অবশেষে জানা গেল ‘নাবিলা জানো?’ পোস্টারের গল্প..
গত কয়েকদিন আগেই নগর জুড়ে বিভিন্ন প্রান্তে লাগানো একটি পোষ্টার নগর জুড়ে বেশ আলোচনার জন্ম দেয়। শুধু রাজধানীবাসীর ভেতরই না ফেসবুকেও সেই সেই পোষ্টার ভাইরাল হয়ে সারাদেশে আলোচনায় পরিণত হয়। পোষ্টারটি ছিলো- ‘নাবিলা জানো? একজন মুমূর্ষু রোবটের জন্য রক্তের প্রয়োজন। রক্তের গ্রুপ ( +)’। ওই পোষ্টারটি কে বা কারা কি উদ্দেশ্যে লাগিয়েছে তা জানা যায়নি।
আর এ কারণেই এই রহস্যময় পোষ্টার নিয়ে সাধারণ মানুষের কৌতুহল বাড়তে থাকে। অনেকেই অনেক রকম মন্তব্য করতে থাকেন পোষ্টার নিয়ে। কেউ কেউ এই পোষ্টারকে সুবোধ গ্রাফিতি শিল্পীদের কাজ বলে মন্তব্য করেন, কেউ বা কোন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন হিসেবে বলেন, কেউ বলেন কোন সিনেমার আগাম প্রচারণার কৌশল। কেউ বা বলেন কোন প্রেমিকের কাজ। এমন নানা মন্তব্য পাওয়া গেলেও আসল ঘটনা জানা যায়নি। তবে এবার বোধ হয় সেই রহস্য উন্মোচন হলো।
‘নাবিলা জানো?’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে দাবী করা হয় এই পোষ্টারটির পেছনে রয়েছে একটি ভালোবাসার গল্প। একজন প্রেমিক ভালোবেসে তার প্রেমিকার উদ্দেশ্যে এই পোষ্টারটি করেন। তাদের উভয়ের নামই ইংরেজি অক্ষর ‘এন’ দিয়ে। নাবিলা চলে গিয়েছিলো ওই প্রেমিককে ছেড়ে কোন এক কারণে। তারপরই তার উদ্দেশ্যে এই পোষ্টারটি লাগানো হয়।
ওই পেজে বলা হয়- ‘এর সাথে সুবোধ কিংবা দেশের কোনো কিছুরই সম্পর্ক নেই। পৃথিবীর ইতিহাসে একজন প্রেমিক তার প্রেমিকার মন জয় করার জন্য অনেক কিছুই করেছে। কিন্তু প্রেমিকার জন্য সারা শহরে পোস্টার লাগানোর মত কাজ কেউ আজ পর্যন্ত করেনি তাই হয়তো অনেকে বুঝতেই পারেনি এই পোস্টারের উদ্দেশ্য কিংবা ভাষা। আমরা সকলের দোয়া প্রার্থী!’
এই পোষ্ট শেষে তারা এটাও উল্লেখ করে এই পোষ্টটিই এই পেজের প্রথম ও শেষ পোষ্ট। শুক্রবার দিনে এই পোষ্টটি দেয়া হয় নাবিলা জানো ফেসবুক পেজ থেকে।
পাঠকদের জন্য ফেসবুক পোষ্টটি হুবহু তুলে দেয়া হলো।
‘নাবিলা চলে গিয়েছিলো শীতের আগেই। কুয়াশার দিনে শূন্যতা ভয়প্রিয় অন্তর গুড়িয়ে দিয়েছিল। শেষ যে রাতে আমাদের যোগাযোগ ছিল সে রাতে আমাকে নাবিলা ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছিলো নিশ্চিন্তে। আমি ছিলাম ঘুমে, জেগে দেখেছি নির্মম শূন্যতা, নাবিলাকে রোজ লেখা চিঠির উপর চিঠি, অক্ষরেরা রক্তাক্ত। আমার প্রেম মরে গেছে। মরে গেছে। এতো চিঠি যার সে চলে গেছে এটা কখনই সম্ভব না বলে। চিঠির প্রতিটি অক্ষর যেনো আমাকে বুকটাকে বুলেট হয়ে ঝাঁজরা করে দিলো। প্রতিটি চিঠির শেষে “নাবিলা জানো?