277567

নিজের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে যা বললেন ভিপি নুর

নিউজ ডেস্ক।। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নব-নির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নুরের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়ায় অনেকেই তাকে ‘শিবির কর্মী’র তকমা দেয়। নুরুল হক কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্বের কারণে গণমাধ্যমে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠার পর থেকেই একদিকে শারীরিক নানারকম হামলার শিকার যেমন হয়েছেন, তেমনি সাইবার জগতেও শিকার হয়েছেন আক্রমণের। তাকে ‘শিবির-কর্মী’ বলে অনলাইনে প্রচার চালানো হয়। এমনকি ডাকসু নির্বাচনের ফল ঘোষণার রাতে নুর-এর বিজয়ের খবরে ‘শিবিরের ভিপি মানি না’ এমন স্লোগানও দিয়েছিল ছাত্রলীগ।

ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হওয়ার পর নুরুল হক নুর ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় কর্মী ও নেতা ছিলেন বলেও অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবি করছেন। তবে নুরুল হক কখনো শিবিরের রাজনীতিতে যুক্ত ছিল কি-না জানতে চাইলে তার পরিবার তা নাকচ করে দিয়েছেন।

জানা গেছে, নুরুল হক নুর ২০১৫ সালের ৭ জুন মুহসিন হল ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে উপ- মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্পাদকের দায়িত্ব পান। পরবর্তীতে হল ও বিশ্ববিদ্যালয় কমিটিতে পদ বঞ্চিত হন নুর। এরপর থেকে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে যান। সময়ের পরিক্রমায় ২০১৮ সালের দিকে সে কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম-আহ্বায়ক বনে যান।

নুরের ছাত্রলীগে থাকা নিয়ে একটি কমিটির তালিকাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ছাত্রলীগের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল শাখার সে কমিটিতে হল শাখা ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি মাকসুদ রানা মিঠু ও সাধারণ সম্পাদক মো. মেহেদী হাসানের স্বাক্ষর রয়েছে।

হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাকসুদ রানা মিঠু তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে এ বিষয়ে একটি স্টাটাসও দিয়েছেন। ভাইরাল হওয়া সে স্টাটাসের শুরুতে তিনি লিখেছেন, ‘ছাত্রলীগের কর্মি থেকে তোমাকে যারা নিজ স্বার্থে ছাত্র অধিকার আন্দোলনের নেতা বানালো তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর মত অবস্থান ও সাহস তোমার কাছ থেকে প্রত্যাশা করি। ছাত্রলীগ তার যত কর্মিকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে শিবির বানিয়েছে আমি বিশ্বাস করি তুমি তাদেরই একজন।’

এদিকে, নুরু ছাত্রলীগ করতো বলে স্বীকার করেছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। গোলাম রাব্বানী ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘নুর আমার সাথে রাজনীতি করতো। আমার ছোট ভাই। ও ভালো কাজ করেছে। শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনে নুরু কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে। সেই কোটার ইমোশনকে ইউজ করে সে এখন ভিপি হয়েছে।’

একসময় ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন বলে নুর নিজেও স্বীকার করেছেন। ব্রেকিংনিউজকে তিনি বলেন, ‘একসময় আমি ছাত্রলীগের কর্মী ছিলাম, এখন আমি ছাত্রলীগের কেউ না। এখন আমি আমি সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক। ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে থাকাকালীন স্কুল কমিটিতে দফতর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হল শাখার উপ- মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্পাদক ছিলাম।’

ছাত্রলীগ কেন ছাড়লেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘যখন মনে হয়েছে ছাত্রলীগের কিছু কিছু কাজ নীতি-নৈতিকতার বিরোধী। শিক্ষার্থীদের অনিচ্ছ্বা সত্বেও প্রোগ্রাম করাতো যা আমি নৈতিকভাবে সমর্থন করতে পারিনি। সে জায়গা থেকে আমি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে সরে এসেছি।’

নুরকে একসময় শিবির হিসেবে প্রচার করা ছাত্রলীগ, এখন নিজেদের কর্মী বলে প্রচারের বিষয়ে নুর বলেন, ‘কোটা সংস্কারের আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগের একটি অংশ জামায়াত-শিবির বলে অপ-প্রচার চালিয়েছে। এখন নির্বাচিত হওয়ার পর তাদের (ছাত্রলীগ) দিকে নেয়ার জন্য ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী বলে প্রচার করছে।’

ছাত্রলীগ নুরসহ কোটা আন্দোলনের নেতাদের বিরুদ্ধে অপ-প্রচার চালিয়েছে দাবি করে ডাকসুর নতুন ভিপি আরও বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় রাশেদ খান, ফারুক হোসেনসহ আরও অনেককেই দীর্ঘদিন রিমান্ডে রেখেছিল কিন্তু তাদের কারও কোনও রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা পায়নি। ছাত্রলীগ তাদের স্বার্থের জন্য বিভিন্ন সময় আমাদেরকে বিভিন্নভাবে বিতর্কিত করার চেষ্টা চালিয়েছে। এরপরও তারা ব্যর্থ হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা অপ-প্রচারকারীদের কথায় কান না দিয়ে আমাদের ভোট দিয়েছে এবং আমাদের সাথেই আছে।’

গত সোমবার (১১ মার্চ) দীর্ঘ ২৮ বছর ডাকসু ও হল প্রশাসন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে এক হাজার ৯৩৩ ভোট বেশি পেয়ে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে নির্বাচিত হয়েছেন নুর। তিনি পেয়েছেন ১১০৬২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন পান ৯ হাজার ১২৯ ভোট। নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জন করে ছাত্রলীগ ব্যতীত বাকি সাত প্যানেল। মঙ্গলবার (১২ মার্চ) তারা ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন। ছাত্রলীগও ভিপি পদে পুনরায় নির্বাচন দাবিতে আন্দোলন শুরু করে।

এরপর নির্বাচনের ফল মেনে নিয়ে নুরুল হক নুরকে স্বাগত জানিয়েছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন। মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসটি) মিলনায়তনে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও নুরুল হক নুর পরস্পর আলিঙ্গন করেন। তারা একে অপরকে ছোট ভাই, বড় ভাই সম্বোধন করেন। এরপর ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে যান নব-নির্বাচিত ডাকসুর ভিপি নুর।

ad

পাঠকের মতামত