঠকের মতামত