176354

যে ২৩ দল রাশিয়া ২০১৮ বিশ্বকাপে নিশ্চিত হলো, জেনে নিন

লিওনেল মেসি। তাঁর হ্যাটট্রিকে ইকুয়েডরকে তাদেরই মাঠে ৩-১ গোলে হারিয়েছে আর্জেন্টিনা। এই জয় দিয়ে সরাসরিই বিশ্বকাপে গেল আর্জেন্টিনা। দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চল থেকে আগেই বিশ্বকাপ নিশ্চিত করেছে ব্রাজিল। আজ নিশ্চিত হলো উরুগুয়ে ও কলম্বিয়ার বিশ্বকাপও। বাদ পড়ে গেল দুবারের কোপা চ্যাম্পিয়ন চিলি। পাঁচে থেকে শেষ করে পেরু নিশ্চিত করল প্লে–অফ। সেখানে তাদের প্রতিপক্ষ ওশেনিয়া অঞ্চলের সেরা দল নিউজিল্যান্ড।

ছয়টি কনফেডারেশনস থেকে বাছাইপর্বেরধাপ পেরিয়ে মোট ৩১টি দল জায়গা করে নেবে ২০১৮ বিশ্বকাপের গ্রুপপর্বে। স্বাগতিক হিসেবে বিশ্বকাপে সরাসরি খেলবে রাশিয়া। বাছাইপর্বের এ পথ পর্যন্ত আসুন দেখে নেই কোন কোন দল নিশ্চিত করেছে বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্ব:

এশিয়া (এএফসি): ইরান, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও সৌদি আরব।

ইউরোপ (উয়েফা): বেলজিয়াম, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, আইসল্যান্ড, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, রাশিয়া, সার্বিয়া ও স্পেন।

আফ্রিকা (সিএএফ): মিশর ও নাইজেরিয়া।

কনকাকাফ (উত্তর ও মধ্য আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান): কোস্টারিকা, মেক্সিকো ও পানামা।

দক্ষিণ আমেরিকা (কনমেবল): ব্রাজিল, উরুগুয়ে, আর্জেন্টিনা ও কলম্বিয়া।

রাশিয়া, আমি আসছি। শেষের তীব্র গর্জন তোলা উদ্‌যাপনে যেন এটাই ঘোষণা করলেন

শেষ রাউন্ডে অনেক ওলট-পালট হয়ে গেল পয়েন্ট টেবিলে। শীর্ষ দুটি জায়গা অবশ্য ব্রাজিল আর উরুগুয়ের কাছেই থাকল। ব্রাজিল চিলিকে হারাল ৩-০ গোলে। জোড়া গোল করেছেন জেসুস। অন্য গোলটি পাওলিনহোর। ব্রাজিলের মাটিতে ব্রাজিলকে কখনোই হারাতে না পারা চিলি ৫৫ মিনিট পর্যন্ত প্রতিরোধ ধরে রেখেছিল। কিন্তু আর পারল না। মেসির বার্সেলোনা সতীর্থ পাউলিনহোই প্রথম অভয় বার্তা পাঠালেন ক্লাবের দুই সতীর্থের জন্য। পরে জেসুস শো।

তিনটা গোল খেয়েই সর্বনাশ হলো চিলির। আর ওদিকে কলম্বিয়ার বিপক্ষে পিছিয়ে পড়েও ড্র করে পেরু নিশ্চিত করল প্লে–অফ। চিলি-পেরু দুই দলের পয়েন্ট ২৬। কিন্তু আজ তিন গোল হজম করায় চিলির গোল ব্যবধান হয়েছে –১। আর পেরুর গোল ব্যবধান +১। ফলে অ্যালেক্সিস সানচেজ, ক্লদিও ব্রাভো, আরতুরো ভিদালের মতো তারকাদের দেখা যাচ্ছে না এবারের বিশ্বকাপে।

১৮ ম্যাচের দীর্ঘ বাছাই পর্ব অবশেষে শেষ হলো। তাতে ৪১ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থাকল ব্রাজিল।

ওদিকে কাগজে-কলমে আগেই বিশ্বকাপ একরকম নিশ্চিত করে ফেলা উরুগুয়ে করল ৬টি গোল। দুটি আবার নিজেদের জালে! সিলভা ও গডিনের আত্মঘাতী গোলের পরও উরুগুয়ে জিতল ৪-২ ব্যবধানে। জোড়া গোল করেছেন লুইস সুয়ারেজ। বাকি দুটি গোল কাভানি ও কাসেরেসের। ৩১ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে শেষ করেছে উরুগুয়ে।

আর্জেন্টিনা ২৮ পয়েন্ট নিয়ে থাকল তিনে। তাদের তিনে উঠিয়ে দিয়েছে আসলে কলম্বিয়া। পেরুর বিপক্ষে এগিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত ১-১ ড্র করে ২ পয়েন্ট হারিয়েছে তারা। তবে তাতে তাদের ক্ষতি কিছু হয়নি। নিরাপদ চারে শেষ করেছে কলম্বিয়া। গত বিশ্বকাপের গোল্ডেন বয় হামেস রদ্রিগেজ করেছেন গোলটি। আর ৫৬ মিনিটের সেই গোল ৭৭ মিনিটে শোধ করেছেন পাবলো গুয়েরোরো। মহামূল্যবান হয়ে গেল এই গোল। ১ পয়েন্ট না পেলে পেরুই যে বাদ পড়ে যেত!

