271676

তিনপক্ষের বৈঠকে ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসার পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে

নিউজ ডেস্ক।। জটিল হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসায় উপমহাদেশের প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দেবী শেঠিকে আনা হচ্ছে। ভারতের এই চিকিৎসক আজ সোমবার দুপুর ১ টায় একটি বিশেষ ফ্লাইটে রাজধানীর হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামবেন।তার সঙ্গে পরামর্শ করেই ওবায়দুল কাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেয়া কিংবা চিকিৎসার পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে। বিএসএমএমইউ ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, দেবী শেঠি বিমানবন্দরে নামার পর সরাসরি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবেন।সেখানকার কার্ডিওলজি বিভাগের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) লাইফ সাপোর্টে থাকা ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থা দেখবেন।পরে তিনি ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে বসবেন।পাশাপাশি সিঙ্গাপুর থেকে আসা বিশেষজ্ঞ টিমের সঙ্গেও তিনি কথা বলবেন। তিনপক্ষের বৈঠকে ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসার পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এসএম মোস্তফা জামান এ তথ্য জানিয়েছেন।তিনি জানান, দুপুরে ভারতের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ দেবী শেঠি পৌঁছানোর পর তার সঙ্গে পরামর্শ করেই ওবায়দুল কাদেরকে সিঙ্গাপুর নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

ডা. দেবী শেঠিকে গ্রহণ করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসকদের একটি প্রতিনিধিদল ইতিমধ্যে বিমানবন্দরের পথে রওনা হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

রোববারই বিএসএমএমইউর চিকিৎসক ও সরকারি পর্যায় থেকে বলা হয়েছিল- ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। প্রয়োজনে দেশের বাইরে নেয়া হবে। সেটি সম্ভব না হলে বিশ্বের নামকরা চিকিৎসককে বিএসএমএমইউতে এনে তার চিকিৎসা দেয়া হবে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে ডা. দেবী শেঠিকে আনার কথা ওঠে। শেষ পর্যন্ত আজ তাকে ঢাকায় আনা হচ্ছে। এর আগে রোববার রাতে ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসকদের তিন সদস্যের একটি দল ঢাকায় পৌঁছে। সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকরা আজ সকালে দ্বিতীয় দফায় কাদেরের শারিরীক অবস্থা নিয়ে মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে বসেন।দুপুর ১টার পর বিএসএমএমইউতে সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদেরের বর্তমান শারীরিক অবস্থার বিষয়ে জানানো হবে।

এদিকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থা ক্রমাগত উন্নতির দিকে বলে জানিয়েছেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ। তিনি জানান, উপমহাদেশের প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দেবী শেঠি আসার পর দুপুরে মেডিকেল বোর্ড বসে সিদ্ধান্ত নেবে তাকে বিদেশ নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হবে কিনা। তার পরবর্তী চিকিৎসার বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ হবে তখনই।

সোমবার বেলা ১১টার পর ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন মাহবুব-উল আলম হানিফ। তিনি মেডিকেল বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করে এক ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান।

মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন- তাকে সুস্থ করতে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তার চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা মেডিকেল বোর্ড মিটিং করে দুপুর ১টার পর বিএসএমএমইউর ভিসি তার সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে প্রেস ব্রিফ করবেন।

ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসায় গঠিক মেডিকেল বোর্ডের একজন সদস্য জানান, সিঙ্গাপুর থেকে একজন হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞ, একজন পুষ্টি বিশেষজ্ঞ ও একজন টেকনিশিয়ান এসেছেন। তারা ওবায়দুল কাদেরের রিপোর্ট ও তার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছেন। ওবায়দুল কাদেরের অবস্থা একটু উন্নতি হয়েছে। এ কারণে আজ সকাল ১০টা পর্যন্ত দেখা হবে। যদি আরও উন্নতি হয়, তা হলে হয়তো এখনই দেশের বাইরে নেয়া হবে না। দেশের বাইরে নেয়া হবে কিনা, এ বিষয়ে আজ দুপুরের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে।

রোববার রাত সাড়ে ৯টায় বিএসএমএমইউর উপাচার্য কনক কান্তি বড়ুয়া জানান, ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসার দেখভাল করার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, রাতে (রোববার) আর ওবায়দুল কাদেরকে সিঙ্গাপুর নেয়া হবে না। সোমবার শারীরিক অবস্থা দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

এদিকে জীবন শঙ্কায় থাকা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের অবস্থার উন্নতি হয়েছে। তিনি পুরোপুরি চেতনা ফিরে পেয়েছেন। চিকিৎসকদের ডাকে সাড়া দিতে পারছেন। চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে সোমবার সকালে এ তথ্য জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। তবে তিনি এও জানান, ওবায়দুল কাদের এখনও শঙ্কামুক্ত নন বলে চিকিৎসকরা তাকে জানিয়েছেন।

রোববার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে হঠাৎ অসুস্থবোধ করলে ওবায়দুল কাদেরকে বিএসএমএমইউর ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) নেয়া হয়। সেখান থেকে জরুরি ভিত্তিতে তাকে সিসিইউতে (ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিট) নিয়ে ভর্তি করা হয়। পরে এনজিওগ্রাম শেষে ওবায়দুল কাদেরের হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ার কথা জানান চিকিৎসকরা।

ওবায়দুল কাদেরের অবস্থা আশঙ্কাজনক জানিয়ে বিএসএমএমইউর উপ-উপাচার্য মো. শহীদুল্লাহ সিকদার রোববার দুপুরে বলেছিলেন, উনার অবস্থা ক্রিটিক্যাল। আমরা তাকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করছি। তদুপরি তার পরিবার ও প্রধানমন্ত্রী চাইলে তাকে বিদেশে পাঠানো যেতে পারে।

ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসায় বিএসএমএমইউয়ের হৃদরোগ বিভাগের পক্ষ থেকে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বিএসএমএমইউ কার্ডিওলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আলী আহসানের নেতৃত্বে মেডিকেল বোর্ডে রয়েছেন প্রিভেনটিভ অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. হারিসুল হক, অধ্যাপক ডা. চৌধুরী মেশকাত আহমেদ চৌধুরী, অ্যানেস্থেশিয়া বিভাগের অধ্যাপক ডা. দেবব্রত ভৌমিক, অধ্যাপক ডা. একেএম আক্তারুজ্জামান, কার্ডিও সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. রেজওয়ানুল হক, অধ্যাপক অসিত বরণ অধিকারী, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান, ডা. তানিয়া সাজ্জাদ প্রমুখ।

রোববার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ওবায়দুল কাদেরকে দেখতে বিএসএমএমইউতে যান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।এ সময় তিনি ওবায়দুল কাদেরের শয্যার পাশে গিয়ে কাদের কাদের বলে ডাক দেন। এ সময় ওবায়দুল কাদের দুই-তিন সেকেন্ডের জন্য চোখের পাতা নাড়েন। ওবায়দুল কাদেরকে দেশের বাইরে নেয়া হবে কিনা— নেতারা জানতে চাইলে সেই সময় শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপাতত দেশের বাইরে নেয়ার দরকার নেই। এখানেই চিকিৎসা চলবে।’ প্রায় আধা ঘণ্টা হাসপাতালে ছিলেন শেখ হাসিনা। পরে বিকাল ৪টার দিকে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদও তাকে দেখতে যান বিএসএমএমইউতে। উৎস: যুগান্তর।

ad

পাঠকের মতামত