277588

মৃত্যুর ১০ বছর পর গ্রেফতারি পরোয়ানা!

নিউজ ডেস্ক।। গণতন্ত্রী পার্টির সাবেক সভাপতি নুরুল ইসলাম ও তার ছেলে ইসলাম তমোহর ১০ বছরেরও বেশি আগে রহস্যজনকভাবে আগুনে পুড়ে মারা যান। এ সংক্রান্ত মামলাটির তদন্ত এখনও চলছে। এর মধ্যে নুরুল ইসলামের নামে এসেছে একটি গ্রেফতারি পরোয়ানা! যদিও পুলিশ পরে এটিকে ‘ভুল’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে। তবে এ ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন নুরুল ইসলামের স্ত্রী ও মেয়ে। তাদের শঙ্কা, নুরুল-তমোহর ‘হত্যা’র পেছনে থাকা ব্যক্তিই হয়তো নতুন করে কোনো ষড়যন্ত্র করছেন ২০০৮ সালের ৩ ডিসেম্বর গভীর রাতে রাজধানীর লালমাটিয়ার বাসায় আগুনে পুড়ে মারা যান ইসলাম তমোহর। একই ঘটনায় গুরুতর দগ্ধ নুরুল ইসলামের মৃত্যু হয় পরদিন বিকেলে। ৬ ডিসেম্বর এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় হত্যা মামলা হয়। চার দফায় হাতবদল হয়ে এখন মামলাটির তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

রাজনীতিক নুরুল ইসলামের স্ত্রী সাবেক এমপি রুবী রহমান সমকালকে জানান, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি এএসআই জমির উদ্দিন তাকে ফোন করে বলেন, ‘নুরুল ইসলাম সাহেবের নামে ওয়ারেন্ট আছে।’ তখন তিনি পথে থাকায় ওই পুলিশ সদস্যের কথা ঠিকঠাক শুনতে পাচ্ছিলেন না। তাছাড়া বিষয়টি তার কাছে গোলমেলে বলেও মনে হচ্ছিল। এ কারণে তিনি পরে এ নিয়ে কথা বলতে চান। সেদিন সন্ধ্যায় তিনি ওই নম্বরে কল করলে জমির আবারও তার বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করেন। বিভ্রান্ত হয়ে রুবী তার স্বামীর মৃত্যুর তথ্য জানান। সেইসঙ্গে প্রশ্ন করেন, তার ফোন নম্বর কীভাবে পেল পুলিশ? উত্তরে জমির জানান, গ্রেফতারি পরোয়ানার সূত্র ধরে তিনি রাজধানীর তোপখানা রোডে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কার্যালয়ে যান। সেখানকার লোকজনই ফোন নম্বরটি দিয়েছেন। পরদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে দেখা করে এ নিয়ে কথা বলেন রুবী। এ সময় মন্ত্রী বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নেওয়ার আশ্বাস দেন। পরে শাহবাগ থানার ওসি ফোন করে বলেন, ভুল করে তাকে ফোন দিয়েছে পুলিশ। এটা একই নামের অন্য কারও গ্রেফতারি পরোয়ানা হয়ে থাকতে পারে।

রুবী রহমান বলেন, মৃত্যুর এত দিন পর গ্রেফতারি পরোয়ানা আসার বিষয়টিকে খুব সাধারণ ভুল বলে মনে হয়নি। কারণ নুরুলকে হত্যার আগেও এমন কিছু উড়ো ফোন আসত। আবারও এমন ফোন আসায় মেয়ে মৌটুসীকে নিয়ে দুশ্চিন্তা হচ্ছে। যদি এটা অন্য কোনো ব্যক্তির গ্রেফতারি পরোয়ানা হয়, তাহলে ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের ঠিকানায় আসবে কেন? ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র নুরুল ইসলামের হাতে গড়া সংগঠন। সেখানে এই নামে অন্য কেউ নেই। তা ছাড়া আমার ফোন নম্বর কে দিয়েছে সেটাও বলতে পারেননি এএসআই জমির। কেন্দ্রের যারা দায়িত্বশীল ব্যক্তি, তাদের কারও কাছ থেকেই তিনি নম্বর নেননি। সব মিলিয়ে একটি রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। নুরুল হত্যায় যাকে সন্দেহভাজন মনে করা হয়, প্রভাবশালী সেই ব্যক্তি এখনও বহাল তবিয়তে আছেন। তিনিই হয়তো নতুন কোনো ষড়যন্ত্র করছেন।

এ বিষয়ে জানতে শাহবাগ থানার অধীন ইউবিএল পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই জমিরের মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি ওসির সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান বলেন, আদালত থেকে পাঠানো এনআই অ্যাক্টের (চেক সংক্রান্ত) মামলার পরোয়ানা নিয়ে তোপখানা রোডের ঠিকানায় যায় পুলিশ। সেখানকার লোকজন নুরুল ইসলামের পরিবারের একটি ফোন নম্বর দেন। এরপর সেই নম্বরে কথা বলা হয়। পরে দেখা যায়, নাম বিভ্রাট ঘটেছে। এটা হয়তো একই ঠিকানার অন্য কোনো নুরুল ইসলামের পরোয়ানা। অথবা আশপাশের কারও। নুরুল ইসলামের মেয়ে মৌটুসী ইসলাম জানান, পুলিশ পরে তাকে বলেছে, আসামির নাম একই হলেও বাবার নাম আলাদা। নুরুল ইসলামের বাবার নাম আবদুল হাসিম, আর পরোয়ানায় আছে আবুল হাসেম হাওলাদার। অর্থাৎ একটি ভুল হয়েছে। সেক্ষেত্রে যার নামে পরোয়ানা, সেই নুরুলকে খুঁজে বের করে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। উৎস: সমকাল

ad

পাঠকের মতামত