…” বলে তাকে নিয়ে দেখা আকাশ সমান সব স্বপ্নের কথা বলতাম। তখন ঐ মূহুর্তে প্রতিটি চিঠিতে লিখা তাকে নিয়ে দেখা হাজার টা স্বপ্নের মধ্যে কয়েকটি স্বপ্ন খুব কানে বাজছিল “নাবিলা জানো? আমার অনেক ইচ্ছা একদিন কোনো এক শীতের সকালে খুব ভোরে আমরা হাত ধরে সারা শহরে ঘুরে বেড়াবো। ঘন কুয়াশায় কেউ দেখবেনা আমাদের হাত ধরে থাকা!, নাবিলা জানো? আমার অনেক ইচ্ছা একদিন তোমাকে নিয়ে ট্রেনে চড়ে অনেক দূরে যাবো, তুমি ট্রেনের জানালার পাশে বসবে, বাতাসে তোমার চুল বার বার মুখের এসে পড়বে আর আমি সে দৃশ্য মুগ্ধ হয়ে দেখবো, নাবিলা জানো? আমার অনেক ইচ্ছা আমার বিয়ের দিন আমাদের বাসর ঘরে বিছানা ফুলের পরিবর্তে তোমাকে নিয়ে লেখা হাজারটা চিঠি দিয়ে সাজানো থাকবে। তুমি আমার বুকে চিঠি পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে যাবে।
সেই স্বপ্ন গুলোকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে চলে গিয়েছিলো নাবিলা। আর ফেরার নাম নেই। তাই সারা শহরের দেয়ালে দেয়ালে সেঁটে দিয়েছিলাম পোস্টার আমার চিঠির ভাষায় ‘নাবিলা জানো? একজন মুমূর্ষু রোবটের জন্য রক্তের প্রয়োজন। রক্তের গ্রুপ N+’ কারণ নাবিলা যে আমার রক্তের ভিতরে শ্বেত রক্ত কণিকা হয়ে বাসা বেধেছিলো। আমার ভিতরে নাবিলা শ্বেত রক্ত কণিকা হয়ে প্রেম জমিয়ে রাখতো। আমাকে বাঁচিয়ে রাখতো। আমাকে নিশ্বাস নিতে দিতো।
পোস্টার নাবিলা দেখেছিলো ঘুম থেকে উঠেই দেখেও নাবিলার কোনো খবর নেই। তার ঠিক পরের মধ্যরাতে। আমি রোবট হয়ে বসে ছিলাম ছাদের উপরে। ঈশ্বরকে জিজ্ঞাসা করছিলাম কখন আমার সময় শেষ হবে। চোখে আমার এক প্রশান্ত মহাসাগর পানি। ঠিক তখনি রাতের সব নীরবতাকে দুমড়ে মুচড়ে বেজে উঠলো আমার মুঠো ফোন। ওপাশের গলাটা শুনে মনে হলো ঈশ্বর আমার ডাকে সাড়া দিতে দূত পাঠালো। ভাবিনি সেই দূতটার নাম হবে নাবিলা। আমি যেনো সেই চিকন মায়াবী কন্ঠটি শুনে রোবট থেকে পাথর হয়ে গেলাম। নাবিলা খুব যত্ন নিয়ে পাথরটি টুকরো টুকরো করে দিয়ে বললো-
নাবিলা: আজ নাকি আকাশে অনেক সুন্দর চাঁদ উঠেছে?
আমি: নাবিলা জানো?
নাবিলা: জানিনা বলেই জিজ্ঞাসা করলাম আজ নাকি আকাশে অনেক সুন্দর চাঁদ উঠেছে? আমার জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছেনা।
আমি: হ্যাঁ আজ আকাশে চাঁদ উঠেছে। তবে সুন্দর কিনা বলতে পারছিনা।
নাবিলা: আমাকে দেখাওতো চাঁদটা!
আমি: কিভাবে?
নাবিলা: ছবি তুলে পাঠাও সুন্দর করে একটা। আমি কভার ফোটোতে দিবো। কতদিন কভার চেঞ্জ করা হয়না!!
(ছবি তুলে পাঠানোর পরে)
নাবিলা: বাহ! বলতো আজকের চাঁদটার কেনো ছবি তুলে রাখতে বললাম? আমার কভারে দেয়ার কারন ছাড়াও আরেকটা কারন আছে!
আমি: জানিনাতো!
নাবিলা: কারন আজকের চাঁদটা সাক্ষী। চিরদিনের সাক্ষী হয়ে থাকবে।
আমি: কিসের সাক্ষী?
নাবিলা: আজ থেকে আমি তোমার।
আমি: N Positive.
নাবিলা: N Positive Too!
(কারন আমাদের দুজনের নামের প্রেথম অক্ষর N)
শেষের অংশটুকু লিখতে গিয়ে জানিনা কেমন যেনো ফুপিয়ে কেঁদে উঠলাম।
এ হলো ‘নাবিলা জানো?’ পোস্টারের গল্প। এর সাথে সুবোধ কিংবা দেশের কোনো কিছুরই সম্পর্ক নেই। পৃথিবীর ইতিহাসে একজন প্রেমিক তার প্রেমিকার মন জয় করার জন্য অনেক কিছুই করেছে। কিন্তু প্রেমিকার জন্য সারা শহরে পোস্টার লাগানোর মত কাজ কেউ আজ পর্যন্ত করেনি তাই হয়তো অনেকে বুঝতেই পারেনি এই পোস্টারের উদ্দেশ্য কিংবা ভাষা। আমরা সকলের দোয়া প্রার্থী!’