303735

মেধাবী ছাত্র রেজওয়ানের তুলে নেওয়া তিন বছর পার, আজও অপেক্ষায় পরিবার

গুম হওয়া এক সন্তানের মা সেলিনা বেগম। এখন মানসিক ভারসাম্যহীন তিনি কলিজার টুকরো সন্তানের কথা ভেবে ভেবে আজ তিনি পাগল প্রায়। প্রতিটা মূহূতে তিনি আপেক্ষায় থাকের সন্তানের। দিন যায়,মাস যায়, চলে যায় বছর। কিন্তু মিজানুর ও সেলিনা বেগম অপেক্ষায় প্রহর যেন শেষ হয় না।

নিখোঁজ সন্তান রেজওয়ানের সন্ধান দাবি করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে মা সেলিনা বেগম বলেন, ‘আমার সন্তান যদি কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকে, তাহলে প্রচলিত আইনে তার বিচার করা হোক। কিন্তু তাকে যেন এক নজরদেখতে পাই সেই ব্যবস্থা করতে সরকার প্রধান। নিখোঁজ তিন বছর পার হলেও আজও সন্ধার মিলেনি রেজওয়ানের।

হুমকী, ধামকি আর বিচার না পাওয়ার সংশয় প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়নি পরিবার। এখন তারা আল্লার উপর বিচার দিয়ে সন্তানের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন। রেজওয়ানের অপরাধ তিনি ছাত্র শিবিরের আদর্শ রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন।

পরিবারের অভিযোগ প্রকাশে দিবালোকে পুলিশ পরিচয় রেজওয়ানকে ২০১৬ সালের ৪ আগষ্ঠ তুলে নিয়ে যায়। তিন বছর পূর্ণ হলেও তার কেন সন্ধান মেলেনি।

তবে পুলিশ সব সময় পরিবারের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। পরিবারের দাবি রেজওয়ানের (০১৮৪৫৯৪২৫৯০) মোবাইলটি এখনও মাঝে মাঝে চালু থাকে। পরিবারের পক্ষ থেকে কল দেওয়া হল। দুই মাস আগে এক দিন কল রিসিভ হলেও সে তার পরিচয় না দিয়েই ফোনটি রেখে দেয়।

মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাজনীতিবিদদের গুমের সংস্কৃতি শুরু হয়। এক সময় তা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যায়। কেউকে দিনের বেলায় আবার কাউকে রাতের আধারে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয় তাদেরকে তুলে নেওয়া হয়েছে বলে নিখোঁজদের স্বজনরা অভিযোগ করলেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তা মানতে নারাজ।

এমন নিখোঁজের তালিকায় আছেন যশোরের শার্শা উপজেলার বেনাপোল পোর্ট থানার বারোপোতা এলাকার মিজানুর রহমানের ছেলে রেজওয়ান। তিনি বাগআঁচড়া ডা.আফিলউদ্দিন ডিগ্রি কলেজের ইতিহাস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র থাকাকালে ‘অপহৃত’ হন। রেজওয়ান ছাত্রশিবিরের আদর্শের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। তিন বছরেও তার খোঁজ মেলেনি।

রেজওয়ানের পরিবার অভিযোগ করে বলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে রেজওয়ানকে গ্রেপ্তারের পর নিখোঁজ হলে দায় স্বীকার করেনি সরকারের কোন বাহিনী। উদ্ধারে কোন তৎপরতাও লক্ষ্য করা যায়নি। এ নিয়ে পরিবারটি কয়েক দফা সংবাদসম্মেলন করে সন্তানে সন্ধান চেয়েছেন। এখন তারা আল্লার উপর বিচার দিয়ে সন্তানের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন।

ভাই রিপন হোসেন অভিযোগ করেন, ২০১৬ সালের ৪ আগস্ট বেলা ১২টার দিকে রেজওয়ানকে বেনাপোল ভূমি অফিসের সামনে থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যরা তাকে জোর করে ধরে নিয়ে যায়। পরিবারের দাবি, ‘প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে জানতে পারি, বেনাপোল পোর্ট থানার এসআই নূর আলমের নেতৃত্বে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।’

সেদিনই পোর্ট থানায় যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু থানা পুলিশ রেজওয়ানকে আটকের বিষয়টি অস্বীকার করে। পরদিন বেনাপোল পোর্ট থানার একটি জিডি করা হয়। রেজওয়ান হোসেন সন্ধান চায় তার পরিবার। তবে পুলিশ সব সময় পরিবারের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

নিখোঁজ রেজওয়ানের মা ছেলের সন্ধান দাবি করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার সন্তান যদি কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকে, তাহলে প্রচলিত আইনে তার বিচার করা হোক। কিন্তু তাকে যেন এক নজরদেখতে পাই সেই ব্যবস্থা করতে সরকার প্রধান।

ভাই রিপন হোসেন বলেন, রেজওয়ানের (০১৮৪৫৯৪২৫৯০) মোবাইলটি এখনও মাঝে মাঝে চালু থাকে। পরিবারের পক্ষ থেকে প্রায় কল দেওয়া হল। প্রায় দুই মাস আগে একদিন কল রিসিভ হলেও তিনি পরিচয় দেননি।

তার পর আর কোন দিন ফোনকল রিসিভ করেনি। তিনি বলেন, রেজওয়ান গুম হওয়ার প্রায় এক বছর পর থেকে মোবাইল নম্বরটি চালু আছে। তবে বিষয়টি প্রশানকে জানাননি তিনি। কারন হিসাবে তিনি বলেন সে সময় প্রচন্ড হুমকী, ধামকি আর বিচার না পাওয়ার সংশয় প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়নি তিনি।

রেজওয়ানের বড় ভাই রিপন হোসেন জানান, তার ভাই ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু পরিবারটির অন্য কেউ কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন।

ad

পাঠকের মতামত