315609

৮৭ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠনের প্রস্তাব বিএনপির

নিউজ ডেস্ক।। ক’রোনা’ভাই’রাসজনিত দুর্যোগ মোকাবেলায় বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সহায়তায় ৮৭ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি। একই সঙ্গে অবিলম্বে দেশের বরেণ্য অর্থনীতিবিদদের সমন্বয়ে একটি আপৎকালীন অর্থনৈতিক টাস্কফোর্স গঠনেরও দাবি জানিয়েছে দলটি।

গতকাল শনিবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের পক্ষে এই প্যাকেজ প্রস্তাব তুলে ধরেন।

প্রস্তাবনায় স্বল্পমেয়াদি খাতে ৬১ হাজার কোটি টাকা, মধ্যমেয়াদি খাতে ১৮ হাজার কোটি টাকা এবং অতিরিক্ত আরো আট হাজার কোটি টাকা রাখার কথা বলা হয়েছে। তবে দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তাবনায় সুনির্দিষ্টভাবে খাতওয়ারি বরাদ্দের কথা বলা হয়নি। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি খাতের আওতায় ২৭ দফার এই প্রস্তাবনার সুপারিশগুলো সরকার বরাবর বিএনপি প্রেরণ করবে বলে জানান মির্জা ফখরুল। একই সঙ্গে তিনি জানান, জাতীয় ও বৈশ্বিক মহাদুর্যোগ মোকাবেলায় সরকারের যেকোনো গঠনমূলক ও কল্যাণমুখী উদ্যোগে শামিল হতে বিএনপি প্রস্তুত রয়েছে।

সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘করোনা নিয়ে শুরু থেকে সরকারের উদাসীনতা আর লুকোচুরির কারণে জাতিকে চরম মূল্য দিতে হবে। এই মহাদুর্যোগের সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের অস্বচ্ছতার কারণে সবাই অন্ধকারে থাকলেও করোনা অন্ধকারে থাকবে না। এই দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে দম্ভ, অহংকার ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পরিহার করে সরকারকেই ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে।’ ফখরুল বলেন, ‘উদ্যোগটা পুরোটাই সরকারের। জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা এই দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হব।

তিনি বলেন, ‘বিএনপি প্রদত্ত সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের জন্য জিডিপির ৩ শতাংশ অর্থের সমন্বয়ে ৮৭ হাজার কোটি টাকার একটি বিশেষ তহবিল ঘোষণা করতে হবে। শাটডাউন প্রত্যাহার হলে নতুন করে একটি সংশোধিত আর্থিক প্যাকেজ প্রদান করতে হবে। যাতে সব সেক্টরের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সাধারণ ছুটির আগের অবস্থায় ফিরে আসতে সক্ষম হয়।’ করোনাভাইরাস সংক্রমণে দরিদ্র গৃহহীন দুস্থ জনগোষ্ঠীর মুখে খাবার তুলে দিতে দেশের জনহিতৈষী ও বিত্তবানদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বিএনপির দেওয়া স্বল্পমেয়াদি প্রস্তাবনার মধ্যে স্বাস্থ্য খাত এবং করোনা মোকাবেলায় যুক্ত হাসপাতাল ও সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রাথমিকভাবে ১৫ হাজার কোটি টাকা, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় যুক্ত চিকিৎসক-নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য স্বাস্থ্যবীমা চালু, চিকিৎসকদের জন্য এক কোটি, নার্সদের জন্য ৭৫ লাখ এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য ৫০ লাখ টাকার স্বাস্থ্যবীমার বিপরীতে প্রিমিয়াম সরকারকে বহন করা, দিন এনে দিন খায় ক্যাটাগরিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্তদের মুখে খাবার তুলে দিতে চাল-ডাল-লবণ-তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির ব্যবস্থা গ্রহণ এবং এপ্রিল-মে-জুন তিন মাসের জন্য জনপ্রতি ১৫ হাজার টাকা নগদ অর্থ বরাদ্দ, আশ্রয়হীনদের অস্থায়ী আবাসন ও প্রয়োজনে তাদের জন্য তৈরি খাবার সরবরাহে ন্যূনতম আট হাজার কোটি টাকা, গার্মেন্ট, প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর আওতায় শিল্প ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের সেবার জন্য আলাদাভাবে ১০ হাজার কোটি টাকা, কৃষকদের উন্নয়ন ও বীজসহ কৃষি উপকরণ সরবরাহ পাঁচ হাজার কোটি টাকা, এক বছরের জন্য পোল্ট্রিসহ সব ধরনের কৃষিঋণের কিস্তি ও সুদ মওকুফ, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সব ক্ষুদ্রঋণের কিস্তি আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত মওকুফ, প্রবাসী শ্রমিক যারা দেশে ফিরেছে তাদের জন্য এক হাজার কোটি টাকা, বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী খাতে দুই হাজার কোটি টাকা রাখার প্রস্তাব করছি।’

একইভাবে সংক্রামক মহামারির প্রসঙ্গ টেনে প্রস্তাবনায় বলা হয়, দেশে ইবোলা, ডেঙ্গু বা করোনাভাইরাসের মতো মহামারি মোকাবেলায় যথাযথ সক্ষমতা গড়ে তুলতে দক্ষ জনবল, পরীক্ষা কিট, পিপিই, ভেন্টিলেটর, আইসিইউ ও আধুনিক চিকিৎসা যন্ত্রপাতি সংবলিত পর্যাপ্তসংখ্যক পৃথক বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এরা যুদ্ধাবস্থার মতো যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় সর্বদা প্রস্তুত থাকবে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ভেন্টিলেটর নির্মাণ শিল্প গড়ে তোলা, ইউনিভার্সেল হেলথ কেয়ার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ প্রয়োজন, তা বাস্তবায়নে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বিএনপির ঘোষিত ভিশন-২০৩০ মোতাবেক জিডিপির ৫ শতাংশে উন্নীত করতে হবে।’

প্রস্তাবনার ২৭ দফার সুপারিশ তুলে ধরে তাদের সুপারিশগুলো জরুরি ভিত্তিতে বাস্তবায়নের জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট মহলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল। করোনা নিয়ে সরকারের অব্যবস্থাপনার অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেষ্টা করেও আইইডিসিআরের হটলাইনে ফোন করে সেবা নিতে ব্যর্থ হচ্ছে মানুষ। কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না। গত দুই মাসে আট লাখ মানুষ করোনা হটলাইনে টেস্টের জন্য ফোন করেছে। আইইডিসিআর ৭০ হাজারের ঊর্ধ্বে কল পেলেও ২৮ মার্চ পর্যন্ত এক হাজার ১০০ জনকে পরীক্ষা করেছে। তার মধ্যে ৪৮টি পজিটিভ পাওয়া গেছে। অর্থাৎ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বারবার তাগিদ সত্ত্বেও বাংলাদেশ সর্বনিম্ন টেস্টিং দেশগুলোর অন্যতম। অন্যদিকে বাংলাদেশে করোনায় মৃত্যুর হার বিধ্বস্ত ইতালির তুলনায় অনেক বেশি। বাংলাদেশে করোনায় মৃত্যুর হার ১০.৪ শতাংশ। অথচ ইতালিতে করোনায় মৃত্যুর হার ১০.২ শতাংশ। এটা উদাসীনতা নাকি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তা আমাদের বোধগম্য নয়।’ উৎস: কালের কণ্ঠ।

ad

পাঠকের মতামত