টানা দুবারের কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়ন চিলি এখন দর্শক। আর পাঁচে থেকে শেষ করা পেরু প্লে–অফের লটারিতে খুঁজবে ভাগ্য।

হ্যাটট্রিক করে দেশকে বিশ্বকাপে তুললেন মেসি। এমন আনন্দ তাঁকেই মানায়। স্বপ্নভঙ্গের আতঙ্ক পেয়ে বসেছিল আর্জেন্টিনাকে। বাছাইপর্বের শেষ ম্যাচে এসেও যে প্রশ্নটা ঝুলে ছিল, রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ মিলবে তো?

দেশের এমন ভীষণ প্রয়োজনের মুহূর্তে লিওনেল মেসিকে দেখা গেল স্বরূপে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৯ হাজার ফুট উঁচুতে অবস্থিত কিটোয় একাই লড়ে মেসি বিশ্বকাপের টিকিট পাইয়ে দিলেন আর্জেন্টিনাকে।

দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে শুধু সত্যিকারের কিংবদন্তিরাই ঘুরে দাঁড়াতে পারেন। বার্সেলোনার জার্সিতে মেসির এ কথা প্রমাণের কিছু নেই। যদি থেকে থাকে সেটা জাতীয় দলের জার্সিতে। কিটোয় মেসির হ্যাটট্রিকের পর হয়তো সে প্রয়োজন ফুরোল। একটা দেশকে একাই বিশ্বকাপে টেনে নেওয়ার উদাহরণ যে খুব বেশি নেই!

হ্যাটট্রিক করে দেশকে বিশ্বকাপে তুললেন মেসি। এমন আনন্দ তাঁকেই মানায়। ২০১৮ বিশ্বকাপের প্লে অফ নিশ্চিতে ইকুয়েডরের বিপক্ষে জিততেই হবে, এমন সমীকরণ মাথায় নিয়ে মাঠে নেমে খেলা শুরুর ১ মিনিটেই পিছিয়ে পড়েছিল আর্জেন্টিনা। সেখান থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে আর্জেন্টিনা ম্যাচে এগিয়ে যায় ২-১ ব্যবধানে। ১২ মিনিটে অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়ার ক্রস থেকে গোল করে দলকে সমতায় ফেরান মেসি। এর ৮ মিনিট পর দুর্দান্ত এক দৌড়ে মেসি ছিঁড়েখুঁড়ে ফেলেন ইকুয়েডর রক্ষণভাগকে। বাম প্রান্ত থেকে চকিত শটে মেসির গোলটি রাশিয়া বিশ্বকাপ শুরুর আগ পর্যন্ত স্বস্তি দেবে গোটা আর্জেন্টিনাকে। লাতিন আমেরিকান বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে এটা ছিল মেসির ২০ তম গোল। মহাদেশটির বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে সর্বোচ্চ গোলদাতার রেকর্ডটি এখন মেসির।

৩২ মিনিটে মেসির ডিফেন্সচেরা থ্রু থেকে জয়ের ব্যবধান ৩-১ করতে পারত আর্জেন্টিনা যদি ডি মারিয়া ব্যর্থ না হতেন। তবে ম্যাচের স্কোরলাইনটা শেষ পর্যন্ত ওটাই থেকেছে, সেটাও মেসির অনিন্দ্যসুন্দর গোলের কল্যাণে। প্রায় ৪০ গজ দূর থেকে সতীর্থের পাস বুক দিয়ে নামালেন মেসি। বলটা সামনে পড়ল তাঁর বাধ্যগত ছাত্রের মতো! সামনে ইকুয়েডরের তিন ডিফেন্ডার। রোজারিও নদীর বহতা স্রোতের মতো তাঁদের এঁকেবেঁকে পাশ কাটিয়ে টপকে গেলেন মেসি। এরপর গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে তাঁর সেই চিরাচরিত মসৃণ ‘লব’ এবং গোল! দেশের জার্সিতে এটা ছিল মেসির পঞ্চম হ্যাটট্রিক। সব মিলিয়ে ৪৪ তম ক্যারিয়ার হ্যাটট্রিক!

চলতি বছর ক্লাব ও দেশের হয়ে মোট ৪৯ ম্যাচে তাঁর গোলসংখ্যাও ৪৯। এমনিতেই তাঁর গোটা ক্যারিয়ারই গোল দিয়ে সাজানো। কিন্তু আজকের হ্যাটট্রিক ছিল অন্যরকম, বলতে পারেন একধরনের বার্তাও—মেসি শুধুই বার্সার নয়, আর্জেন্টিনারও!

ad

পাঠকের মতামত